সিডনির বন্ডাই সৈকতে বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত ১২

■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■ 

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সমুদ্র সৈকতে বন্দুকধারীদের হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে ১৭ জন। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটের দিকে ক্যাম্পবেল প্যারেডসংলগ্ন বন্ডাই প্যাভিলিয়নের কাছে একটি গাড়ি থেকে দুই ব্যক্তি নেমে আসেন। এরপর তাঁরা গুলি চালাতে শুরু করেন।

হামলায় জড়িতদের একজন ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছে এবং আরেকজনকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

প্রিমিয়ার মিনসের ভাষ্য অনুযায়ী, হামলাটি ছিল পরিকল্পিত এবং এর লক্ষ্য ছিল সিডনির ইহুদি সম্প্রদায়। এটি ঘটে হানুক্কার প্রথম দিনে—যে রাতটি ওই সম্প্রদায়ের জন্য শান্তি, আনন্দ ও পারিবারিক উদযাপনের হওয়ার কথা ছিল।

সিডনির বন্ডাই বিচে দুই হামলাকারীর মধ্যে একজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ নিশ্চিত করেছে, হামলাকারী যুবক ২৪ বছর বয়সী নাভিদ আকরাম। তিনি সিডনির দক্ষিণ-পশ্চিমের বনিরিগ এলাকার বাসিন্দা।

অস্ট্রেলীয় সংবাদমাধ্যম এবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলার সময় আকরাম গুলিবিদ্ধ হন। এরপর পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে এবং বর্তমানে তিনি হেফাজতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অন্য বন্দুকধারী ঘটনাস্থলেই পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন।

বর্তমানে বনিরিগের পাতিয়া এলাকায় আকরামের বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। এই সম্পত্তি তাঁর পরিবার এক বছর ধরে ব্যবহার করছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে বলছেন, নাভিদ আকরাম পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত। তবে এ বিষয়ে এখনো তেমন শক্ত কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

এবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলার সময় বন্ডাই বিচে ইহুদিদের অন্যতম প্রধান উৎসব হানুক্কার প্রথম দিনের একটি অনুষ্ঠান চলছিল। অনুষ্ঠানটির নাম ছিল ‘চানুকা বাই দ্য সি ২০২৫’। আজ রোববার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা থেকে বিচসংলগ্ন শিশুদের খেলার মাঠে এই অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। চাবাদ অব বন্ডাই নামের একটি ইহুদি কেন্দ্র এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল।

এদিকে এ ঘটনার পর অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইমামস কাউন্সিল ও কাউন্সিল অব ইমামস এনএসডব্লিউ এক যৌথ বিবৃতিতে বন্ডাই বিচে গুলিবর্ষণের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমাদের সমাজে সহিংসতার কোনো স্থান নেই। এ ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের পূর্ণ জবাবদিহি ও আইনের আওতায় এনে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।’

তারা নিহত ব্যক্তিদের পরিবার, ক্ষতিগ্রস্ত ও এই ভয়াবহ হামলার প্রত্যক্ষদর্শীদের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে অস্ট্রেলিয়ার মুসলিম সম্প্রদায়সহ সব অস্ট্রেলিয়ানের উচিত ঐক্য, সহানুভূতি ও সংহতি নিয়ে একসঙ্গে দাঁড়ানো, সহিংসতাকে প্রত্যাখ্যান করা এবং সামাজিক সম্প্রীতি ও সব অস্ট্রেলিয়ানের নিরাপত্তার প্রতি আমাদের যৌথ অঙ্গীকার নিশ্চিত করা।’

ক্রিস মিনস বলেন, যে রাতটি পরিবার ও সমর্থকদের সঙ্গে শান্তি ও আনন্দে কাটানোর কথা ছিল, সেই রাতকে একটি ভয়াবহ ও নৃশংস হামলা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে।

নিউ সাউথ ওয়েলস সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই গুলির ঘটনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ঘটনার তদন্ত চলছে এবং নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

হামলার পরপরই নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের প্রধানমন্ত্রীসহ রাজ্যের অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বন্ডাইয়ের (বন্দুক হামলার) দৃশ্য অত্যন্ত মর্মান্তিক ও আতঙ্কজনক। জীবন বাঁচাতে পুলিশ ও জরুরি সেবাকর্মীরা ঘটনাস্থলে কাজ করছেন। ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেকের প্রতি আমার সমবেদনা।’

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *