:: সাকিন শাবাব ::
এতক্ষণে অনেকেই জানেন যে আজকে আমাকে আমার বাবাসহ ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি অথরিটি ডেকেছিলো। প্রথমে ফার্মেসি ডিপার্টমেন্ট আমাকে জানায় দুপুর ৩ টা নাগাদ তারা আমার সাথে কথা বলতে চায়। আমি ভেবেছিলাম আমার অ্যাকাডেমিকস নিয়ে কথা বলার জন্যে ডেকেছে, যেহেতু আমার অ্যাকাডেমিকসের অবস্থা খুব বেশি ভালো নয়, এবং বেশ কয়েকবারই আমার যেতে হয়েছে। কিন্তু সেখানে পৌছে বুঝলাম আসলে ব্যাপারটি অন্য।
তারা প্রথমে রুমে ঢুকে আমাকে বসতে বলে। তার ঠিক কিছুক্ষণ পরেই পলিসির কথা বলে আমার ফোন নিয়ে যায়। ঢুকে দেখি প্রশাসনের সকলেই উপস্থিত; ভিসি, ডীন থেকে একাডেমিক কাউন্সিল পর্যন্ত সবাই। রুমটা বেশ বড় ছিলো, সেখানে একটি গোলটেবিলে সকলে গোল হয়ে বসে ছিলো। রুমের ঠিক সামনে একটা প্রজেক্টর বসানো ছিলো। প্রজেক্টরে তাকিয়ে দেখলাম গ্রুপে দেয়া আমার ভয়েস টেক্সট, রিফর্ম নিয়ে করা বিভিন্ন পোস্ট ও বার্তা প্রদর্শন করা ছিলো। সেই রুমে ঘটা ঘটনাগুলো আমার স্মৃতি দিয়ে একে একে বলার চেষ্টা করতেছি।
আমার বাবাকে আমার জন্য কখনো এমন পরিস্থিতি ফেস করতে হয় নাই। আজ আমার বাবার চেহারাটা দেখে আমি অনেক লজ্জিত ছিলাম। শুধুমাত্র সংস্কারের কথা বলায় আজ যেভাবে আমাকে চাপ প্রদান করা হইছে আমার বাবার সামনে; ব্যাপারটা নিয়ে আমি অনেক বেশি ব্যথিত ছিলাম। বাসা থেকে বারবার কল দিচ্ছিলো। খুবই অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। মেনে নিতে পারছিলাম না বাবার চোখে তাকে অপমানিত হওয়ার প্রতিচ্ছবি দেখে। তাই আমি মানসিকভাবে একটু ভেঙে পড়ি। নিজেকে সামলে নিতে একটু সময় লেগেছে। এজন্যই একটু দেরী হয়ে গেলো বিষয়গুলো জানাতে। এর জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত এবং সকলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
১। তারা আমাকে সরাসরি স্রেফ একজন প্রোপাগান্ডিস্ট ট্যাগ দিয়ে আমার বাবার সামনে বলা হয় যে রিফর্ম নিয়ে করা পোস্টগুলার বিষয়ে ডিসিপ্লিনারী কমিটি তদন্ত করে রায় দিবে, কারণ তাদের ভাষ্যমতে রিফর্ম নিয়ে করা সব পোস্ট দিয়ে আমি আসলে ইচ্ছাকৃতভাবে ব্র্যাকের ডিফেমেশন এর জন্যে করতেছি।
২। কথা বলার পুরোটা সময় সেখানে একটা হযবরল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে একের পর র্যাপিড ফায়ারের মতো প্রশ্ন করতে থাকে কিন্তু কোনো উত্তর দেয়ার কোনো সময় বা সুযোগ আমাকে দেয়া হয় নাই। ফাঁকে ফাঁকে আমি যখনই কোনো কিছু ক্লেইম করছিলাম, তারা বারবার আমার কাছে প্রমাণ চাচ্ছিলো কিন্তু সেগুলা দেখানোর জন্যে যে মোবাইল প্রয়োজন সেটা তো প্রথমেই তারা পলিসির নামে জব্দ করে নিয়ে গেছিলো সেটাতো বললামই!
৩। তারা ক্রমাগত এটা এস্ট্যাবলিশ করার চেষ্টা করে যে ফ্যাকাল্টি রিভিউ গ্রুপের আ্যনোনিমাস পোস্টগুলা আমিই করেছি এবং রিফর্মের ব্যাপারে আমি সবাইকে প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে উসকায় দিচ্ছি বৃরাককে ডিফেম করতে। এবং এটাও উল্লেখ করে যে আমার পোস্টেই নাকি ব্রাকের ওয়ার্ল্ড র্যাংকিং এ পিছিয়ে গেছে যার দায়ভার আমাকে নিতে হবে।
৪। যখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণশুনানির এর বিষয়ে প্রশ্ন করি তারা আমাকে “এটা নিয়ে কথা বলার তুমি কে?” বলে থামিয়ে দেয় ও দমিয়ে রাখে। তাদের ভাষ্যমতে ট্রাইবুনালের সাথে তাদের প্রথম থেকেই যোগাযোগ ছিলো, কিন্তু তারা কোনো মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ে আসতে পারে নাই অডিয়েন্স পুল নিয়ে। তারা একাধিকবার মিটিং করেছে কিন্তু ট্রাইবুনালই এই বিষয়ে রাজি হয়নাই।
৫। জুলাই আন্দোলনের সময়ে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্র্যাকে যে চিহ্নিত আওয়ামী দোসর রয়েছে; যেমন সাদ্দাম হোসেন, তার ব্যাপারে প্রশ্ন করাই তারা আমাকে প্রতুত্ত্যরে বলে যে আওয়ামী লীগ থাকতেই পারে। আওয়ামীলীগ আছে তো কি হইছে? দেশে ১০ কোটি আওয়ামী আছে, এখন তুমি কি সবাইকে ধরবা নাকি?! উল্লেখ্য যে উনাকে জুলাই এর সেমিস্টারে সাসপেন্ড করলেও পরবর্তীতে পরের সেমিস্টার থেকেই আবার পূনর্বহাল করা হয়, এমএনএস বিভাগে । সে বহাল তবিয়তে এখনও ব্রাক ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস নিয়ে যাচ্ছে, অথচ জুলাই মাসেই সে আমাদের ছাত্রদেরকে প্রকাশ্যে ‘রাজাকার’ বলে হুমকি দিয়েছে।
৬। পরিশেষে তারা আমাকে ব্র্যাককে নিয়ে পোস্ট করতে মানা করেছে। আর যদি পোস্টও করি তাহলে যেনো শুধু গুনগাণ গেয়ে পোস্ট করি বলে উপদেশও দিয়েছে!। নাহলে ইন্ডিরেক্টলী আমাকে বের করার হুমকি দেয়া হয়। ব্যাপারটা তারা সরাসরি বলেনাই। উহ্য ছিলো অলমোস্ট বলা যায়। তবে কথার ভাঁজে এটি স্পষ্ট ছিলো যে তারা ব্রাক নিয়ে এরপর কিছু বললেই ডিসিপ্লিনারি ইস্যু দেখিয়ে পদক্ষেপ নিবে।
৭। আমার বাবাকে একপ্রকার হ্যারাস করেই বলে যে ” আমার ছেলেকে আমি কখনোই এভাবে বড় করতাম না। আপনার ছেলে নরমাল না।”। রুমের ভেতরে তখন একপ্রকার ভয়ংকর একটা চাপা উত্তেজিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তাদের কথার মানসিক চাপে আমার বাবা ভেঙ্গে পড়ে একপর্যায়ে এবং ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয় কোনো কারণ ছাড়াই। আসলে তার বিপির সমস্যা থাকায় সে আর নিতে পারছিলো না। তাকে পরিস্থিতির স্বীকার করে একপ্রকার বাধ্যই করা হইছে ক্ষমা চাইতে।
৮। শেষে যখন বের হয়ে যাচ্ছি আমি দেখি যে তারা শুধু আমার ফোনই না, উপরন্তু আমার বাবারটাও সিজ করে রেখে দিছে।
রিফর্ম নিয়ে পোস্ট করলে যদি সবটা ডিফেমেশন হয়, রাংকিং পয়েন্ট ৫ কমে যায় এবং বাবাকে ডেকে এনে এভাবে অপদস্থ করা হয় তাহলে আমি যে আসলে কিসের রিফর্ম চাচ্ছি বা কি বলবো সেটা বুঝতে পারছিনা। তাহলে জুলাইয়ে যেই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমি রুদ্ধশাস অবস্থানে দাড়িয়েছিলাম, যা যা করেছি সবই কি বৃথা? আমি কেনো সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার বৃথা চেষ্টা করছি সেটা নিয়েও আমাকে হুশিয়ারী দেয়া হইছে।
আর “আমি কে?” প্রশ্নের উত্তরে আমি বলতে চাই যে আমি একজন শিক্ষার্থী। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী। এটাই যথেষ্ট আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা প্রাইম স্টেকহোল্ডার হিসাবে আখ্যা দিতে। জুলাইয়ের আগেও আমি একজন প্রাইম স্টেকহোল্ডার ছিলাম এখনও আছি। কিন্তু এখন এই সময়ে এসে, জুলাইয়ের পরে যদি আমার এই অধিকারটাই নষ্ট করে দেয়া হয় বা আমি কে বলে আমাকে দমাই রাখা হয় তাহলে আসলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেকটা কারা? জুলাইয়ের পর কি আমার কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করা বা উত্তর পাওয়ার অধিকার নষ্ট হয়ে গেছে?
আমার বাবাকে আমার জন্য কখনো এমন পরিস্থিতি ফেস করতে হয়নাই। আজ আমার বাবার চেহারাটা দেখে আমি অনেক লজ্জিত ছিলাম। শুধুমাত্র সংস্কারের কথা বলায় আজ যেভাবে আমাকে চাপ প্রদান করা হইছে আমার বাবার সামনে; ব্যাপারটা নিয়ে আমি অনেক বেশি ব্যথিত ছিলাম। বাসা থেকে বারবার কল দিচ্ছিলো। খুবই অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। মেনে নিতে পারছিলাম না বাবার চোখে তাকে অপমানিত হওয়ার প্রতিচ্ছবি দেখে। তাই আমি মানসিকভাবে একটু ভেঙে পড়ি। নিজেকে সামলে নিতে একটু সময় লেগেছে। এজন্যই একটু দেরী হয়ে গেলো বিষয়গুলো জানাতে। এর জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত এবং সকলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। সবাই আমার জন্য দুয়া করবেন।
সাকিন শাবাব ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী