১৯ বছর পর বিটিভিতে ফিরছে ‘নতুন কুঁড়ি’

■ বিনোদন প্রতিবেদক ■

দীর্ঘ ১৯ বছর পর শিশু-কিশোরদের প্রতিভা অন্বেষণের জনপ্রিয় অুনষ্ঠান ‘নতুন কুঁড়ি’ আবারও শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)। ২০০৬ সাল পর্যন্ত এই অনুষ্ঠানের সম্প্রচার চলে। সে সময় এই অনুষ্ঠানের তুমুল জনপ্রিয়তা ছিল। গান, নাচ, অভিনয়, আবৃত্তি ও অন্যান্য শিল্পকলার প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তরুণ প্রতিভা খুঁজে বের করেছে এই অনুষ্ঠান।

১৫ আগস্ট থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতার আবেদন গ্রহণ করা হবে। পুরো দেশকে ১৯টি অঞ্চলে ভাগ করে প্রাথমিক বাছাই চলবে। সেখান থেকে বিজয়ীরা যাবে বিভাগীয় বাছাই পর্বে। অনুষ্ঠানটির চূড়ান্ত বাছাই ও ফাইনাল প্রতিযোগিতা ঢাকা কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে। 

প্রাথমিক বাছাই পর্বের ১৯টি অঞ্চল হলো; ঢাকা-১ (ঢাকা, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ), ঢাকা-২ (মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী), ঢাকা-৩ (ফরিদপুর, রাজবাড়ি, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর), ময়মনসিংহ-১ (ময়মনসিংহ, শেরপুর, নেত্রকোণা), ময়মনসিংহ-২ (টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ ও জামালপুর),  সিলেট (সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ), রংপুর-১ (রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারি ও গাইবান্ধা), রংপুর-২ (দিনাজপুর, ঠাকুরগাও ও পঞ্চগড়), রাজশাহী-১ (রাজশাহী, নাটোর, চাপাইনবাবগঞ্জ ও পাবনা), রাজশাহী-২ (বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগাঁ ও সিরাজগঞ্জ), খুলনা-১ (খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা), খুলনা-২  (যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইল), খুলনা-৩ (কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা), বরিশাল-১ (বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর), বরিশাল-২ (পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা), চট্টগ্রাম-১ (চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার), চট্টগ্রাম-২ (রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি), চট্টগ্রাম-৩ (কুমিল্লা, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া), চট্টগ্রাম-৪ (নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ফেনী) জেলাসমূহের শিল্পকলা অ্যাকাডেমিসমূহ প্রতিযোগিতার প্রাথমিক ভেন্যু নির্ধারিত হয়েছে।

অভিনয়, আবৃত্তি, গল্পবলা,কৌতুক, সাধারণ নৃত্য, উচ্চাঙ্গ নৃত্য, দেশাত্মবোধক গান, আধুনিক গান, রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল সংগীত, লোক সংগীত ও হামদ-নাত এই ৯টি বিষয়ে ‘ক’ ও ‘খ’ শাখায় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। ‘ক’ শাখার প্রতিযোগীদের (ছেলে-মেয়ে) বয়সসীমা ৬ থেকে ১১ এর নিম্নে এবং ‘খ’ শাখার ক্ষেত্রে ১১ থেকে ১৫ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন কুঁড়ির ফাইনাল প্রতিযোগিতা ২ নভেম্বর থেকে ৬ নভেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে মোস্তফা মনোয়ার -এর প্রযোজনায় ১৯৭৬ সালে বিটিভিতে শুরু হয় রিয়েলিটি শো নতুন কুঁড়ি। এরপর ২০০৬ সাল পর্যন্ত এই অনুষ্ঠানের সম্প্রচার চলে। সে সময় এই অনুষ্ঠানের তুমুল জনপ্রিয়তা ছিল। গান, নাচ, অভিনয়, আবৃত্তি ও অন্যান্য শিল্পকলার প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তরুণ প্রতিভা খুঁজে বের করেছে এই অনুষ্ঠান। এমনকি অসংখ্য শিল্পী ও বিনোদনজগতের ব্যক্তিত্বের ক্যারিয়ার শুরুর মঞ্চে পরিণত হয়েছিল নতুন কুঁড়ি।

মঙ্গলবারের ঘোষণার পর নতুন কুঁড়ির ভক্ত, সাবেক প্রতিযোগী ও সংস্কৃতিমনা মানুষসহ অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উচ্ছ্বাস ও স্মৃতিচারণ করেছেন।

প্রথমবার ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান ক্ষমতায় থাকাকালীন সময় ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছিল নতুন কুঁড়ি। স্বাধীনতার পর বিটিভিতে পুনরায় চালু হয়ে দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয় এই অনুষ্ঠানটি। দেশের নানা প্রান্ত থেকে তরুণ প্রতিভা গড়ে তোলার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত ছিল নতুন কুঁড়ি।

বছরের পর বছর এই অনুষ্ঠান দর্শকদের সামনে হাজির করেছে বহু প্রতিভাবান শিল্পী, যারা পরবর্তীতে হয়ে উঠেছেন সবার পরিচিত মুখ।

এদের মধ্যে রয়েছেন অভিনেত্রী তারানা হালিম, রুমানা রশিদ ঈশিতা, তারিন জাহান, মেহের আফরোজ শাওন, নুসরাত ইমরোজ তিশা, জাকিয়া বারী মম, তমালিকা কর্মকার, সাবরিন সাকা মীম ও আজাদ রহমান শাকিল, গায়িকা সামিনা চৌধুরী, হেমন্তী রক্ষিত দাস ও মহবুবা মাহনুর চাঁদনীসহ আরও অনেকে। চলচ্চিত্র, টেলিভিশন, নাট্যাঙ্গন ও সঙ্গীতজগতে এসব শিল্পীরা নিজের ছাপ রেখেছেন।

নতুন কুঁড়ি অনেকের জন্য কেবল প্রতিযোগিতা নয়, বরং আজীবনের শিল্পযাত্রার প্রথম ধাপ ছিল।

২০০৬ সালে বিটিভির আর্থিক সংকট, বেসরকারি চ্যানেলের উত্থান এবং গণমাধ্যম পরিস্থিতির পরিবর্তনের কারণে অনুষ্ঠানটির সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। দেশব্যাপী অডিশন, সরাসরি সম্প্রচার ও বিচার প্রক্রিয়া টিকিয়ে রাখা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে।

২০২০ সালে অনুষ্ঠানটি পুনরায় শুরু করার পরিকল্পনার খবর প্রকাশিত হলেও কোভিড-১৯ মহামারির কারণে তা সম্ভব হয়নি।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *