ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত: বুয়েট শিক্ষার্থী কারাগারে

■ নাগরিক প্রতিবেদন ■

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের সাইবার সুরক্ষা আইনে করা মামলায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী শ্রীশান্ত রায়কে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।

বুধবার (২২ অক্টোবর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ এহসানুল ইসলামের আদালত এই আদেশ দেন।

এদিন আসামিকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও চকবাজার থানার উপ-পরিদর্শক শাহজাহান সিরাজ তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন।

এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম শ্রীশান্ত রায়ের জামিন চেয়ে শুনানি করেন। তিনি বলেন, এই মামলায় সব কয়টি ধারা জামিনযোগ্য। সে ক্ষেত্রে তিনি এই মামলায় জামিন পেতে পারেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শামসুদ্দোহা সুমন জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, জামিন যোগ্য ধারা হলেও বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে অনেক ক্ষেত্রে জামিন দেয়া যায় না। জামিন নামঞ্জুর করে আসামিকে কারাগারে পাঠানো হোক। 

পরে উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আসামির জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তার উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) জামিন শুনানির দিন ধার্য করেন।

এর আগে ওই ঘটনায় বুধবার চকবাজার থানায় বুয়েটের নিরাপত্তা কর্মী মো. আফগান হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। 

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বুয়েটের আহসান উল্লাহ হলে অবস্থান করে ছদ্মনাম ব্যবহার করে মুসলিম নারী ও ইসলাম ধর্ম নিয়ে এ বছরের ৮ জুন থেকে ৭ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন পোস্ট দেওয়া হয়। সেখানে অশ্লীল এবং কুরুচিপূর্ণ, ধর্মীয় বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য জুড়ে দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন চেষ্টার পর ছদ্মনামের প্রকৃত আসামি শ্রীশান্ত রায়কে শনাক্ত করা হয়। মুসলিম নারী সংক্রান্ত অশ্লীল মন্তব্য এবং ধর্মীয় ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক মন্তব্য বুয়েটের অন্যান্য শিক্ষার্থী ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) রাতে যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের অভিযোগে বুয়েটের ইইই বিভাগের ৩য় বিভাগের শিক্ষার্থী শ্রীশান্ত রায়কে গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ করছে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে দাবির মুখে তার ছাত্রত্ব সাময়িকভাবে বাতিল করে বুয়েট প্রশাসন। এদিন রাত সাড়ে ১২টায় বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। 

এর আগে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম রেডডিট-এ মুসলিম নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও ধর্ষণের অভিযোগে শ্রীশান্তকে গ্রেফতারের দাবিতে বুয়েটের আহসানুল্লাহ হলে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে পুলিশ এসে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। 

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, রেডডিটের স্ক্রিনশটে নারী সহপাঠীকে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সে ধর্ষণ করেছে। এছাড়াও বোরকা, হিজাব ও নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছে সে। এমন একজন আমাদের সহপাঠী হতে পারে না। আমাদের দাবি আমরা তার বহিষ্কার চাই এবং তার ধর্ষণের বিচার করতে হবে।

বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা আরও জানান, অভিযুক্ত শ্রীশান্ত রায়ের বিরুদ্ধে বুয়েট ২১ ব্যাচের প্রকাশিত ধর্ষণ ও প্রমাণের মিলসমূহ হলো-

১) রেডডিট ব্যবহারকারী নিজেকে ‌‘বুয়েট ইইই-২১’-এর শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।

২) একাধিক মন্তব্যে সে বাসইউস ব্র্যান্ডের এয়ারবাডস ব্যবহার করেন বলে উল্লেখ করেছেন — যা সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর সঙ্গেও মেলে।

৩) রেডডিট আইডি থেকে জানা যায়, সে জুন মাসে মুুসটাং, নেপাল সফর করেছেন — একই সময়ে (৩ জুন) শ্রীশান্ত রায় তার ব্যক্তিগত সোশ্যাল মিডিয়ায় মুসটাং থেকে ছবি পোস্ট করেছেন।

৪) উক্ত রেডডিট আইডির অশালীন মন্তব্যগুলির ভাষা, টোন ও লেখনশৈলী বহু সহপাঠী শনাক্ত করেছেন, যা অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর স্বভাবগত লেখনভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

৫) যখন বুয়েট শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি-বর্জনের পক্ষে সম্মিলিত স্বাক্ষর প্রদান করেন, তখন একমাত্র সেই কাগজে স্বাক্ষর করেননি — যা তার দৃষ্টিভঙ্গি ও নৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলে। 

উল্লিখিত প্রমাণ ও মিলের ভিত্তিতে আমরা দৃঢ়ভাবে সন্দেহ করছি যে আমাদের ব্যাচের শ্রীশান্ত রায়ই উক্ত রেডডিট আইডির ব্যবহারকারী এবং সে-ই সচেতনভাবে নারীদের প্রতি অশালীন, লাঞ্ছনাকর ও হয়রানিমূলক আচরণ করেছেন। 

এছাড়া, যদি ওর কাছ থেকে আগেও এ রকম কোনো আচরণের শিকার হয়ে থাকে বা কোনো প্রমাণ থেকে থাকে, সে যেন গোপনীয়তা বজায় রেখে হলেও সেটা প্রকাশ্যে আনে। 

পরে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. এ কে এম মাসুদ লিখিত বিজ্ঞপ্তিতে সাময়িক বহিষ্কারাদেশ জারি করেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এতদ্বারা সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইইই বিভাগের ‘২১ ব্যাচের শিক্ষার্থী শ্রীশান্ত রায় (আইডিঃ ২১০৬১৬৯)-এর ছাত্রত্ব সাময়িকভাবে বাতিল করা হলো। 

এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ওই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি স্থায়ী বহিষ্কার-এর বিষয়ে আগামীকাল (বুধবার) বুয়েট উপাচার্যের সাথে আলোচনা হবে বলেও জানান তিনি। 

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *