■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে নির্যাতন করার অভিযোগে ফাউন্ডেশনের ১৩ কর্মকর্তা ও সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মঙ্গলবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল রানার আদালতে এ মামলা করেন সাবিনা ইয়াসমিন নামের এক নারী।
আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে অভিযোগটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ১১ নভেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাদীর আইনজীবী মো. জাকির হোসাইন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী ইলতুৎমিশ সওদাগর এনি বলেন, আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে অভিযোগের বিষয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার আসামিরা হলেন জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ভেরিফিকেশন অফিসার ইফতেখার হোসেন, কর্মকর্তা সাগর, মেহেদী হাসান প্রিন্স, আফজালুর রহমান সায়েম, সাইদুর রহমান শাহিদ, ফাতেমা আফরিন পায়েল, রেজা তানভীর, আলিফ, জাহিদ, এক্সিকিউটিভ মেম্বার সাবরিনা আফরোজ শ্রাবন্তী, সোনিয়া আক্তার লুবনা, শামীম রেজা খান ও রাকিন।
২০২৪ সালের ১৯ জুলাই জুলাই আন্দোলন চলাকালে বাদীর স্বামী ও ছেলে মোটরসাইকেলে চিটাগাং রোডের মাদানী নগর মাদ্রাসার সামনে গেলে পুলিশ ও সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা আন্দোলনরত জনতার ওপর গুলি ও হামলা চালায়। এতে বাদীর স্বামী ও ছেলে গুরুতর আহত হন। স্বামীর হাঁটুর নিচে মারাত্মক আঘাত লাগে এবং ছেলের পা ভেঙে যায়।
মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, এজাহারে বলা হয়, এরপর আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন গঠিত হলে সাবিনা ইয়াসমিন গত ২০ মার্চ বেলা ১১টার দিকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল সংলগ্ন কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের অফিসে যান। সেখানে ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা ইফতেখার হোসেন ও অন্যান্য আসামি তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তারা কীভাবে আহত হন জানতে চান। তারা আহত হওয়ার ঘটনা বর্ণনা করেন। তাদের জানানো হয়, তাদের ছেলে সেখান থেকে এক লাখ টাকার চেক নিয়ে গেছে। বুলবুল জুলাই যোদ্ধা গেজেট নম্বর এবং মেডিকেল কেস আইডি দেখালে ইফতেখার তখন ফাউন্ডেশনের দুই কর্মকর্তা সাগর ও মেহেদীকে ডেকে আনে।
ওই সময়কার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এজাহারে অভিযোগ করা হয়, তারা সাবিনা ইয়াসমিনকে বসিয়ে রেখে বুলবুলকে একটি কক্ষে নিয়ে আটকে রাখে। কয়েক ঘণ্টা পার হয়ে গেলে স্বামীকে না পেয়ে ফোন দেন সাবিনা। সাগর কল ধরে বলেন, ‘ভুয়া যোদ্ধাকে জামাই আদর চলতেছে’। সাগর সাবিনাকেও ভেতরে যেতে বলেন। তারা তাকেও মারধর করে।
সাবিনার অভিযোগ, আসামিরা তাদের ‘ভুয়া জুলাই যোদ্ধা’ বলে হুমকি দেন, জোরপূর্বক মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করেন এবং তার ব্যাগ ও মোবাইল ছিনিয়ে নেন। নির্যাতনের ফলে তার স্বামী মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকেন।
মামলার আবেদনে তিনি বলেন, পরে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাদী আদালতে এ মামলা দায়ের করেন।
উল্লেখ্য, বেশ কিছুদিন ধরে জুলাই ফাউন্ডেশনে যাঁরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাঁরা বিভিন্নভাবে অভিযোগ করছেন। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে মানববন্ধন করা হয়েছে।
ঘটনার এত দিন পর মামলা করার কোনো ব্যাখ্যা সাবিনা ইয়াসমিনের আইনজীবীর কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
অভিযোগের বিষয়ে জুলাই ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাদের কোনো বক্তব্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ গঠন করা হয়। এই ফাউন্ডেশনের তহবিল থেকে জুলাই যোদ্ধাদের সহায়তা করা হচ্ছে।