জাকসু নির্বাচন: ভোট বর্জন করল ছাত্রদলসহ আরও চার প্যানেল

■ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ■

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল। এছাড়া, একই অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করেছে বাম-প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের চারটি প্যানেল।

বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেল পৌনে ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলের অতিথি কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী তানজিলা হোসাইন বৈশাখী। এ সময় ভিপি প্রার্থী মো. শেখ সাদী হাসান উপস্থিত ছিলেন। 

তানজিলা হোসাইন বৈশাখী অভিযোগ করে বলেন, তাজউদ্দীন হলে আমাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তালিকায় ভোটারদের ছবি নেই, ২১ নং হলে মব সৃষ্টি করা হয়েছে। জাহানারা ইমাম হলে স্বতন্ত্র প্রার্থীর গায়ে হাত তোলা হয়েছে।

এই নির্বাচন নিরপেক্ষতা হারিয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, জামায়াত নেতার সরবরাহকৃত ওএমআর মেশিন আমরা চাইনি। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানের সরবরাহকৃত ব্যালটেই ভোট হচ্ছে।

বৈশাখী বলেন, মেয়েদের হলে একই মেয়ে বারবার ভোট দিতে গেছেন। শিবিরপন্থী সাংবাদিকরা মিস বিহ্যাভ করেছেন ছাত্রদলের প্রার্থীদের সঙ্গে, সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে না। এটি কারচুপি ও প্রহসনের নির্বাচন। তাই নির্বাচন বর্জন করতে বাধ্য হচ্ছি। নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের রায়ের প্রতিফলন হচ্ছে না।

ভোট শেষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সপোর্ট চত্বরে চারটি প্যানেলের পক্ষে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ) সমর্থিত ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী শরণ এহসান।

এতে ‘ছাত্র ইউনিয়ন’ (একাংশ), ‘সম্প্রীতির ঐক্য’, ‘সংশপ্তক পর্ষদ’, ‘স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ’ এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট প্যানেল সংহতি জানায়।

শরণ এহসান তার বক্তব্যে বলেন, পুরো নির্বাচনের ক্রেডিবিলিটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একটি সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় জাকসু নির্বাচন আমাদের আজীবনের দাবি।

তিনি আরও বলেন, পোলিং এজেন্টদের কাজ করতে না দেওয়া, নারী হলে পুরুষ প্রার্থী প্রবেশ, ভোটার লিস্টে ছবি না থাকা, আঙুলে কালির দাগ না দেওয়া, ভোটার হওয়ার পরও তালিকায় নাম না থাকা, ভোটারের তুলনায় ব্যালট বেশি ছাপানো, লাইন জ্যামিং, বহিরাগতদের আনাগোনা ইত্যাদি অনেক অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও গাফিলতির কারণে এই নির্বাচনকে ঘিরে অনেক সন্দেহ আর প্রশ্নে উঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই দায় কেবল এবং কেবলমাত্র এই ব্যর্থ, অথর্ব এবং পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশন আর প্রশাসনের। এই নির্বাচনের পুরো প্রক্রিয়াতেই নির্বাচনের ক্রেডিবিলিটি নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। একটি সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় জাকসু নির্বাচন আমাদের আজীবনের দাবি। আমরা এই অনিয়মের নির্বাচনকে বয়কট করেছি এবং দ্রুত সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়ায় পুনঃনির্বাচনের দাবী জানাচ্ছি।

লিখিত বক্তব্যে পুরো দিনের নির্বাচনের অব্যবস্থাপনা তুলে ধরে বলেন, প্রথমত, নির্বাচনের প্রথম দুই ঘণ্টায় কোনো পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। উল্লেখ্য যে, গতকাল রাত দুইটায় নির্বাচনের ঠিক পাঁচ ঘণ্টা আগে প্রবেশের ব্যাপার নিশ্চিত করা হয়। তবুও আজ সকালে বিভিন্ন কেন্দ্রে, প্রার্থীদের স্বাক্ষর, পোলিং এজেন্টদের ছবি ইত্যাদি নতুন নতুন বাহানা এনে তাদেরকে অন্তত দুই ঘণ্টা পর প্রবেশ করতে দেওয়া হয়।

দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ভোট নিশ্চিতকারী আঙুলের কালি সকাল থেকে দেয়া হয়নি। অভিযোগ তুললে কালি নিয়ে আসা হলেও দেখা যায় সে কালি কিছুক্ষণের মাঝে হাত থেকে উঠে যায়।

তৃতীয়ত, নির্বাচন বিধিমালা লঙ্ঘন করে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে (বিশেষত ছাত্রী হলে) দেখা গেছে একটি নির্দিষ্ট প্যানেলে (ছাত্রশিবির) লিফলেট হাতে হাতে সরবরাহ করছিল, এমনকি জাহানারা ইমাম হলে বুথের মাঝে দুটি প্যানেলের (জিতু+শিবির) লিফলেট সাজিয়ে রাখতে দেখা যায়। এটি সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যাহত করে। এমনকি জাহানারা ইমাম হলে মেয়েদের মারধরের অভিযোগ পাওয়া যায়।

চতুর্থত, ১০% বেশি ব্যালট পেপার ছাপিয়ে এই প্রশাসন প্রহসন করেছে, এমনকি আজ বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে অতিরিক্ত ব্যালট পেপার সরবরাহ করা হয় ও বিভিন্ন স্থানে পড়ে থাকতে দেখা যায়।

পঞ্চমত, নজরুল হলে কার্যনির্বাহী সদস্য পদে সব প্রার্থীর নাম না থাকায় সেখানে প্রথমে বাকি প্রার্থীদের নাম ছাড়াই নির্বাচন চলতে থাকে এবং পরবর্তীতে হাতে লিখে প্রার্থীদের নাম ব্যালট পেপারে যোগ করা হয়।

ষষ্ঠত, নারী হলে পুরুষ প্রার্থী প্রবেশ, ভোটার লিস্টে ছবি না থাকা, আঙুলে কালির দাগ না দেওয়া, ভোটার হওয়ার পরও তালিকায় নাম না থাকা, ভোটারের তুলনায় ব্যালট বেশি ছাপানো, লাইন জ্যামিং, বহিরাগতদের আনাগোনা ইত্যাদি অনেক অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা আর গাফিলতির কারণে এই নির্বাচনকে ঘিরে অনেক সন্দেহ আর প্রশ্নে উঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

এর আগে সকাল ৯টায় শুরু হয়েছে জাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি হল কেন্দ্রে ২২৪টি বুথে চলছে ভোটগ্রহণ। কয়েকটি কেন্দ্র ব্যতিত বেশিরভাগ কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে জানা গেছে। 

এবারে জাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ হাজার ৭৪৩ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ভোটার ৫ হাজার ৭২৮ জন এবং ছাত্র ভোটার ৬ হাজার ১৫ জন। নির্বাচনে ২৫টি পদে মোট ১৭৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *