ছায়ানটের সভাপতি সন্‌জীদা খাতুন মারা গেছেন

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■ 

ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি সন্‌জীদা খাতুন মারা গেছেন। মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) বেলা ৩টা ১০ মিনিটে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।

এক সপ্তাহ ধরে তিনি স্কয়ার হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন। সন্‌জীদা খাতুনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন তাঁর পুত্রবধূ ও ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমেদ লিসা এবং ছেলে পার্থ তানভীর নভেদ।

দীর্ঘদিন ধরে সন্‌জীদা খাতুন ডায়াবেটিস, নিউমোনিয়া এবং কিডনি রোগে ভুগছিলেন। এর আগেও একই অসুস্থতায় তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন।

সন্‌জীদা খাতুনের ছেলে পার্থ তানভীর নভেদ জানিয়েছেন, প্রয়াত সন্‌জীদা খাতুনের প্রতি সর্বজনের শ্রদ্ধা নিবেদন আগামীকাল বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর ধানমন্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনে অনুষ্ঠিত হবে।

সন্‌জীদা খাতুনের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে ছায়ানট, উদীচী, চারণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ও জাতীয় অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেন -এর মেয়ে সন্‌জীদা খাতুনের জন্ম ১৯৩৩ সালের ৪ এপ্রিল।

সন্‌জীদা খাতুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৪ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক, ১৯৫৫ সালে ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর এবং ১৯৭৮ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষকতা দিয়েই তাঁর কর্মজীবন শুরু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে দীর্ঘকাল অধ্যাপনা করেছেন তিনি।

তিনি কামরুন্নেসা স্কুল, ইডেন কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শান্তি নিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ‘ছায়ানট’ গড়ে তোলার অনন্য কারিগর তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় শুদ্ধ সংগীতের চর্চার পাশাপাশি বাহান্নর ভাষা আন্দোলনের সক্রিয় ছিলেন সন্‌জীদা খাতুন, তখন সহযোদ্ধাদের কাছে তিনি পরিচিত ছিলেন ‘মিনু আপা’ নামে।

শিল্পী কামরুল হাসানের নেতৃত্বে ব্রতচারী আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। মুকুল ফৌজে কাজ করেছেন, আবার ছেড়েও দিয়েছেন। তার প্রথম গানের গুরু ছিলেন সোহরাব হোসেন। তার কাছে তিনি শিখেছিলেন নজরুলসঙ্গীত, আধুনিক বাংলা গান এবং পল্লিগীতি। পরে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিখেছেন হুসনে বানু খানমের কাছে। পরে আরও অনেকের কাছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন শৈলজারঞ্জন মজুমদার, আবদুল আহাদ, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীলিমা সেনসহ কয়েকজন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের শুরু থেকেই সন্‌জীদা খাতুন সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। একুশে ফেব্রুয়ারির দুপুরে বাসায় ফিরে ছাত্রহত্যার খবর পেয়েছিলেন। পরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি সবকিছু বন্ধ, সকালে বাসা থেকে বের হয়ে নানা খোঁজখবর নিয়ে বিকেলে মাকে নিয়ে রওনা দিলেন অভয় দাস লেনের এক বাসার উদ্দেশে নারীদের প্রতিবাদ সভায় যোগ দিতে। সেই ভয়ের পরিবেশে দূর পথ হেঁটে গেলেন সে বাসার চত্বরে। সেখানে গিয়ে দেখেন বেগম সুফিয়া কামাল, বেগম দৌলতুন্নেসা, নূরজাহান মুরশিদ প্রমুখ উপস্থিত। কিন্তু সেদিন সে পরিস্থিতিতে কেউ সভার সভাপতি হতে চাননি। শেষ পর্যন্ত সন্‌জীদা আপার মা সাজেদা খাতুনকে সভাপতির আসনে বসিয়ে দিলেন। মা গুটিসুটি হয়ে বসে থাকলেন। অন্যরা বক্তৃতা করলেন। সেদিন সন্‌জীদা খাতুন প্রথম বক্তৃতা করলেন। শুরুতেই ক্ষোভ প্রকাশ করে তার কথায় “দু-এক লাইনের” বক্তৃতা দেন। তিনি বলেছিলেন, “একুশ আমাকে ভাষা দিয়েছে।”

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *