শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করলেন ড. ইউনূস

:: রংপুর প্রতিনিধি ::

রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শহীদ আবু সাঈদের বাড়িতে গেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

এ সময় উপদেষ্টা পরিষদে থাকা দুজন ছাত্র প্রতিনিধি নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সকাল ১০টা ৪২ মিনিটে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে তিনি রংপুরের পীরগঞ্জের মেরিন একাডেমিতে পৌঁছান। এরপর তিনি শহীদ আবু সাঈদের বাড়ি অভিমুখে সড়কপথে রওয়ানা হন। সেখানে পৌঁছে ১১টা ৫ মিনিটে ড. মুহাম্মদ ইউনূস আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেন। পরে স্বজনদের সঙ্গে মিলিত হন। এ সময় উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভুইয়া সঙ্গে ছিলেন। এছাড়াও রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন, জেলা প্রশাসক মোবাশ্বের হাসানসহ জেলা ও উপজেলার প্রশাসনের ঊর্দ্ধতন কর্মকতারা উপস্থিত ছিলেন।

 প্রায় ১৫ মিনিট ধরে আবু সাঈদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি সড়কপথে পীরগঞ্জে অবস্থিত মেরিন একাডেমি রংপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন।

ড. ইউনূস বলেন, ‘আবু সাঈদ এখন এক পরিবারের সন্তান না। বাংলাদেশের যত পরিবার আছে, তাদের সন্তান। যারা বড় হবে, স্কুল-কলেজে পড়বে, তারা আবু সাঈদের কথা জানবে এবং নিজে নিজেই বলবে, আমিও ন্যায়ের জন্য লড়ব। আবু সাঈদ এখন ঘরে ঘরে।’

শান্তিতে নোবেলজয়ী এই বাংলাদেশি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবারই সন্তান আবু সাঈদ। হিন্দু পরিবার হোক, মুসলমান পরিবার হোক, বৌদ্ধ পরিবার হোক—সবার ঘরের সন্তান এই আবু সাঈদ। কাজেই আপনারা খেয়াল রাখবেন, কোথাও কোনো গোলোযোগ যেন না হয়।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান বলেন, ‘আমরা সবাই এই মাটিরই সন্তান। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে এই মাটির সন্তানদের রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। আমরা যেন এটা নিশ্চিত করি।’

তিনি বলেন, ‘আবু সাঈদ যেমন দাঁড়িয়েছে, আমাদেরকেও সেভাবে দাঁড়াতে হবে। যারা পার্থক্য করে আমরা তেমন না। আমরা সবাই বাংলাদেশি, আমরা বাংলাদেশেরই সন্তান। আবু সাঈদের মা সবার মা এবং সবার মা আবু সাঈদের মা। কাজেই তাকে রক্ষা করতে হবে, তাদের বোনদের রক্ষা করতে হবে, তাদের ভাইদের রক্ষা করতে হবে। সবাই মিলে এটা করতে হবে।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পীরগঞ্জে আগমন উপলক্ষে পুরো এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা হয়েছে। সড়কে, মোড়ে, মাঠে সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা কঠোর পাহারায় রয়েছেন। পুরো এলাকায় হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে গণ-অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান করা হয়।

শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করলেন ড. ইউনূস

এর আগে বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) বিমানবন্দরে ড. মুহাম্মদ ইউনূস আবু সাঈদের কথা স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনিবলেন,  আজকে আমার আবু সাঈদের কথা মনে পড়ছে। যে আবু সাঈদের ছবি প্রতি মানুষের মনে গেঁথে আছে। এটা কেউ ভুলতে পারবে না। কী অবিশ্বাস্য একজন সাহসী যুবক। বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তারপর থেকে আর কোনো তরুণ তরুণী হার মানেনি। যার ফলে সারা বাংলাদেশ জুড়ে এ আন্দোলন ছড়িয়ে গেছে এবং বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা অর্জন করল। এই স্বাধীনতাটা আমাদের রক্ষা করতে হবে এবং এর সুফল আমাদের প্রতিটি ঘরে ছড়িয়ে দিতে হবে। তরুণ সমাজ এটা সম্ভব করেছে। তাঁদের প্রতি আমরা সমস্ত কৃতজ্ঞতা জানাই।

গত ১৬ জুলাই দুপুর ২টার দিকে রংপুরের খামার মোড় থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর ফটকের সামনে যান। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাঁধে।

শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করলেন ড. ইউনূস

একপর্যায়ে পুলিশ প্রায় ২০০ রাউন্ড গুলি ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এ সময় পুলিশের গুলিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহত হন। আবু সাঈদ রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে। তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ১২ ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন। গত ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন পার্ক মোড়ে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে প্রকাশ্যে পুলিশ গুলি করে আবু সাঈদকে হত্যা করা হয়। ১৭ জুলাই বাবনপুরে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয় তাঁকে।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার রাতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে তিন বাহিনী প্রধান ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বৈঠকে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে গত বৃহস্পতিবার রাতে ১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *