■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদ ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের ব্যাংক হিসাবে ১২৭ কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। রোববার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) মিডিয়া শাখা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। তারা বলছে, ইতোমধ্যে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অর্থ পাচার সংক্রান্ত অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে সিআইডি।
১২ ডিসেম্বর দুপুরে পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে ওসমান হাদি মাথায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই সিআইডি ছায়া তদন্ত শুরু করে। ক্রাইমসিন ইউনিটের উপস্থিতি, সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ এবং ঘটনাস্থল থেকে ঘাতকের ব্যবহৃত গুলির খোসা উদ্ধার ও উদ্ধারকৃত বিভিন্ন আলামত ফরেনসিক পরীক্ষার কাজ করে যাচ্ছে সিআইডি। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত ব্যাংক হিসাবের তথ্য নিয়ে মানিলন্ডারিং অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
সিআইডি জানায়, ফয়সালের বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবইয়ের তথ্য সিআইডি গুরুত্ব নিয়ে পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করে। এতে দেখা যায়, ফয়সাল ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু চেক বইয়ে বিভিন্ন অংকের অর্থের কথা উল্লেখ রয়েছে। চূড়ান্ত লেনদেন সম্পন্ন না হওয়া এসব রেকর্ডের সমষ্টিগত মূল্য প্রায় ২১৮ কোটি টাকা। তবে সিআইডির প্রাথমিক বিশ্লেষণে ১২৭ কোটি টাকার বেশি অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
হত্যাকাণ্ডের পেছনে পরিকল্পনা, অর্থায়ন ও অস্ত্র সরবরাহে কোনো সংঘবদ্ধ ও শক্তিশালী নেটওয়ার্ক সক্রিয় ছিল কিনা সে বিষয়েও সিআইডির একাধিক টিম কাজ করছে।
ফয়সাল করিম দেশে না বিদেশে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যা মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদের শেষ অবস্থান কোথায়, সে বিষয়ে কোনো তথ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে নেই বলে জানিয়েছেন পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অপরাধ ও অপস) খন্দকার রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ফয়সাল করিম বাংলাদেশের সীমান্ত পার হয়ে গেছেন কি না, নাকি দেশে আছেন, এ বিষয়েও সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। তবে তদন্তকারী কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। অপরাধী সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
আজ রোববার বিকেলে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত আইজিপি রফিকুল ইসলাম। অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২ ও দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অগ্রগতি জানাতে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সাধারণত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ ধরনের সংবাদ সম্মেলন করে থাকেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তবে আজকের সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্রসচিব নাসিমুল গনি—দুজনের কেউই উপস্থিত ছিলেন না।
মোটরসাইকেলের মালিক সন্দেহে গ্রেফতার সেই হান্নানের জামিন
যে মোটরসাইকেল থেকে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়েছিল, তার মালিক সন্দেহে পরদিনই গ্রেফতার মো. আবদুল হান্নান জামিন পেয়েছেন।
সন্দেহভাজন ব্যক্তি হিসেবে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার আবদুল হান্নানের আবেদনে আজ রোববার তাঁকে জামিন দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. হাসান শাহাদাত। ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মিয়া মোহাম্মদ আশিস বিন হাছান জানান, ফৌজদারি কার্যবিধি ৫৪ ধারায় গ্রেফতার হান্নানের পক্ষে আইনজীবী জামিন চেয়ে আবেদন করেন। আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করেন।
এই জামিন আদেশের ফলে এক সপ্তাহ পর আবদুল হান্নানের কারামুক্তির পথ খুলল। ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা এই ব্যক্তি এর আগে আদালতে বারবার বলেছিলেন, তাঁর সঙ্গে এ ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই। তাঁর মোটরসাইকেলটি তিনি বিক্রি করে দিয়েছিলেন।
ওসমান হাদিকে গুলিবর্ষণের পরদিন ১৩ ডিসেম্বর র্যাব আবদুল হান্নানকে আটক করে পল্টন মডেল থানায় তুলে দেয়। তাঁকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে পরদিন আদালতের মাধ্যমে তিন দিনের রিমান্ডে নেয় মামলার তদন্ত সংস্থা গোয়েন্দা পুলিশ।
রিমান্ড শুনানিতে আবদুল হান্নান বারবার বলেছিলেন, তিনি ওই মোটরসাইকেল বিক্রি করে দিয়েছিলেন একটি শোরুমে (বিক্রয়কেন্দ্র)। বিষয়টি প্রমাণ করার জন্য র্যাব ও পুলিশকে তিনি অনুরোধ করেছিলেন তাঁকে ওই বিক্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যেতে। কিন্তু তারা তাঁর কথা শোনেনি।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রিমান্ড চলাকালে আবদুল হান্নানকে ওই শোরুম মালিকের মুখোমুখি করা হয়। এ ছাড়া বিআরটিএতে তাঁর নামে নিবন্ধিত দুটি গাড়ির তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে একটি সুজুকি জিক্সার ও আরেকটি ইয়ামাহা। তবে ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা হয়েছে হোন্ডা ব্র্যান্ডের হর্নেট মডেলের গাড়ি। হান্নানের মোটরসাইকেলের নম্বরের সঙ্গেও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের নম্বরের একটি সংখ্যায় অমিল রয়েছে।
রিমান্ড শেষে ১৭ ডিসেম্বর আবদুল হান্নানকে কারাগারে পাঠানো হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যসংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সেই দিনই তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।
