■ খুলনা প্রতিনিধি ■
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি নিয়ে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংঘর্ষে কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর থেকে শুরু হওয়া পাল্টাপাল্টি ধাওয়া বিকেল পর্যন্ত চলছে। ছাত্রদলের একাধিক নেতা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন নেতা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর থেকে কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ আছে। কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি যাতে আবার শুরু হতে পারে, সে জন্য ছাত্রদলের কর্মীরা গতকাল সোমবার ক্যাম্পাসে লিফলেট বিতরণ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ‘ছাত্ররাজনীতির ঠিকানা, এই কুয়েটে হবে না’, ‘দাবি মোদের একটাই, রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস চাই’, ‘এই ক্যাম্পাসে হবে না, ছাত্ররাজনীতির ঠিকানা’-সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো প্রদক্ষিণ করেন। এ সময় ছাত্রদলের কর্মীরা পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়, যা কুয়েটের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে। কুয়েট পকেট গেট থেকে বহিরাগতরা ছাত্রদলের পক্ষ নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। বর্তমানে ক্যাম্পাসে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও কিছু গোষ্ঠী তা চালু করার চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে তাদের ওপর হামলা হয়। তাদের মাইকও কেড়ে নেওয়া হয়।
ছাত্রদলের একজন নেতা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে ছাত্রশিবিরের অংশ এবং পতিত সরকারের ছাত্রসংগঠনের পক্ষের দু-একজন মিলে ক্যাম্পাস থেকে এবং ক্যাম্পাসের আশপাশে ছাত্রদলের রাজনীতি বাধাগ্রস্ত করতে চায়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই আজকের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
ছাত্রদলের কুয়েট শাখার ইউসুফ খান সিয়াম জানান, আমরা ১০-১২ জন একাডেমিক ভবন থেকে ওমর একুশে হলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। বিপরীত দিক থেকে ছাএ শিবিরের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা বৈষম্য বিরোধীদের ব্যানারে একটা দল মিছিল নিয়ে আসতে থাকে। আমরা তাদের দেখে রাস্তা ছেড়ে পাশ দিয়ে চলে যাই। হঠাৎ করে তারা পেছন থেকে এসে আমাদের হুমকি দেয় ” তোরা করা ? ছাত্রদল করার সাহস কোথায় পাইলি ? এই বলেই ওরা ইফাজের উপর হামলা করে। এরপর ছাত্রদল নিজেদের রক্ষা করতে সাধারণ শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীকে পাশে নিয়ে শিবিরের সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করে।
শিক্ষার্থীরা জানান, ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার সকালে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন। পরে তারা উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করেন। এ নিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এর জেরে আজ বিকেল পৌনে ৪টার দিকে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এতে উভয়পক্ষের কমপক্ষে ১৫ জন আহত হন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা হামলার জন্য ১৮ জনকে দায়ী করে তাদের আজীবন বহিষ্কার ও ছাত্রত্ব বাতিল, ছাত্র রাজনীতি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করাসহ ৪ দফা দাবি জানিয়েছেন।
তাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে তা প্রজ্ঞাপন আকারে অধ্যাদেশে যুক্ত করতে হবে। যারা রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানোর পৃষ্ঠপোষকতা করছেন, সেই শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি ক্যাম্পাসজুড়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিসিটিভি স্থাপন করতে হবে।
দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলেও জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে ছাত্রদলপন্থী একাধিক শিক্ষার্থীর দাবি শিবিরপন্থী ছাত্ররা এ বিক্ষোভের সূচনা করেছেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যৌথ বাহিনী পৌঁছেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ ফেসবুকে পোস্টে লিখেছেন, ‘কুয়েটে ছাত্রদল নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ স্টাইলে যে নৃশংস হামলা চালাচ্ছে, এর মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রদল নিজেদের রাজনৈতিক কবর রচনার পথেই অগ্রসর হলো।’
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার আবুল বাশার মোহাম্মদ মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, কুয়েটে ছাত্রদের দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি আমরা। বিস্তারিত পরে জানানো সম্ভব হবে।
খানজাহান আলী থানা-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন বলেন, ‘কুয়েটে ছাত্রদের দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এর জেরে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা চলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা সাধ্যমতো কাজ করছি।’