মিয়ানমারের জলসীমায় মাছ ধরতে গিয়ে আটক ১২২ জেলে

টেকনাফ প্রতিনিধি

কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদে জলসীমানা অতিক্রমের দায়ে মাছ ধরার ১৯টি মাছ ধরার ট্রলারসহ ১২২ জন জেলেকে আটক করেছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের সদস্যরা। তাদের মধ্য ৯৩ জন রোহিঙ্গা ছিল। যারা মাছ ধরার ট্রলারে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে গিয়েছিলেন।

সাগরে মাছ শিকার শেষে ফেরার পথে শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়া থেকে শাহপরীর দ্বীপ মোহনা সংলগ্ন নাফ নদের বিভিন্ন এলাকায় এ অভিযানে তাদের আটক করা হয়।

এ ঘটনায় শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘাটে এক সংবাদ সম্মেলনে কোস্টগার্ড টেকনাফ স্টেশনের ইনচার্জ লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সালাহউদ্দিন রশীদ তানভীর বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাতময় পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ লাগোয়া পুরো সীমান্ত এলাকার নিয়ন্ত্রণ এখন দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির হাতে। নাফ নদের জলসীমার শূন্যরেখা অতিক্রম করে মিয়ানমারের ভেতরে প্রবেশ করায় বাংলাদেশি জেলেদের প্রতিনিয়ত ধরে নিয়ে যাচ্ছে আরাকান আর্মি। 

তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়া থেকে শাহপরীর দ্বীপ মোহনা সংলগ্ন নাফ নদের বিভিন্ন এলাকায় কোস্টগার্ড নজরদারি জোরদার করে। এসময় নাফ নদের জলসীমার শূন্যরেখা অতিক্রম করে মিয়ানমারের ভেতরে মাছ ধরার সময় বাংলাদেশি ১৯টি ট্রলারসহ ১২২ জেলেকে আটক করে ফেরত নিয়ে আসা হয়।

তিনি আরও বলেন, আমাদের জলসীমানা অতিক্রম করার দায়ে আরাকান আর্মির হাতে আটক হওয়ার আগে তাদের ধরে নিয়ে আনা হয়। এদের মধ্য ২৯ বাংলাদেশি এবং ৯৩ জন রোহিঙ্গা রয়েছে। তাদের বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া চলছে।

তবে ঘাটে আটক ট্রলারের মাঝি দিল মুহাম্মদ বলেন, হঠাৎ কোস্টগার্ড আমাদের সংকেত দিয়ে শাহপরীর দ্বীপ জেটিতে নোঙর করতে বলে। অথচ আমরা কোনোভাবেই বাংলাদেশের সীমান্ত অতিক্রম করিনি। মাছ শিকার শেষে ফিরে আসার পর কোস্টগার্ড আমাদের এখানে ধরে নিয়ে আসে।

আরেক জেলে আবদুল হাকিম বলেন, আমরা জেটির পূর্বে দিয়ে মাছ শিকার করে ফেরার পথে কোস্টগার্ড আমাদের জেটিতে নোঙর করতে বলে। পরে দেখি আমাদের সবাইকে ধরে নিয়ে আসার কথা বলেছেন।

ট্রলার মালিক সমিতি ও বিজিবি সূত্রে জানা যায়, গত আট মাসে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে নাফ নদ সংলগ্ন এলাকা থেকে অন্তত ৩০০ জেলেকে অপহরণ করেছিল আরাকান আর্মি। তাদের মধ্যে বিজিবির সহায়তায় ২০০ জনকে কয়েক দফায় ফেরত আনা হয়। বাকি ১০০ জন জেলে এখনও তাদের হেফাজতে রয়েছেন। এর মধ্যে গত চার দিনে ৪৬ জেলেকে ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি।

উল্লেখ্য যে, নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও গত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশি ফিশিং বোট সমূহের মিয়ানমার ও বাংলাদেশের শূন্যরেখা অতিক্রম করে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে মাছ শিকারের প্রবণতা অতিরিক্ত পরিমাণে বেড়ে গিয়েছে। ফলশ্রুতিতে, আরাকান আর্মি প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশি জেলেদের বোটসহ আটক করে নিয়ে যাচ্ছে। আটক জেলে ও জব্দকৃত বোটের পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *