:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা, হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন ও আনোয়ার হোসেন মঞ্জুসহ ২৭ জনের নামে মামলা হয়েছে।
সোমবার (১৯ আগস্ট) মিরপুরে শিক্ষার্থী আলভীকে হত্যার ঘটনায় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায় আরও অন্তত ৫০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। মামলায় দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনকে আসামি করা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় মিরপুরের দেশ পলিটেকনিক কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হাসান আলভী (১৫) নিহতের ঘটনায় তার বাবা মো. আবুল হাসান সোমবার দুপুরে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় এ অভিযোগ করেন। অভিযোগকারীর আইনজীবী মো. আসাদ উদ্দিন এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, অভিযোগ তদন্ত সংস্থা গ্রহণ করেছে।
আবেদনে অভিযোগটি কমপ্লেইন্ট রেজিস্টারভুক্ত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের বিধান অনুযায়ী আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। আবেদনে আসামি হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ১৪ দলের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, সাবেক সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, তরীকত ফেডারেশনের সভাপতি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি বজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুর রহমান, মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. হানিফ, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইসমাঈল মোল্লা, ৬ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাপ্পী, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল–মামুন, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক মো. হারুন অর রশিদ ও যুবলীগের সেক্রেটারি মাইনুল হাসান নিখিলসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো এবং এসব সংগঠনের নেতা–কর্মী, পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যসহ অজ্ঞাত ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, আন্দোলনরত অবস্থায় আসামিদের নির্দেশে পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ৪ আগস্ট শাহরিয়ার হাসান আলভী মারা যায়।
তদন্ত সংস্থায় দাখিল করা এই আবেদনে ঘটনার স্থান হিসেবে সমগ্র বাংলাদেশ উল্লেখ করা হয়। এতে ঘটনার তারিখ ও সময় হিসেবে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত এবং ঘটনার তারিখে আহত হয়ে পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন তারিখে নিহত উল্লেখ রয়েছে। আর আবেদনে অপরাধের ধরন বিষয়ে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সমূলে বা আংশিক নির্মূল করার উদ্দেশ্যে ১ থেকে ২৭ নম্বর আসামিদের নির্দেশে ও পরিকল্পনায় অন্য আসামিরা দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা নির্বিচার গুলিবর্ষণ করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী সাধারণ নিরস্ত্র ছাত্র–জনতাকে হত্যা করে তাঁদের সমূলে বা আংশিক নির্মূল করার উদ্দেশ্যে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করার অপরাধ।
অভিযোগের সঙ্গে জাতীয় দৈনিক যুগান্তর, দৈনিক মানবাধিকার কণ্ঠস্বর, আজকের সংবাদ, পূর্বাঞ্চলসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং বিভিন্ন ডকুমেন্ট সংযুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগে ঘটনার সময়কাল গত ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সমগ্র বাংলাদেশ উল্লেখ করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩ এর ৩(২) ও ৪(১) (২) ধারা অনুযায়ী গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগে বলা হয় আসামিদের নির্দেশ ও পরিকল্পনায় অন্যান্য আসামিগণ দেশীয় ও বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারী সাধারণ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে তাদের নির্মূল করার উদ্দেশ্যে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠন করেছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার অফিস এই অভিযোগ গ্রহন করেছে (ডায়েরি নং-৬৭৫)।