চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন আবেদন নামঞ্জুর

■ নাগরিক প্রতিবেদন ■

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেফতার বাংলাদেশের সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ সাইফুল ইসলাম দুপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনে জামিন নামঞ্জুর করেন। শুনানিতে অংশ নিতে আদালতে গিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের ১১ আইনজীবীর একটি দল। সকাল সোয়া ১০টার দিকে আইনজীবীরা চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে প্রবেশ করেন।

গত ২৬ নভেম্বর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চিন্ময় দাসের জামিন না মঞ্জুর হলে ওই দিনই চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে আবেদন করা হয়। ওই আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয় ৩ ডিসেম্বর। কিন্তু ওইদিন চিন্ময়ের পক্ষে কোনো আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষও শুনানির জন্য সময়ের আবেদন করেন। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত জামিন শুনানির জন্য ২০২৫ সালের ২ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন।

চট্টগ্রাম মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মফিজুল হক ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে বলেন, জামিন আবেদনের ওপর আধা ঘণ্টা ধরে শুনানি হয়েছে। আদালত দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনে জামিন নামঞ্জুর করেন।

এদিকে চিন্ময়ের শুনানিকে কেন্দ্র করে আদালত এলাকায় কড়া নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। বিচারপ্রার্থীদের আদালত প্রাঙ্গণে ঢোকার আগে কাগজপত্র যাচাই করা হয়। আদালতে ঢোকার ও বেরোনোর দুটি পথে বিপুলসংখ্যক পুলিশ, বিজিবি ও সেনাসদস্য মোতায়েন করা হয়।

গত বছরের ১১ ও ১২ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে আইনজীবি রবীন্দ্র ঘোষ নামে একজন গিয়ে চিন্ময়ের জামিন শুনানির তারিখ এগিয়ে আনার জন্য আবেদন করেন। কিন্তু যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন না করায় আদালত নাকচ করে দিয়ে পূর্ব নির্ধারিত তারিখে জামিন শুনানির দিন রাখেন।

শুনানি শেষে চিন্ময় দাশের আইনজীবী অপূর্ব ভট্টাচার্য জানিয়েছেন তারা উচ্চ আদালতে যাবেন।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, জামিন শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ আপত্তি জানিয়ে বলেছে, এটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা, এর সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করেছেন। কেউ সংক্ষুব্ধ হলে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এস এম দিদার উদ্দিন বলেন, মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিন না হওয়ায় এখন চিন্ময় দাসের আইনজীবীদের সামনে দুটি পথ খোলা রয়েছে। হয় তারা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে ফের জামিন আবেদন করতে পারেন অথবা বৃহস্পতিবার মহানগর দায়রা জজের নামঞ্জুর করার আদেশের নকল তুলে উচ্চ আদালতে জামিন আবেদন করতে পারেন।

গত ২৫ নভেম্বর বিকেলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার সময় শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার করে। পরদিন কোতোয়ালি থানায় দায়ের হওয়া রাষ্ট্রদোহ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে মহানগর ষষ্ঠ কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয়। আদালত জামিন না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। এটি নিয়ে বিক্ষোভ করেন ইসকন অনুসারীরা। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় বিক্ষোভকারীরা। দুপুর পর বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে আদালত এলাকায় মসজিদ-দোকানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। এসময় বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করা হয়।   

একপর্যায়ে বিকেলে আদালতের প্রধান ফটকের বিপরীতে রঙ্গম কনভেনশন হলের গলিতে একদল ইসকন অনুসারীর হাতে খুন হন অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ। এ ঘটনায় ২৯ নভেম্বর দিবাগত রাতে নগরের কোতোয়ালি থানায় ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। ভুক্তভোগীর বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। একই ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় আরও কয়েকটি মামলা দায়ের হয়।

অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ১০ আসামির মধ্যে চন্দন দাস, রিপন দাস ও রাজীব ভট্টাচার্য সম্প্রতি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এতে উল্লেখ করা হয়, আইনজীবীর ঘাড়ে বঁটি দিয়ে দুটি কোপ দেন রিপন দাস। আর কিরিচ দিয়ে কোপান চন্দন দাস। পরে রাস্তায় পড়ে থাকা সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা এই আইনজীবীকে লাঠি, বাটাম, ইট, কিরিচ ও বঁটি দিয়ে তাঁরা ১৫ থেকে ২০ জন পিটিয়ে হত্যা করেন।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *