■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■
যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে স্থানীয় পর্যায়ের জরুরি অবস্থা ও আংশিক কারফিউ জারি করা হয়েছে। শহরটির মেয়র ক্যারেন ব্যাস এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন। লস অ্যাঞ্জেলেসে ভাঙচুর ও লুটপাট ঠেকাতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে মেয়র ক্যারেন ব্যাস বলেন, গতকাল স্থানীয় সময় রাত আটটা থেকে আজ বুধবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত কারফিউ জারি থাকবে।
কারফিউ কেন দরকার, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মেয়র ক্যারেন ব্যাস বলেন, ‘শহরজুড়ে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে। আমি আগামীকাল নির্বাচিত নেতা ও আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করব…আমরা ধারণা করছি, এমনটা (আংশিক কারফিউ) কয়েক দিন চলবে।’
কারফিউ বিষয়ে ক্যারেন ব্যাস আরও বলেন, এটি মাত্র এক বর্গমাইল এলাকার জন্য জারি করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই এক বর্গমাইলে যা ঘটছে (কারফিউ জারি), তা গোটা শহরের ওপর প্রভাব ফেলছে না। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এটি শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়া কোনো সংকট নয়।
ঘোষণা অনুযায়ী, লস অ্যাঞ্জেলেসে ইতিমধ্যে আংশিক কারফিউ কার্যকর হয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেস সরকার মুঠোফোন ব্যবহারকারীদের কাছে একটি সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে। এতে লেখা আছে, লস অ্যাঞ্জেলেস সিটি ঘোষণা করেছে যে রাত আটটা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত কারফিউ জারি থাকবে। কর্মক্ষেত্রে যাতায়াত, জরুরি চিকিৎসা ও জরুরি সেবা প্রদানকারীরা এর আওতামুক্ত।
লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ বলছে, শহরটিতে চলমান অস্থিরতার মধ্যে গত শনিবার ২৭ জন, রোববার ৪০ জন, সোমবার ১১৪ জন এবং গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৯৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশের প্রধান জিম ম্যাকডনেলও সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন। কারফিউ সম্পর্কে তিনি বলেন, টানা কয়েক দিন শহরে যেভাবে অস্থিরতা বেড়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে জীবন ও সম্পদের সুরক্ষায় এ কারফিউ জারি করা প্রয়োজন।
জিম ম্যাকডনেল বলেন, গণমাধ্যম ও আরও যাঁরা কারফিউয়ের আওতামুক্ত, তাঁরা ছাড়া কেউ কারফিউ অমান্য করলে তাঁকে গ্রেফতার করা হবে।
নগর কর্তৃপক্ষ শহরের বাসিন্দাদের মোবাইল ফোনে সতর্কবার্তা পাঠিয়ে কারফিউয়ের বিষয়টি জানায়। বার্তায় বলা হয়, ‘লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে রাত ৮টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি থাকবে। তবে যারা কর্মস্থলে যাচ্ছেন বা কাজ শেষে বাসায় ফিরছেন, জরুরি চিকিৎসাসেবা গ্রহণ বা প্রদান করছেন কিংবা জরুরি বিভাগের কর্মী—তাঁরা এই নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবেন।’
মঙ্গলবারও শহরের রাস্তায় পঞ্চম দিনের মতো প্রতিবাদকারীরা বিক্ষোভ চালিয়ে যান। এরই মধ্যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে কয়েকশ মার্কিন মেরিন সেনা লস অ্যাঞ্জেলেসে পৌঁছে। এর পাশাপাশি ট্রাম্প নগরজুড়ে চার হাজার ন্যাশনাল গার্ড সেনা মোতায়েনেরও নির্দেশ দিয়েছেন।
তবে ট্রাম্পের এমন সামরিক পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছেন ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজম। তিনি সেনা মোতায়েনকে ‘অপ্রয়োজনীয়, অবৈধ এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে মন্তব্য করেন।
এক ভাষণে গভর্নর নিউজম বলেন, ‘আমরা আমেরিকানরা স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ও সংবিধানের পক্ষে। আমাদের উচিত এখন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো।’
লস অ্যাঞ্জেলেসে চলমান এই সহিংসতার কেন্দ্রে রয়েছে অবৈধ অভিবাসনবিরোধী অভিযান ও যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নীতির প্রতি জনরোষ। পরিস্থিতি ক্রমশ উদ্বেগজনক রূপ নিচ্ছে বলে আশঙ্কা করছে স্থানীয় প্রশাসন।