■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকারী বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (বিডব্লিউওটি) জানিয়েছে, ১৪ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে সক্রিয় থাকবে এই বৃষ্টিবলয়। সংস্থাটি এই বৃষ্টিবলয়ের নাম দিয়েছে ‘ঈশান ২’।
বৃষ্টিবলয়টির সর্বোচ্চ সক্রিয়তা থাকবে ১৫ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এটি একসঙ্গে পুরো দেশে সক্রিয় না হয়ে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ঘটাবে। সাধারণত, দুপুরের পর থেকে পরদিন সকালের মধ্যে অধিকাংশ বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ফেসবুক বার্তায় বিডব্লিউওটি জানায়, প্রচণ্ড ভ্যাপসা গরমের মধ্যে দেশের দিকে ধেয়ে আসছে ‘ঈশান ২’ নামের শক্তিশালী আংশিক মৌসুমি বৃষ্টিবলয়। এটি মূলত দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল, বিশেষ করে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকতে পারে। তবে এর প্রভাবে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও বৃষ্টির প্রবণতা বাড়বে এবং তাপমাত্রা কিছুটা হ্রাস পাবে।
বৃষ্টিবলয়টির প্রভাব শুরু হওয়ার আগেই দেশের উত্তরাঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ অনেক বেড়ে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি। ইতোমধ্যে রংপুর ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে বলেও তারা জানিয়েছে।
অন্যদিকে, বুধবার রাতে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণের সম্ভাবনাও রয়েছে।
আবহাওয়া অফিস জানায়, বর্তমানে মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি শাখা উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত প্রসারিত। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় রয়েছে এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে এটি মাঝারি অবস্থায় অবস্থান করছে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বৃষ্টিবলয়ের কারণে দেশের কয়েকটি অঞ্চলে স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত হতে পারে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে নদীভাঙন, পাহাড়ি ঢল বা জলাবদ্ধতার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। তাই সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
অন্যদিকে, দেশের একাংশের জন্য এই বৃষ্টিবলয় কিছুটা স্বস্তিও বয়ে আনতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে চলমান তীব্র গরম ও ভ্যাপসা আবহাওয়ার কারণে জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছিল। ‘ঈশান ২’-এর প্রভাবে তাপমাত্রা কিছুটা কমে গিয়ে কিছুটা প্রশান্তি মিলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বৃষ্টিবলয়টি কতটা শক্তিশালী হয়ে উঠবে এবং কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে, তা নির্ভর করবে এর সক্রিয়তার মাত্রার ওপর। আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, দেশের জলবায়ুর আচরণে গত কয়েক বছর ধরে যে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এটি তারই একটি প্রতিফলন। আগাম সতর্কতা এবং প্রস্তুতির মাধ্যমেই এর সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলা সম্ভব বলে মনে করছেন তারা।
সাধারণ মানুষকে নিয়মিত আবহাওয়ার আপডেট অনুসরণ করার এবং স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর ও বিডব্লিউওটি।
ভারী বৃষ্টির কারণে দেশের নদীগুলোর পানি কিছুটা বাড়তে পারে। বিশেষ করে দক্ষিণ অঞ্চলের নিচু এলাকায় ভারী বৃষ্টি এবং জোয়ারের কারণে বন্যার ঝুঁকি রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি জেলা যেমন– বান্দরবান, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে ভারী বর্ষণের কারণে পাহাড় ধসের প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। এই সময়ে এসব এলাকায় ভ্রমণ বা অবস্থান করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।
এই বৃষ্টিবলয়ের শুরুতে তীব্র বজ্রপাত হতে পারে, তবে পরে তা কমে আসবে। আপাতত বড় ধরনের কোনো ঝড়ের সম্ভাবনা নেই। তবে উত্তর অঞ্চল ও উপকূলীয় এলাকায় দমকা হাওয়া থাকতে পারে।
বৃষ্টি চলাকালীন সময়ে দেশের বেশিরভাগ এলাকার আবহাওয়া আরামদায়ক থাকবে। তবে বৃষ্টির বিরতির সময় কিছু কিছু অঞ্চলে কিছুটা ভ্যাপসা গরম অনুভূত হতে পারে।
এই ৬ দিনে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিভাগে সম্ভাব্য গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ নিচে দেওয়া হলো–
রংপুর: ১৮০-২৫০ মিমি (গড় ৪ দিন)
ময়মনসিংহ: ১৪০-২৬০ মিমি (গড় ৪ দিন)
সিলেট: ১৬০-২৬০ মিমি (গড় ৪ দিন)
চট্টগ্রাম: ৯০-২৫০ মিমি (গড় ৩ দিন)
ঢাকা: ১২০-১৮০ মিমি (গড় ৪ দিন)
খুলনা: ১২০-১৫০ মিমি (গড় ৪ দিন)
বরিশাল: ১৩০-২০০ মিমি (গড় ৩ দিন)
রাজশাহী: ১১০-১৫০ মিমি (গড় ৩ দিন)