ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলে আঘাত হানল ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’

■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■

ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলে আছড়ে পড়েছে ঘূর্ণিঝড় মন্থা। প্রবল বেগে ঘূর্ণিঝড়টি উপকূল অতিক্রম করেছে। ওই অঞ্চলের বাসিন্দাদের আগামী তিন থেকে চার ঘণ্টা ধরে এই ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলা করতে হবে।

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব শুরু হয়েছে। বর্তমানে সেটি অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূল তছনছ করছে। পশ্চিমবঙ্গে বড় আঘাত হানার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবুও উচ্চ সতর্কতা জারি করেছে কর্তৃপক্ষ।

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের প্রকাশিত বুলেটিন বলছে, শেষ ছয় ঘণ্টায় বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে ১৫ কিলোমিটার গতিতে উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়েছে মন্থা। সন্ধ্যায় অন্ধ্র উপকূলে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হয়ে তার আছড়ে পড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মছলিপত্তনম এবং কলিঙ্গপত্তনমের মাঝে কাকিনাড়ার কাছে তার স্থলভাগে আক্রমণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগামী তিন থেকে চার ঘণ্টা চলবে এই প্রক্রিয়া। তার পরে ক্রমশ উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়ে যাবে।

ভারতীয় আবহাওয়া ভবন (আইএমডি) জানিয়েছে, স্থলভাগে আঘাত হানার সময়ে ঝড়ের গতি থাকবে প্রায় ৯০-১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। দমকা ঝড়ের গতি হতে পারে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১১০ কিলোমিটার।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। কলকাতাসহ কোনো কোনো জেলায় ভারী বৃষ্টির পূর্বভাস রয়েছে। বুধবার থেকে উত্তরবঙ্গেও ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

কলকাতার দক্ষিণের সব জেলায় বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টি এবং দমকা ঝোড়ো হাওয়ার জন্য হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামে হতে পারে ভারী (৭ থেকে ১১ সেন্টিমিটার) বৃষ্টি। বৃহস্পতিবার পুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ জেলাতে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সব জেলাতেই বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির সঙ্গে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা বাতাস বইবে। শুক্রবার পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলোতে বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।

আবহাওয়া অফিস অন্ধ্রপ্রদেশের ১৯টি জেলায় লাল সতর্কতা জারি করেছে, অতিভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে। প্রতিবেশী তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা, কেরালা এবং কর্ণাটক রাজ্যেও মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

রাজ্যের একজন দুর্যোগ কর্মকর্তার মতে, অন্ধ্রপ্রদেশের দুর্যোগ পরিষেবাগুলো এখন পর্যন্ত নিম্নাঞ্চল থেকে ৩৮ হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিয়েছে। রাজ্য সরকারের অনুমান, প্রায় ৪০ লাখ মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে রয়েছে এবং ঘূর্ণিঝড়ের ফলে তাদের ক্ষতি হতে পারে।

রাজ্যের যোগাযোগমন্ত্রী নারা লোকেশ একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে বলেছেন, ১ হাজার ২৩৮টি ঝুঁকিপূর্ণ গ্রামে স্থানান্তর অব্যাহত থাকায় কর্তৃপক্ষ ১ হাজার ৯০৬টি ত্রাণশিবির এবং ৩৬৪টি স্কুল আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছে। বুধবার পর্যন্ত স্কুল ও কলেজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং জেলেদের মাছ ধরারতে সমুদ্রে না যাওয়ার জন্য সতর্ক করা হয়েছে। মঙ্গলবার ট্রেন ও বিমান পরিষেবা আংশিকভাবে ব্যাহত হয়েছে।

রাজ্যের একজন দুর্যোগ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওড়িশায় রাজ্য প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল থেকে প্রায় ৩২ হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তর শুরু করেছে।

জলবায়ুবিজ্ঞানীরা বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পূর্ব উপকূল দীর্ঘদিন ধরে ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশটির উপকূলে তীব্র ঝড়ের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। ২০২৩ সাল ছিল ভারতের সবচেয়ে মারাত্মক ঘূর্ণিঝড় মৌসুম, যেখানে ৫২৩ জন নিহত এবং আনুমানিক ২.৫ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে।

জানা যায়, থাই ভাষায় মন্থা নামের অর্থ সুগন্ধি বা সুন্দর ফুল। উল্লেখ্য, ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণ বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা থেকে দেওয়া হয়ে থাকে। তবে এর আগে ভারত মহাসাগরের উপকূলবর্তী দেশগুলো ৫টি করে নাম জমা দিয়ে থাকে। সেসব নাম থেকেই পর্যায়ক্রমে ঘূর্ণিঝড়গুলোর নাম দেওয়া হয়ে থাকে।

একই সময়, আরব সাগরেও একটি নতুন নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে, যা কয়েকদিনের মধ্যে শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

উত্তর ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়ের নামগুলো বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও)-এর একটি প্যানেলের মাধ্যমে পূর্ব নির্ধারিত হয়। এই প্যানেলে ১৩টি দেশ আছে, যার মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইয়েমেন অন্তর্ভুক্ত।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *