:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চার জনের মৃত্যু হয়েছে। যা চলতি বছরে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু রেকর্ড। আলোচ্য সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৪৬ জন। শুক্রবার (৩০ আগস্ট) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ছিলেন ১৫৩ জন।
এ চলতি মাসে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ২৭ জনের। আর মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৫২১ জন। যা চলতি বছরের মধ্যে আক্রান্ত ও মৃত্যুতে নতুন রেকর্ড। এর আগে গত জুলাই মাসে সর্বোচ্চ আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৬৬৯ জন। আর এক মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল গত জানুয়ারিতে।
শনিবার (৩১ আগস্ট) স্বাস্থ্য অধিদফতরের থেকে পাঠানো ডেঙ্গু বিষয়ক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলায় হয়, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন ১ হাজার ৩৩৩ জন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ভর্তি ৭৮০ জন এবং ঢাকার বাইরে রয়েছেন ৫৫৩ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের মধ্যে চট্রগ্রাম বিভাগে ১০২ জন, ঢাকা বিভাগে ১৫ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৭১ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১২৯ জন খুলনা বিভাগে ১৩ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১৬ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন।
চলতি বছরে মোট ১১ হাজার ৩৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এছাড়া সব বছরে সব মিলিয়ে ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ১২ হাজার ৮৪১ জনে। এর মধ্যে ৬১ দশমিক ৩ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৮ দশমিক ৭ শতাংশ মহিলা রয়েছেন। আর এ বছর মোট মৃত্যু হয়েছে ৮৩ জনের। এর মধ্যে ৪৫ দশমিক ৮ শতাংশ পুরুষ এবং ৫৪ দশমিক ২ শতাংশ মহিলা রয়েছেন।
ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরের জুলাই মাসের তথ্য অনুযায়ী, অনুমোদন পদ রয়েছে ৩৯৬টি। আর শূন্য পদ রয়েছে ১৮১টি। এর মধ্যে চতুর্থ শ্রেণীর শূন্য রয়েছে ১৫৪ টি। প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবেও মশক নিধন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়, আর মৃত্যু হয় ১ হাজার ৭০৫ জনের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ২৩ বছরে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৮৬৮ জনের। এ সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ২ লাখ ৪৩ হাজার ৭৪৮ জন। ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১ হাজার ৭০৫ জন। ২৩ বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যত মানুষ মারা গিয়েছিল, শুধু ২০২৩ সালেই তার প্রায় দ্বিগুণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে এ রোগে।
দেশের প্রথম ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয় ২০০০ সালে। ওই বছর ৫ হাজার ৫৫১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়, আর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৯৩ জনের মৃত্যু হয়।
২০০০ সালের পরে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু ধীরে ধীরে কমে এলেও ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে ভয়াবহ পরিস্থিতি অতিক্রম করে দেশ। ২০১৯ সালে ১ লাখেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়, আর মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের।
২০২০ সালে করোনার প্রকোপের মধ্যে ডেঙ্গুর সংক্রমণ কম ছিল। ২০২০ সালে ডেঙ্গুতে মারা যায় ৭ জন, ২০২১ সালে ১০৫ জন এবং ২০২২ সালে ২৮১ জনের মৃত্যু হয়।
ঢাকার তুলনায় এর বাইরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০২৩ সালে ছিল দ্বিগুণের বেশি। সারা দেশের মৃত্যুর ৫৮ শতাংশই ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের।