ডেঙ্গুতে এক সপ্তাহে ৪০ জনের মৃত্যু

■ নাগরিক প্রতিবেদন ■ 

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ২০৯ জন রোগী। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৩৭ জনে এবং নভেম্বরের প্রথম সাত দিনে মারা গেছেন ৪০ জন।

এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায়। ডিএসসিসিতে মশাবাহিত রোগটিতে চলতি বছর মোট ১৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

অন্যদিকে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) ৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি এই সময়ে বরিশাল বিভাগে ৩৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৫ জন, খুলনা বিভাগে ২১ জন, ঢাকা বিভাগে ১৬ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৭ জন, রংপুর বিভাগে ২ জন ছাড়াও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকা এবং রাজশাহী বিভাগে একজন করে মোট দুইজন ডেঙ্গুতে মারা গেছেন।

চলতি মাসের প্রথম সাত দিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে সাড়ে সাত হাজার রোগী।

বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) রাতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

অধিদপ্তর বলছে, আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্বের ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়াদের মধ্যে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৪০৬ জন এবং বাকিরা ঢাকার বাইরের। এ সময়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে ১ হাজার ১০৮ জন। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৬৯ হাজার ৪৫৬ জন। এর মধ্যে ছাড়পত্র পেয়েছে ৬৪ হাজার ৭৯৩ জন। যাদের মধ্যে ৬৩ দশমিক ২ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৬ দশমিক ৮ শতাংশ নারী। এছাড়া এখন পর্যন্ত মৃত ৩৩৭ জনের মধ্যে ৪৮ দশমিক ৭ শতাংশ পুরুষ এবং ৫১ দশমিক ৩ শতাংশ নারী।

সর্বশেষ মারা যাওয়া রোগীদের মধ্যে চারজন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার হাসপাতালে ভর্তি ছিল, দুজন ভর্তি ছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এবং একজন খুলনা বিভাগের হাসপাতালে ভর্তি ছিল।

 গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার হাসপাতালে ৪০৬ জন ভর্তিকৃত রোগী রয়েছেন। এছাড়াও ঢাকা বিভাগে ২২৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৬০ জন, বরিশাল বিভাগে ১৩৮ জন, খুলনা বিভাগে ১৩৭ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪০ জন, রাজশাহী বিভাগে ৭১ জন, রংপুর বিভাগে ২৬ জন, সিলেট বিভাগে ৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ বছরের জুলাই থেকে দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ওই মাসে ডেঙ্গুতে ২ হাজার ৬৬৯ জন আক্রান্ত হয়। পরের মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৫২১। সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩ গুণ বেড়ে হয় ১৮ হাজার ৯৭।

২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ছিল ১৭০৫ জন।

২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ২৩ বছরে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৮৬৮ জনের। এ সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ২ লাখ ৪৩ হাজার ৭৪৮ জন। ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১ হাজার ৭০৫ জন। ২৩ বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যত মানুষ মারা গিয়েছিল, শুধু ২০২৩ সালেই তার প্রায় দ্বিগুণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে এ রোগে। 

দেশের প্রথম ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয় ২০০০ সালে। ওই বছর ৫ হাজার ৫৫১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়, আর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৯৩ জনের মৃত্যু হয়।

২০০০ সালের পরে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু ধীরে ধীরে কমে এলেও ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে ভয়াবহ পরিস্থিতি অতিক্রম করে দেশ। ২০১৯ সালে ১ লাখেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়, আর মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের।

২০২০ সালে করোনার প্রকোপের মধ্যে ডেঙ্গুর সংক্রমণ কম ছিল। ২০২০ সালে ডেঙ্গুতে মারা যায় ৭ জন, ২০২১ সালে ১০৫ জন এবং ২০২২ সালে ২৮১ জনের মৃত্যু হয়।

ঢাকার তুলনায় এর বাইরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০২৩ সালে ছিল দ্বিগুণের বেশি। সারা দেশের মৃত্যুর ৫৮ শতাংশই ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *