জুনের ২৮ দিনে ডেঙ্গুতে ১৮ জনের মৃত্যু

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■

জুনের ২৮ দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। মে মাসে এই ভাইরাসে তিনজনের মৃত্যু হয়।  এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪১ জন। জুনে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ছয় গুণ বেড়েছে। জুলাইয়ে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৬২ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভর্তি হয়েছে বরিশাল বিভাগে, ১৪১ জন। এ নিয়ে চলতি বছর ভর্তি রোগীর সংখ্যা হয়েছে ৯ হাজার ৪৮৪। এ বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ৪১ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৯ জন মারা গেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি এলাকায়। এরপর বরিশাল বিভাগে ১১ জন, চট্টগ্রামে চারজন। বাকি ১১ জন অন্য বিভাগের।

গত ২৪ ঘণ্টায় ২১৮ ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছরে ছাড়পত্র পেয়েছেন আট হাজার ৩৮০ জন। আর চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা নয় হাজার ৪৮৪ জন। তাদের মধ্যে ৫৮ দশমিক ৯ শতাংশ পুরুষ এবং ৪১ দশমিক ১ শতাংশ নারী।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ডেঙ্গু নিয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১ হাজার ৬৩ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৩১২ জন, ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ৭৫১ জন।

গত বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ১০৫৫ জন, মারা যান ১৪ জন; ফেব্রুয়ারিতে ৩৩৯ জন, মারা যান ৩ জন; মার্চে ভর্তি ৩১১, মৃত্য ৫; এপ্রিলে ভর্তি ৫০৪, মৃত্যু ২; মে মাসে ভর্তি ৬৪৪, মৃত্যু ১২; এবং জুনের প্রথম ২৭ দিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৪৯০ জন এবং পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছিল। সব মিলে গত বছরের ২৮ জুন পর্যন্ত প্রায় ছয় মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন তিন হাজার ৫৪৭ জন এবং মারা যান ৪৩ জন।

অন্যদিকে চলতি জুনের ২৮ দিনেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত পাঁচ হাজার ১৩৯ জন ও ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে গত মে মাসে ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এক হাজার ৭৭৩ জন এবং মারা যান তিনজন; এপ্রিলে ভর্তি হয় ৭০১ জন এবং মারা যায় সাতজন; মার্চে ৩৩৬ জন ভর্তি হলেও কারও মৃত্যু হয়নি। ফেব্রুয়ারিতে ভর্তি হন ৩৭৪ জন ও তিনজনের মৃত্যু হয়, জানুয়ারিতে ভর্তি হন এক হাজার ১৬১ জন এবং ১০ জনের মৃত্যু হয়। চলতি মৌসুমে ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত মৃত্যুর মিছিলে ৪১ জনের নাম যুক্ত হয়েছে।

গত দুই দশকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, জুলাইয়ের শেষে কিংবা আগস্টের শুরু থেকে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। তবে এ বছর জুনের শুরুতেই পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে।

রাজধানীর বেশ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। বাইরে থেকে বেশি আসছে সংকটাপন্ন রোগী। বরিশাল ও বরগুনায় রোগীর বিপরীতে পর্যাপ্ত শয্যা সংকটের কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। রোগীদের অভিযোগ, স্যালাইন ও ওষুধের সংকট রয়েছে। প্লাটিলেট সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, মশক নিধন কার্যক্রম প্রত্যাশিত মাত্রায় হয়নি। এ জন্য ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। একা কোনো সংস্থার পক্ষে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। ভাইরাসটি প্রতিরোধে জাতীয়ভাবে কর্মসূচি নেওয়া দরকার। তবে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য বিভাগের বিশেষ টিম কাজ করছে বলে জানান তিনি।

২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে একলাখ এক হাজার ২১৪ জন এবং ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুবরণ করেছেন ৫৭৫ জন।

২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়। ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ছিল ১৭০৫ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ২৩ বছরে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৮৬৮ জনের। এ সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ২ লাখ ৪৩ হাজার ৭৪৮ জন। ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ১ হাজার ৭০৫ জনের। ২৩ বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যত মানুষ মারা গিয়েছিল, শুধু ২০২৩ সালেই তার প্রায় দ্বিগুণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে এ রোগে। 

দেশের প্রথম ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয় ২০০০ সালে। ওই বছর ৫ হাজার ৫৫১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়, আর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৯৩ জনের মৃত্যু হয়।

২০০০ সালের পরে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু ধীরে ধীরে কমে এলেও ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে ভয়াবহ পরিস্থিতি অতিক্রম করে দেশ। ২০১৯ সালে ১ লাখেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়, আর মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের।

২০২০ সালে করোনার প্রকোপের মধ্যে ডেঙ্গুর সংক্রমণ কম ছিল। ২০২০ সালে ডেঙ্গুতে মারা যায় ৭ জন, ২০২১ সালে ১০৫ জন এবং ২০২২ সালে ২৮১ জনের মৃত্যু হয়।

ঢাকার তুলনায় এর বাইরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০২৩ সালে ছিল দ্বিগুণের বেশি। সারা দেশের মৃত্যুর ৫৮ শতাংশই ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *