■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৮৬৫ জন।
সেপ্টেম্বর মাসের ১৮ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৩৬৬ জন। মৃত্যু হয়েছে ৩১ জনের।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে ১৪৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১২১, ঢাকা উত্তর সিটিতে ২৫১, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১৪২, খুলনা বিভাগে ৯৪ ও ময়মনসিংহ বিভাগে ১৮ জন রয়েছেন। এছাড়া বরিশাল বিভাগে ৪৬, রাজশাহী বিভাগে ২০ এবং রংপুর বিভাগে ২৮ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী ৬ জন ঢাকার। রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম। চলতি বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১১৯ জন। একই সময়ে রোগী শনাক্ত হয়েছে ২১ হাজার ৭৯ জন।
এদিকে গত একদিনে সারা দেশে ৬০৩ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ১৮ হাজার ৫০০ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সবমিলিয়ে ২১ হাজার ৭৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ১১৯ জনের। এছাড়া, গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন।
চলতি বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২১ হাজার ৭৯ জন। এ সময় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া রোগীদের মধ্যে ৫২ শতাংশ নারী ও পুরুষ ৪৮ শতাংশ।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগী বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে এলাকায় মশার ওষুধ ছিটানোর জন্য কেউ আসেনি। এর আগে তো প্রতিদিনই এলাকায় মশা নিধনের জন্য ওষুধ ছিটানো হত। ফলে মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে।
চিকিৎসকেরা জানান, যাত্রাবাড়ী, খিলগাঁও ও মিরপুরসহ কয়েকটি এলাকা থেকে ডেঙ্গুরোগী বেশি আসছে। অধিকাংশই হাসপাতালে আসছে শক সিনড্রোম নিয়ে। দরকার হচ্ছে আইসিইউ।
মুগদা হাসপাতালের মুখপাত্র সত্যজিত কুমার সাহা বলেন, সিটি করপোরেশন বর্তমানে তাদের কর্মকাণ্ড অনেকটা কমিয়ে দিয়েছে। ফলে এলাকার বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতার। এ ছাড়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবেও বাড়ছে মশা। মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নিয়মিত যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হত এখন সেগুলোও নেওয়া হচ্ছে না। এতেই বাড়ছে মশা।
এই শেষ সময়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে অভিযানে নামছে সিটি করপোরেশন।
২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ছিল ১৭০৫ জন।
২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ২৩ বছরে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৮৬৮ জনের। এ সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ২ লাখ ৪৩ হাজার ৭৪৮ জন। ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১ হাজার ৭০৫ জন। ২৩ বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যত মানুষ মারা গিয়েছিল, শুধু ২০২৩ সালেই তার প্রায় দ্বিগুণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে এ রোগে।
দেশের প্রথম ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয় ২০০০ সালে। ওই বছর ৫ হাজার ৫৫১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়, আর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৯৩ জনের মৃত্যু হয়।
২০০০ সালের পরে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু ধীরে ধীরে কমে এলেও ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে ভয়াবহ পরিস্থিতি অতিক্রম করে দেশ। ২০১৯ সালে ১ লাখেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়, আর মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের।
২০২০ সালে করোনার প্রকোপের মধ্যে ডেঙ্গুর সংক্রমণ কম ছিল। ২০২০ সালে ডেঙ্গুতে মারা যায় ৭ জন, ২০২১ সালে ১০৫ জন এবং ২০২২ সালে ২৮১ জনের মৃত্যু হয়।
ঢাকার তুলনায় এর বাইরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০২৩ সালে ছিল দ্বিগুণের বেশি। সারা দেশের মৃত্যুর ৫৮ শতাংশই ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের।