ডেঙ্গুতে জুলাইয়ে ৪১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ১০৬৮৪

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ২৭৮ জন। এ নিয়ে জুলাইয়ে ডেঙ্গুতে মারা গেলেন ৪১ জন। এর ফলে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৪১ জনে।

চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২০ হাজার ৯৮০ জন। শুধু জুলাইয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১০ হাজার ৬৮৪ জন।

চলতি বছরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত বরিশালে এবং মৃত্যু হয়েছে ঢাকা মহানগরীতে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বরিশাল বিভাগে আক্রান্ত হয়েছেন ৭ হাজার  ৯৪২ জন ও মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের। আর ঢাকা মহানগরে আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৫৪০ জন, মৃত্যু হয়েছে ৪৬ জনের। 

গত এক দিনে হাসপাতালে ভর্তি নতুন রোগীর মধ্যে ঢাকা মহানগরে ৬৩ জন, বরিশালে ৭২ জন,  ঢাকা বিভাগে (মহানগরের বাইরে) ৪৬ জন, চট্টগ্রামে ৩৫ জন, রাজশাহীতে ৩৫ জন, খুলনায় ১৮ জন, ময়মনসিংহে চারজন  ও রংপুরে পাঁচজন। সিলেটে কোনো রোগীর তথ্য পাওয়া যায়নি। 
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১ হাজার ২৬২ জন। এর মধ্যে ৯২১ জন ঢাকার বাইরে। ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৩৪১ জন।  

মাসওয়ারি হিসাবে জানুয়ারিতে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ১ হাজার ১৬১ জন ও মৃত্যু ১০ জনের, ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত ৩৭৪ ও মৃত্যু তিনজনের, মার্চে আক্রান্ত ৩৩৬ জন, এই মাসে কোনো মৃত্যু হয়নি। এপ্রিলে আক্রান্ত ৭০১ ও মৃত্যু সাতজনের, মে মাসে আক্রান্ত ১ হাজার ৭৭৩ জন ও মৃত্যু তিনজনের। জুন মাসে আক্রান্ত ৫ হাজার ৯৫১ ও মৃত্যু ১৯ জনের। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১ হাজার ১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪ জন, মার্চে ৩৩৬ জন, এপ্রিলে ৭০১ জন এবং মে মাসে ১ হাজার ৭৭৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ১০ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩ জন, এপ্রিলে ৭ জন এবং মে মাসে ৩ জন মারা গেছেন। জুন মাসে মারা গেছেন ১৯ জন।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন, যেখানে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৭৫ জনে। তার আগের বছর, ২০২৩ সালে, পরিস্থিতি ছিল আরও ভয়াবহ। ওই বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মৃত্যুবরণ করেন ১ হাজার ৭০৫ জন, যা দেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুজনিত সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে হাসপাতালে ভর্তি হন ২৪৬৭ জন। এ ছাড়া জানুয়ারিতে ১১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪ জন, মার্চে ৩৩৬ জন, এপ্রিলে ৭০১ জন, মে মাসে ১৭৭৩ জন এবং জুন মাসে হাসপাতালে ভর্তি হন ৫৯৫১ জন রোগী।

দেশে ২০২৪ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১ লাখ ১ হাজার ২১১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। মৃত্যু হয় ৫৭৫ জনের। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর এই সংখ্যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। আর মৃতের সংখ্যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

গত বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ১০৫৫ জন, মারা যান ১৪ জন; ফেব্রুয়ারিতে ৩৩৯ জন, মারা যান ৩ জন; মার্চে ভর্তি ৩১১, মৃত্য ৫; এপ্রিলে ভর্তি ৫০৪, মৃত্যু ২; মে মাসে ভর্তি ৬৪৪, মৃত্যু ১২; এবং জুনের প্রথম ২৭ দিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৪৯০ জন এবং পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছিল। সব মিলে গত বছরের ২৮ জুন পর্যন্ত প্রায় ছয় মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন তিন হাজার ৫৪৭ জন এবং মারা যান ৪৩ জন।

গত দুই দশকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, জুলাইয়ের শেষে কিংবা আগস্টের শুরু থেকে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। তবে এ বছর জুনের শুরুতেই পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে।

রাজধানীর বেশ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। বাইরে থেকে বেশি আসছে সংকটাপন্ন রোগী। বরিশাল ও বরগুনায় রোগীর বিপরীতে পর্যাপ্ত শয্যা সংকটের কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। রোগীদের অভিযোগ, স্যালাইন ও ওষুধের সংকট রয়েছে। প্লাটিলেট সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, মশক নিধন কার্যক্রম প্রত্যাশিত মাত্রায় হয়নি। এ জন্য ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। একা কোনো সংস্থার পক্ষে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। ভাইরাসটি প্রতিরোধে জাতীয়ভাবে কর্মসূচি নেওয়া দরকার। তবে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য বিভাগের বিশেষ টিম কাজ করছে বলে জানান তিনি।

২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে একলাখ এক হাজার ২১৪ জন এবং ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুবরণ করেছেন ৫৭৫ জন।

২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়। ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ছিল ১৭০৫ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ২৩ বছরে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৮৬৮ জনের। এ সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ২ লাখ ৪৩ হাজার ৭৪৮ জন। ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ১ হাজার ৭০৫ জনের। ২৩ বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যত মানুষ মারা গিয়েছিল, শুধু ২০২৩ সালেই তার প্রায় দ্বিগুণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে এ রোগে। 

দেশের প্রথম ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয় ২০০০ সালে। ওই বছর ৫ হাজার ৫৫১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়, আর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৯৩ জনের মৃত্যু হয়।

২০০০ সালের পরে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু ধীরে ধীরে কমে এলেও ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে ভয়াবহ পরিস্থিতি অতিক্রম করে দেশ। ২০১৯ সালে ১ লাখেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়, আর মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের।

২০২০ সালে করোনার প্রকোপের মধ্যে ডেঙ্গুর সংক্রমণ কম ছিল। ২০২০ সালে ডেঙ্গুতে মারা যায় ৭ জন, ২০২১ সালে ১০৫ জন এবং ২০২২ সালে ২৮১ জনের মৃত্যু হয়।

ঢাকার তুলনায় এর বাইরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০২৩ সালে ছিল দ্বিগুণের বেশি। সারা দেশের মৃত্যুর ৫৮ শতাংশই ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *