ঢাকা কলেজ-আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের ‘শান্তি চুক্তি’

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■ 

সংঘর্ষ এড়াতে পুলিশ ও প্রশাসনের উপস্থিতিতে মৌখিক ‘শান্তি চুক্তি’ করেছেন রাজধানীর ঢাকা কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা।

রাজধানীর ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায়ই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনা ঘটে। 

এই তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমঝোতা করতে অভিনব উদ্যোগ নেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মাহফুজুল হক। আয়োজন করা হয় এক শান্তি চুক্তি অনুষ্ঠানের। সেখানে ঢাকা কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা একে অন্যকে ফুল দিয়ে এবং কোলাকুলি করে নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করেন। তবে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা এই শান্তি চুক্তি অনুষ্ঠানে যোগ দেননি।

রোববার দুপুরে ঢাকা কলেজের শহীদ আ. ন. ম. নজীব উদ্দিন খান খুররম অডিটোরিয়ামে এই চুক্তি হয়।

কে এম মাহফুজুল হক দুপুরে বলেন, “আমরা ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ শান্তি চুক্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলাম। কিন্তু সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানে আসেননি। এখানে আমরা কি করব বলেন?

তবে দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের মৌখিকভাবে শান্তি চুক্তির বিষয়তে সাধুবাদ জানিয়েছে নিউ মার্কেট থানা।

অনুষ্ঠানে আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা ‘শান্তি চুক্তি’ অনুষ্ঠানে আসলে তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। এসময় তাদের কোলাকুলি করতেও দেখা যায়।

শান্তি চুক্তি অনুষ্ঠানে ওসি এ কে এম মাহফুজুল হক, ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস, আইডিয়াল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুহাম্মদ রেযওয়ানুল হকসহ কলেজ দুটির শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।

আইডিয়াল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক মুহাম্মদ রেযওয়ানুল হক বলেন, ‘তিন কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে মারামারির জন্য একে অন্যকে দায়ী করে। আসলে এর জন্য দায়ী মোবাইল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক কলেজের শিক্ষার্থীরা অন্য কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ট্রল করে, যা নিয়ে ঝামেলা শুরু হয়। তাই খারাপ দিক বাদ দিয়ে মোবাইল ফোনের যথাযথ ব্যবহার করতে হবে। খারাপভাবে ব্যবহার করা যাবে না। আজকে দুই কলেজের মধ্যে যে মিলন হলো, সেটি যেন অব্যাহত থাকে।

এ সময় তিনি ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষকে আইডিয়াল কলেজের বিরুদ্ধে করা একটি মামলা তুলে নেয়ার আহ্বান জানান।

ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস বলেন, আজকের দিনটি আমাদের জন্য খুবই আনন্দের। জুলাই অভ্যুত্থানে আমরা দেখেছি তিন কলেজের শিক্ষার্থীরা কীভাবে আন্দোলন করে ফ্যাসিবাদ বিদায় করেছে। পরে তারা আবার একসাথে ত্রাণ দিয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের মধ্যে আবার বৈরী সম্পর্ক তৈরি হলো। সাম্প্রতি এই ঘটনাটি প্রতিনিয়ত ঘটছিল, যার কারণে যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের বিপাকে পড়তে হচ্ছিল। এখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা দরকার। তাই নিউমার্কেট থানার ওসি এই উদ্যোগ নিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সম্প্রীতি বজায় রাখতে চাই। আগামী দিনে আমাদের মধ্যে যেন আর কোনো বিরোধ না ঘটে, সেই প্রত্যাশা রাখি। পাশাপাশি আমাদের মধ্যে এখন যেহেতু বিরোধের অবসান ঘটেছে, তাই ওসি সাহেবকে মামলাটি নিষ্পত্তি করার অনুরোধ জানাচ্ছি।

ঢাকা কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের সঙ্গে মারামারি না করার চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও শিক্ষার্থীরা।

এর আগে রোববার (৯ নভেম্বর) বেলা পৌনে ১২টার দিকে ঢাকা কলেজের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় শান্তি চুক্তি অনুষ্ঠান। এ সময় দুই কলেজের দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর পাশাপাশি নিউমার্কেট থানার ওসি এ কে এম মাহফুজুল হক, ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস, আইডিয়াল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুহাম্মদ রেযওয়ানুল হকসহ কলেজ দুটির অন্যান্য শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে না আসা নিয়ে সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক কাজী নিয়ামুল হক বলেন, ‘না আসার নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। আমাদের কলেজের কাজে আমরা ব্যস্ত ছিলাম। আমরা শান্তি–সমঝোতার পথে তিন কলেজ একইসাথে আছি। সমস্যা নেই, সামনে আবার তিন কলেজ একসাথে বসব।’

ঢাকা সিটি কলেজের মার্কেটিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন শান্ত বলেন, ‘এখন শেষ কয়েকদিন যে মারামারিটা চলছে তা ঢাকা কলেজ–আইডিয়াল কলেজের, এটা ওদের ইস্যু। আমাদের যে মারামারি ছিল সেটা আগেই মীমাংসা হয়ে গেছে। এখন, ঢাকা কলেজের সাথে আমাদের আপাতত কোনো বিরোধ নাই। আমাদের মারামারি সামান্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে হয়, বড় কোনো ইস্যু নিয়ে হয় না।’

উল্লেখ্য, প্রেম, উস্কানিমূলক কথা বা তুচ্ছ বিষয় কেন্দ্র করে গত এক বছরে ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্তত ১৫ বার বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বহুবার উদ্যোগ নিয়েও সমাধান করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে এবার এ শান্তি চুক্তির মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের সহিংসতার সংস্কৃতি থামার আশায় রয়েছেন সবাই।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *