:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
শুক্রবার (১২ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকায় ৬ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ১৩০ মিলিমিটার। আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, চলতি বর্ষা মৌসুমের স্বাভাবিক অবস্থায় রাজধানীতে এক দিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টির রেকর্ড এটি।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের সময় গত ২৭ মে রাজধানীতে এক দিনে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছিল ২২৪ মিলিমিটার। সেটি মৌসুমের স্বাভাবিক বৃষ্টি নয়, তা ছিল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবজনিত বৃষ্টি।
প্রচণ্ড বৃষ্টিতে রাজধানী বহু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ায় অনেক সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে ফকিরেরপুল, নয়াপল্টন, বায়তুল মোকাররম, তোপখানা রোড, মৎস্য ভবন, কারওয়ান বাজার, শান্তিনগর, মালিবাগ মোড়, আরামবাগ, প্রগতি সরণি, নিউমার্কেট, ধানমন্ডির রাপা প্লাজা, মিরপুরের রোকেয়া সরণি, পুরান ঢাকার দয়াগঞ্জ মোড়, বংশাল, নিমতলীর টোয়েনবি সার্কুলার রোড জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।
আবহাওয়া বিভাগের আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ কবির নাগরিক নিউজকে জানিয়েছেন, নিয়ম অনুসারে প্রতি তিন ঘণ্টা পরপর বৃষ্টি পরিমাপ করা হয়। সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৬০ মিলিমিটার। পরের তিন ঘণ্টায় পরিমাণ আরও বেড়েছে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৭০ মিলিমিটার। সব মিলে ৬ ঘণ্টায় বৃষ্টির পরিমাণ রেকর্ড ১৩০ মিলিমিটার।
তিনি আরও বলেন, আজ বৃষ্টি পুরোপুরি থেমে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। থেকে থেকে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি ঝরতেই থাকবে রাজধানীজুড়ে।
আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজধানীসহ প্রায় সারা দেশেই বৃষ্টি হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে কক্সবাজারে ৩০৯ মিলিমিটার। এ ছাড়া সন্দ্বীপে বৃষ্টি হয়েছে ২১৯ মিলিমিটার, সীতাকুণ্ডে ১০২ মিলিমিটার।
আবহাওয়া অফিস জানায়, মৌসুমি বায়ু এখন অতিমাত্রায় সক্রিয় থাকার কারণেই এই ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এই মৌসুমি বায়ুর অক্ষ ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ এবং ভারতের আসাম হয়ে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। বাংলাদেশ ও বঙ্গোপসাগরে মৌসুমি বায়ু অতিমাত্রায় সক্রিয় থাকায় উপকূলীয় এলাকায় অতি ভারী বৃষ্টি হয়েছে। দেশের ঢাকা, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে চলেছে।
মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তা আরও অন্তত তিন থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত থাকবে। তবে আগামীকাল শনিবার থেকে অতিমাত্রার সক্রিয়তা কমে আসবে। এর ফলে কাল থেকে মাঝেমধ্যে হালকা আবার মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হলেও এমন ভারী বর্ষণ হবে না বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।
টানা বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা। এতে করে বিপাকে পড়েছেন ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ। টানা বৃষ্টির কারণে সড়কে যানবাহন কম থাকায় ভিজে ভিজেই গন্তব্যে যাচ্ছেন অনেকে। কেউ কেউ ছাতা ব্যবহার করলেও তুমুল বৃষ্টিতে ভিজে একাকার। এছাড়া, সড়কে জমে থাকা হাঁটু পানিতে ভোগান্তি বেড়েছে।
পুরান ঢাকায় পানি জমেছে সবচেয়ে বেশি। নাজিরাবাজার ও কাজী আলাউদ্দিন রোডে হাঁটুপানি। বংশাল রোড, লক্ষ্মীবাজার, তাঁতীবাজার নবাবপুর রোডে বয়ে যাচ্ছে ঘোলাপানির স্রোত। তুলনামূলকভাবে একটু উঁচু ধোলাইখাল রোডটিও আজ সকাল থেকে অতিবৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে।
এ ছাড়া নবাবপুর, বংশাল, ইসলামপুর এলাকায় অনেক সিএনজিচালিত অটোরিকশার ইঞ্জিন জলাবদ্ধতায় বন্ধ হয়ে থেমে গেছে।
নিমতলী, চাঁনখারপুল এলাকা জলমগ্ন হওয়ায় মেয়র হানিফ উড়াল সড়কের ওঠানামার মুখে লম্বা যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। পানি জমে থাকায় ফ্লাইওভারে ওঠার সময় যানবাহন এগোতে পারছে না। নামার সময়ও ধীরগতি।
হাজারীবাগ নতুন রাস্তাটির কাঁচাবাজার মোড় থেকে উত্তর দিকে সিঙ্গারের তিন রাস্তার মোড় পর্যন্ত পুরোটাই হাঁটুপানিতে তলিয়ে গেছে। জুমার নামাজ আদায় করতে যেতে প্রচণ্ড অসুবিধায় পড়তে হয়েছে মুসল্লিদের।
গ্রিনরোডে কমফোর্ট হাসপাতাল থেকে গ্রিন লাইফ হাসপাতাল পর্যন্ত সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। এখানে হাসপাতালগুলোতে রোগী নিয়ে যাতায়াত করতে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে লোকজনের। পানি জমেছে সেন্ট্রাল রোড ও কলাবাগান এলাকায়। বিশেষ করে কলাবাগানের আবেদ আলী ঢাল এলাকায় এত পানি জমেছে যে অনেক বাড়ির নিচতলা ও সড়কসংলগ্ন অনেক দোকানের ভেতরে পানি ঢুকেছে।
কাঁটাবন মোড় থেকে বাটার মোড় হয়ে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় পর্যন্ত এলিফ্যান্ট রোডে পানি জমেছে। ওদিকে নিউমার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট হয়ে নীলক্ষেত অবধি সড়কে পানি জমেছে। পানি জমেছে আজিমপুর এলাকাতেও।
সকাল থেকে শুরু হওয়া মুষলধারার বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে কল্যাণপুর প্রধান সড়ক। বেলা পৌনে ১১টায় দেখা যায়, কল্যাণপুর নতুন বাজার মোড় থেকে কল্যাণপুর গার্লস স্কুল পর্যন্ত আধা কিলোমিটার সড়ক পুরো পানির নিচে ডুবে আছে। রিকশার পাদানিতে পানি উঠে যাচ্ছে। পথচলতি মানুষের হাঁটু ডুবে যাচ্ছে।
ধানমন্ডি এলাকার সোবহানবাগ থেকে রাপা প্লাজার সামনে ২৭ নম্বর সড়কের বেশ খানিকটা হয়ে আসাদগেট মোড় পর্যন্ত এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। আসাদ গেট থেকে রাপা প্লাজা পর্যন্ত সড়কে বহু বাস, প্রাইভেট কার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা আটকে পড়েছে। ফলে এই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
মানিকমিয়া অ্যাভিনিউ টিঅ্যান্ডটি স্কুলের সামনে থেকে পশ্চিম দিকের আড়ং মোড় পর্যন্ত পুরো সড়ক জলমগ্ন হয়ে আছে। এই সড়কে অনেক যানবাহন আটকে গেছে।
মিরপুরের বেশির ভাগ এলাকার সড়কেই পানি জমেছে। রোকেয়া সরণি থেকে আগারগাঁও পার হয়ে শেওড়াপাড়া পর্যন্ত সড়কে পানি নেই। এর পর থেকে কাজীপাড়া সেনপাড়া ১০ নম্বর গোলচত্বর হয়ে সামনের দিকের পুরো সড়কটি জলমগ্ন হয়ে আছে। পানি ঢুকেছে সড়কের দুই পাশের মহল্লাগুলোর ভেতরের সড়কেও।
মিরপুর বাংলা কলেজের সামনে থেকে ১ নম্বর মোড় পর্যন্ত সড়কে পানি জমেছে। বিশেষ করে সড়ক ও জনপথ অফিস থেকে বাঙলা কলেজ পর্যন্ত সড়কে প্রায় হাঁটুপানি। এই সড়কের পশ্চিম দিকে টোলারবাগ এলাকার পশ্চিম প্রান্ত পুরোটাই জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। লোকজন ঘর থেকে বের হতে পারছেন না।
পানি জমেছে পুরো সেগুনবাগিচা এলাকায়। মৎস্য ভবন থেকে কদমফুল ফোয়ারা হয়ে তোপখানা রোড জলমগ্ন। জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বর পানিতে ডুবে গেছে।