■ ঢাবি প্রতিনিধি ■
দীর্ঘ ১১২ দিন পর শ্রেণিকক্ষে ফিরছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সাড়ে তিন মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) শুরু হয় ক্লাস। ইতোমধ্যে প্রতি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে ক্লাস রুটিনসহ শ্রেণি কার্যক্রমের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের প্রথম বর্ষের ক্লাস আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে বলে জানা গেছে।
রোববার সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের কয়েকটি বিভাগের শ্রেণি কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ক্ষতিপূরণে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান।
উপাচার্য বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ সময় পর ক্লাসে ফিরতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের এখনও কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়ে গিয়েছে। শিক্ষার্থীদের যে একটা গ্যাপ তৈরি হয়েছে সেটি আমরা খুব দ্রুত পূরণের চেষ্টা করব। আমরা এখনও কিছু বিভাগের ক্লাস শুরু করতে পারিনি। আমাদের ছাত্র-শিক্ষকদের সাহায্য প্রয়োজন।’
এ দিকে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ১৬ ব্যাচের ছাত্রী রওনক জাহান রিফা বলেন, ‘বিভাগের শিক্ষক জিনাত হুদা, মশিউর রহমান, সাদেকা হালিম এবং আ ক ম জামাল উদ্দীনের পদত্যাগসহ ৪ দফা দাবিতে আমাদের আন্দোলন চলছে। কিন্তু এখনও কোনো যৌক্তিক সমাধান আমরা পাইনি। আমাদের দাবি আদায় হলে আমরা ক্লাসে ফিরব।’
ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি মিলিয়ে গত ২ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বন্ধ ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস। তবে এ সময়ে বিভিন্ন বিভাগে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১ জুলাই থেকে ক্লাস চালুর কথা থাকলেও প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ঘোষণা করে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় অচল হয়ে পড়ে। সব মিলিয়ে সাড়ে তিন মাস (১১২ দিন) বন্ধ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়।
ঈদুল আজহার আগে গত ২ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটি শুরু হয়। ছুটি শেষে ১ জুলাই শ্রেণি কার্যক্রম তথা ক্লাস শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সর্বজনীন পেনশনের নতুন স্কিম (কর্মসূচি) ‘প্রত্যয়’ প্রত্যাহারের দাবিতে ওই দিন থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। অন্যদিকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা, যা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে হয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পৃথক আন্দোলনে গত জুলাইয়ে কার্যত অচল হয়ে পড়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ক্লাস শুরুর আগে গতকাল শনিবার ১০টি ছাত্রসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ছাত্রসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে সবার সহযোগিতা চাওয়া হয়। অন্যদিকে ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতারা ক্যাম্পাসে দলীয় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে তাঁদের অবস্থান তুলে ধরেন। একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এবং বিভিন্ন হল সংসদ নির্বাচনের জন্য কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খানের কার্যালয়ে দুই পর্বে অনুষ্ঠিত সভায় অংশ নেন সহ-উপাচার্য মামুন আহমেদ ও সায়মা হক বিদিশা, কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ। সভার প্রথম পর্বে অংশ নেয় গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলন ও জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। দ্বিতীয় পর্বে ছিলেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী), সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ), ছাত্র ফেডারেশন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী ও ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তবে ছাত্রশিবিরকে এই সভায় ডাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিভিন্ন বাম ছাত্রসংগঠনের নেতারা। কিন্তু মতবিনিময় সভায় ছাত্রনেতাদের প্রশ্নের কোনো জবাব উপাচার্য দেননি বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
মতবিনিময় সভার বিষয়ে উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ গতকাল বলেন, ‘অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার অংশ হিসেবে ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তারা নানা ধরনের সংস্কার প্রস্তাব ও গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজনের বিষয়টিও আলোচনায় এসেছিল।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন ছুটি শুরু হয়, তখন উপাচার্যের দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ১০ আগস্ট পদত্যাগ করেন তিনি। এর আগে পদত্যাগ করেন প্রক্টর। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ২৭ আগস্ট নতুন উপাচার্য হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর প্রক্টরসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে নতুন নিয়োগ হয়।
নতুন প্রশাসন শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করার ব্যাপারে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। তবে গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে তোফাজ্জল হোসেন নামের একজনকে চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দ্রুত বিষয়টি তদন্ত করে। পাশাপাশি হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আট শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেয়। তাঁদের মধ্যে ছয়জনকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে।