:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
আগামী ১ জুলাই থেকে পানির দাম ১০ শতাংশ ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ওয়াসা)। ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতির সমন্বয়ের লক্ষ্যে পানির দাম বাড়ানো হয়েছে।
আবাসিক গ্রাহকদের জন্য প্রতি ১ হাজার লিটার পানির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ টাকা ৭০ পয়সা, যার দাম বর্তমানে ১৫ টাকা ১৮ পয়সা। আর বাণিজ্যিক গ্রাহকদের জন্য একই পরিমাণ পানির নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৬ টাকা ২০ পয়সা, যা বর্তমানে ৪২ টাকা।
এই সিদ্ধান্ত মিটারবিহীন হোল্ডিং, গভীর নলকূপ, নির্মাণাধীন ভবন, ন্যূনতম বিলসহ সব প্রকার (পানি ও পয়ঃ) অভিকরের ক্ষেত্রেও কার্যকর হবে।
এর আগে করোনাকালীন সময় ঢাকা ওয়াসা দুই বছরে দুবার আবাসিক ও বাণিজ্যিক পর্যায়ে পানির দাম বাড়িয়েছিল। এবার নিয়ে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৬ বছরে ঢাকা ওয়াসার পানির দাম বাড়ল ১৭ বার। সবশেষ ২০২১ সালের জুলাইয়ে ঢাকা ওয়াসা পানির দাম বাড়িয়েছিল। তারও আগে, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি করা হয় পানি ও পয়ঃ সেবার বিল। ২০২২ সালেও পানির দাম বাড়াতে চেয়েছিল ঢাকা ওয়াসা। কিন্তু তখন ওয়াসা কর্তৃক পানির দাম বাড়ানোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট হয়। বিধি প্রণয়ন না করে ওয়াসার পানির মূল্যবৃদ্ধি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দেন হাইকোর্ট। এরপর এত দিন পানির দাম বাড়ানোর বিষয়টি স্থগিত ছিল।
২০১৭ সালে ঢাকা ওয়াসা আবাসিক পর্যায়ে পানির দাম ১০ টাকা থেকে ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১০.৫ টাকা এবং বাণিজ্যিক সংযোগে ৩২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৩.৬ টাকা করে। এরপরে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি করা হয় পানি ও পয়ঃ সেবার বিল।
পরবর্তীতে ২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে গ্রাহক পর্যায়ে আবাসিক সংযোগে ১১.৫৭ টাকা থেকে ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১৪.৪৬ টাকা এবং বাণিজ্যিক সংযোগে ৩৭.০৪ টাকা থেকে ৮ শতাংশ বাড়িয়ে ৪০ টাকা করা হয়।
ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান জানিয়েছিলেন, এলাকাভেদে পানির আলাদা দাম জুলাই মাস থেকে নির্ধারণ করতে চায় ঢাকা ওয়াসা। আবার একই এলাকায় আলাদা হারে বিল করা হবে। এলাকাভিত্তিক পানির দাম নির্ধারণের আগে নিয়মিত সমন্বয়ের অংশ হিসেবে বাড়তে পারে দামও।
তিনি জানান, একটি এলাকার বাসিন্দাদের আয়ের ওপর নির্ভর করে ৬-৭টি ধাপে পানির দাম নির্ধারণ হবে। যারা অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন তারা পানির দাম বেশি দিক। যারা কম ক্ষমতাসম্পন্ন তারা কম দিক। সরকার কোনোভাবে আর সাবসিডি (ভর্তুকি) দেবে না। কাজেই আমরা কোনো দাম বাড়াচ্ছি না, ওই সিস্টেমটা চালুর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছি।
দাম সমন্বয়ের ক্ষেত্রে একেক এলাকার জন্য আলাদা দর নির্ধারণের চিন্তা কেন সাংবাদিকদের–এ প্রশ্নের জবাবে ওয়াসার এমডি জানান, আমাদের মধ্যে একটা অংশ আছে যারা অনেক ধনী। বারিধারায় একটা দুই রুমের অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়া ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এখন চিন্তা করেন খিলগাঁওয়ে এমন একটা অ্যাপার্টমেন্ট নিয়ে যিনি থাকেন, তিনি ভাড়া দেন ২০ হাজার টাকা। যিনি ২০ হাজার টাকা ভাড়া দেন, আর যিনি এক লাখ ২৫ হাজার টাকা ভাড়া দেন, তারা একই দামে পানি খাচ্ছেন। সরকারের ভর্তুকির টাকা কেন আপনি বড়লোককে দেবেন? প্রশ্নই আসে না।
পানি সরবরাহে সরকার আর ভর্তুকি দেবে না জানিয়ে তাকসিম বলেন, উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে পানি বিক্রি করে ঢাকা ওয়াসাকে এগিয়ে নেওয়া যাবে না। সরকার যদি কোনো সরকারি সংস্থাকে ভর্তুকি দিয়ে চালায়, তাহলে সেই সংস্থা কোনোদিন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে না।
তবে আইন অনুযায়ী ৫ শতাংশ পানির দাম বাড়ানোর এখতিয়ার আছে ঢাকা ওয়াসার। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের সদস্য দ্বীপ আজাদ বলেন, ‘আইন অনুযায়ী মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে ওয়াসা প্রতিবছর পানির দাম ৫ শতাংশ বাড়াতে পারে। এর বেশি দাম বাড়ালে বোর্ডে পাস করতে হবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পানির দাম বাড়ানোর বিষয়ে বোর্ড সভায় কোনো আলোচনা হয়নি। শেষ বোর্ড মিটিংয়ে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে কথা হয়েছিল।’
বুধবার পত্রিকায় প্রকাশিত ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গ্রাহকদের তারা জানাচ্ছে যে ওয়াসা আইন ১৯৯৬-এর ২২ ধারা অনুযায়ী মূল্যস্ফীতির সমন্বয়ের লক্ষ্যে পানির দাম বাড়ানো হয়েছে।
পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ আইন ১৯৯৬ এর ২২ নম্বর ধারার ১ নম্বর উপধারায় বলা আছে, ‘কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত সেবার জন্য আরোপিত অভিকর বা চার্জ প্রত্যেক বছরে একবার সংশোধন করা যাবে।’
একই ধারার ২ নম্বর উপ ধারায় বলা আছে, ‘উপ-ধারা-১ এ যা কিছুই থাকুক না কেন, মূল্যস্ফীতির কারণে পরিচালনা ব্যয় বৃদ্ধি পেলে অতিরিক্ত ব্যয় বহনের প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষ, বোর্ডের অনুমোদনক্রমে, উক্ত অভিকর বা চার্জ প্রতি অর্থ বছরে একবার অনধিক পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত সমন্বয় করতে পারবে।’