:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
রাজধানীর মহাখালীর কড়াইল বস্তিতে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। বিকাল ৫টা ৩৩ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে নিশ্চিত করেছে ফায়ার সার্ভিস। তবে দেড় ঘণ্টার এই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বস্তির দুই শতাধিক কাঁচাঘর। সর্বস্ব হারিয়ে আহাজারি করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
বিকেল ৪টা ৫ মিনিটে বস্তিতে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। পরে ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিটের চেষ্টায় ৫টা ৩৩ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
কড়াইল বস্তির বেলতলা নামক স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখনো কোনো হতাহতের সংবাদ পাওয়া যায়নি। তবে পুলিশ বলছে একটি সেমি পাকা হোটেল থেকে এ আগুনের সূত্রপাত।
রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার আগে এ তথ্য নিশ্চিত করেন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি জানান, কড়াইল বেলতলা বস্তির একটি সেমি পাকা রেস্টুরেন্টে আগুনের ঘটনা ঘটে। হতাহতের সংবাদ এখনো পাওয়া যায়নি।
আগুনে বস্তির দুই শতাধিক ঘর ও ঘরে থাকা আসবাবপত্রসহ বস্তিবাসীর ব্যবহৃত জিনিসপত্র পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। সেখান থেকে এখনও ধোঁয়া উঠছে। আগুনে সর্বস্ব হারিয়ে অনেকেই আহাজারি করছেন। কেউ কেউ ধ্বংসস্তুপের মধ্যেও কিছু অক্ষত আছে কি না, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন।
এই আগুনে সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন বস্তির অনেকে। তাদের মধ্যে একজন তৃতীয় লিঙ্গের লিমা হিজড়া।
তিনি নাগরিক নিউজকে বলেন, আমরা ১০ জন হিজড়া দুটি ঘরে বসবাস করতাম। আগুনের সময় আমাদের কয়েকজন ঘরেই ছিল, বাকিরা বাইরে ছিলাম। খবর পেয়ে আমরা আসি। এসে দেখি আমাদের ঘরসহ সবকিছু পুড়ে গেছে। আমরা ভিক্ষা করে অনেক কষ্ট করে একটি একটি করে জিনিসপত্র কিনেছিলাম। আজ আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে গেল। এখন আমরা কোথায় যাব, কী করব ভেবে পাচ্ছি না।
লিমার মতো আফরোজাও তার সর্বস্ব হারিয়েছেন এ আগুনে। তিনি বলেন, প্রথম যখন একটি দোকানে আগুন লাগে তখন দৌড়ে ঘর থেকে বের হই। মুহূর্তের মধ্যে আগুন পুরো বস্তিতে ছড়িয়ে পড়ে। ভেতর থেকে কিছুই আনতে পারিনি। আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে। আমরা এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াব?
আগুনে সব হারানো শামছুন্নার বলেন, আমাগো আর কিছু রইলো না৷ কী নিয়া বাঁইচা থাকমু৷ পোলাডা মাদরাসায় পড়ে৷ ওর বই-খাতা পুড়ে ছাই৷ নিজেগো খ্যাতা-বালিশও কিচ্ছু নাই৷ রাইতে থাকনের জায়গাটুকুও শ্যাষ হয়ে গেল৷ এহন এক কাপড়ে দাঁড়ায়ে আছি, ক্যামনে বাঁচমু৷
ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. আক্তারুজ্জামান জানান, আগুনে ৪০-৫০টির মতো ঘর পুড়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। আগুন পুরোপুরি এখনো নেভানো না গেলেও আমরা প্রায় শেষ পর্যায়ে আছি। আগুনের কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো সেভাবে জানা যায়নি।