■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
রাজধানীর কাকরাইল ও আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। শুক্রবার (১ নভেম্বর) ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল হাসান স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, সম্প্রতি উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় জনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স (অর্ডিন্যান্স নং- III/৭৬) এর ২৯ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে আগামীকাল শনিবার রাজধানীর পাইওনিয়ার রোডের ৬৬ নং ভবন, পাইওনিয়ার রোড, কাকরাইলসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় যে কোনো প্রকার সভা, সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা, বিক্ষোভ প্রদর্শন ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা হলো।
এর আগে, আগামীকাল শনিবার দুপুর ২টায় রাজধানীর কাকরাইলে মিছিল ও সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় পার্টি। চেয়ারম্যান ও মহাসচিবসহ দলের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ছাড়াও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের দাবিতে ওই সমাবেশে ডেকেছে জাতীয় পার্টি। একই দিন জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে গণপ্রতিরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতা। এ অবস্থায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএমপি।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের দাবিতে আগামীকাল শনিবার বেলা দুইটায় কাকরাইলে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি। এতে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সভাপতিত্ব করার কথা। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ব্যানারে প্রথমে হামলা ও পরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। জাতীয় পার্টি বলেছে, ওই সময় নেতা-কর্মীরা শনিবারের সমাবেশের প্রস্তুতি সভা করছিলেন।
আজ এক সংবাদ সম্মেলনে ওই হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও আগামীকাল শনিবার কাকরাইলে জাতীয় পার্টি সমাবেশ করবে।
দলের নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘কেউ ভয় পাবেন না যে যেখানে আছেন।…আমরা মরতে আসছি, আমরা মরতে চাই। কত লোক মারবেন ওনারা, আমরা সেটা দেখতে চাই। মনে রাখবেন, ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা। হাত দিয়ে প্রতিবাদ করতে না পারলে মুখ দিয়ে করো। মুখ দিয়ে না পারলে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করো। আমাদের সেটা করতে হবে। তার জন্য আমরা জীবন দিতে প্রস্তুত আছি।’
জি এম কাদের বলেন, ‘আমরা আগামীকাল (২ নভেম্বর) একটি সমাবেশের আয়োজন করেছিলাম, সেই আয়োজনকে ঘিরে গতকাল রাতে ছাত্রজনতার ব্যানারে ছাত্র অধিকার পরিষদের একজন নেতা বিন ইয়ামিন মোল্লার নেতৃত্বে একটি দল জাতীয় পার্টি অফিসে ভাঙচুর করেছে, আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমরা জানতে পারি, পরে নাগরিক কমিটির ব্যানারে মনির, ইসমাইল, আনোয়ারের নেতৃত্বে আরেকটি দল আমাদের পার্টি অফিসে হামলা চালায়।’
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা দেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। আমরা মহাসমাবেশ করার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাছ থেকে বৈধভাবে অনুমতি নিয়ে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু একটি কুচক্রী মহল আগামীকালের যে মহাসমাবেশ নির্ধারিত ছিল, সেটা নস্যাৎ করতে পরিকল্পিতভাবে হামলা করেছে।
জাতীয় পার্টির সমাবেশ ঘোষণার পর আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র-টিএসসিতে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার ব্যানারে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির সমাবেশ প্রতিরোধের কথা জানানো হয়।
ছাত্র-শ্রমিক জনতার ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র অধিকার পরিষদের বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দোসর জাতীয় পার্টিকে আগামীকাল (শনিবার) সমাবেশ করতে দেওয়া মানে আওয়ামী লীগকে পূর্নবাসিত করার আরেকটি চক্রান্ত। জাতীয় পার্টিকে আগামীকাল সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। আমাদের কাছে খবর আছে, তারা (জাতীয় পার্টি) দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আওয়ামী লীগ ক্যাডার বাহিনী নিয়ে এসে সমাবেশ করবে। ডিএমপি কমিশনার কীভাবে এই হত্যাকারীদের দোসরদের সমাবেশ করার অনুমতি দেয়, আমরা জানতে চাই। তাদের আমরা সমাবেশ করতে দেব না।’
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিক্ষুব্ধ জনতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্য থেকে একটি মশাল মিছিল নিয়ে রাজধানীর বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে যান। আন্দোলনকারীরা বলেন, আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে থাকার কারণে জাতীয় পার্টির রাজনীতি করার অধিকার নেই।
একপর্যায়ে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা অফিসের ভেতর থেকে বের হয়ে আসেন। তখন সেখানে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে আন্দোলনকারী জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যান। এরপর কার্যালয়টিতে আগুন দেন আন্দোলনকারীরা।