চুরির সময় ধস্তাধস্তিকালে মা-মেয়েকে খুন করেন আয়েশা

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■ 

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার গৃহকর্মী আয়েশা আক্তার (২০) জানিয়েছে, বাসা থেকে জিনিসপত্র চুরির সময় ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তিনি গৃহকর্তার স্ত্রী ও মেয়েকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন।

বুধবার দুপুরে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নের কয়ারচর এলাকা থেকে মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ আয়েশাকে গ্রেফতার করে। তিনি নরসিংদীর সলিমগঞ্জ এলাকার রবিউল ইসলামের মেয়ে। হত্যাকাণ্ডের পর নলছিটির দপদপিয়া ইউনিয়নের কয়ারচর এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন এই তরুণী।

পুলিশের অভিযানে তাঁর স্বামী জামাল সিকদার রাব্বিকেও আটক করা হয়েছে। জামাল ওই এলাকার জাকির সিকদারের ছেলে। জামাল ও আয়েশা ঢাকায় থাকেন। মা-মেয়ের হত্যাকাণ্ডের পরে তাঁরা বাড়িতে আসেন।

অভিযানে অংশ নেওয়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সহিদুল ইসলাম মাসুম সাংবাদিকদের বলেন, গৃহকর্তার বাসা থেকে কিছু মালামাল চুরি করার পর সেখানে ধস্তাধস্তি হয়। এ সময় আয়েশা আক্তার ছুরিকাঘাত করে গৃহকর্তার স্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তাঁর মেয়ে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজকে (১৫) হত্যা করেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান চালিয়ে আয়েশাকে গ্রেফতার করা হয়।প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে তিনি এসব কথা বলেন।

অভিযানে তেজগাঁও বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুনও ছিলেন। পরে আয়েশাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন পুলিশ সদস্যরা।

গত সোমবার সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে নিজের বাসায় খুন হন মা লায়লা আফরোজ ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, বাসার গৃহকর্মী আয়েশা ওইদিন বোরকা পরে ঢুকে স্কুল ড্রেস ও মাস্ক পরে বেরিয়ে যান। এ ঘটনায় গৃহকর্মীকে আসামি করে মামলা করেন গৃহকর্তা এম জেড আজিজুল ইসলাম।

পুলিশ বলছে, হত্যাকাণ্ডের ঘটনার চার দিন আগে মোহাম্মদপুর শাজাহান রোডের ৩২/২/এ নম্বর বাসার সাততলার বাসায় কাজ নেন ওই গৃহকর্মী। নিজেকে আয়েশা নামে পরিচয় দেন। মা ও মেয়েকে হত্যার পর নাফিসার স্কুল ড্রেস পরে বাসা থেকে বেরিয়ে যান আয়েশা।

নিহত লায়লা আফরোজ ছিলেন গৃহিণী, আর মেয়ে নাফিসা বিনতে আজিজ মোহাম্মদপুরের প্রিপারেটরি স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। নাফিসার বাবা এম জেড আজিজুল ইসলাম উত্তরায় সানবীমস স্কুলের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক।

ভবনের একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নাফিসার বাবা স্কুলের উদ্দেশ্যে সকাল ৭টার দিকে বের হয়ে যান। এর ঘণ্টাখানেক পর ৭টা ৫১ মিনিটে বোরকা পরে ওই বাসায় প্রবেশ করেন গৃহকর্মী আয়েশা। দেড় ঘণ্টা পর ৯টা ৩৬ মিনিটে স্কুল ড্রেস পরে বাসা থেকে বেরিয়ে যান তিনি। ওই স্কুল ড্রেস নাফিসার। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নাফিসার বাবা বাসায় ফিরে স্ত্রী ও মেয়েকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান।

পুলিশের একটি সূত্র বলছে, মাকে হত্যার বিষয়টি বুঝতে পেরে মেয়ে নাফিসা ডাইনিং রুমে রাখা ইন্টারকম থেকে কাউকে ফোন দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যর্থ হলে সেখানেই তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। ওই সময় ধস্তাধস্তিতে ইন্টারকমের লাইন খুলে যায়। বাসায় তল্লাশি করে বাথরুমে একটি সুইচ গিয়ার চাকু ও একটি ফল কাটা ছুরি পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে, ওই ছুরি দুটি দিয়েই মা-মেয়েকে হত্যা করে গৃহকর্মী আয়েশা। এই ঘটনায় ওই বাসার দারোয়ান মালেককে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। 

গতকাল মঙ্গলবার তাঁদের মরদেহ নাটোরে দাফন করা হয়েছে। মামলার এজাহারে বাসা থেকে মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিস খোয়া যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *