■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটির নতুন কৃষিমন্ত্রী হিসেবে ব্রুক রলিন্সকে মনোনয়নের মাধ্যমে তার পরবর্তী প্রশাসন গোছানোর কাজ শেষ করেছেন। শনিবার (২৩ নভেম্বর) তার মনোনয়নের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
মন্ত্রীসভার ১৫টি পদে পছন্দমতো ১৫ জনকে বেছে নিয়েছেন ট্রাম্প। যার মধ্যে নারী রয়েছেন পাঁচ জন। ট্রাম্প মনোনয়ন দিলেও যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের অনুমোদনের মাধ্যমেই তাদের নিয়োগ চূড়ান্ত হবে।
সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করবেন ট্রাম্প। ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
ট্রাম্পের মন্ত্রীসভায় কারা কোন পদে মনোনয়ন পেয়েছেন তা দেখে নেওয়া যাক।
স্কট ব্যাসেন্ট (অর্থমন্ত্রী)
ওয়াল স্ট্রিটের স্বনামধন্য বিনিয়োগকারী স্কট ব্যাসেন্টকে নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি দেশটির করনীতি, সরকারি ঋণ, আন্তর্জাতিক অর্থায়ন, নিষেধাজ্ঞার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলিতে নেতৃত্ব দেবেন। তিনি ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে শুরু থেকেই ট্রাম্পকে সমর্থন করেছেন।
লোরি শাভেজ-ডিরেমার (শ্রমমন্ত্রী)
৫৬ বছর বয়সী লোরি শাভেজ-ডিরেমানকে দেশটির নতুন শ্রমমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি অরেগন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের নির্বাচিত সদস্য। ট্রেড ইউনিয়নগুলোর সমর্থন রয়েছে তার পক্ষে।
হওয়ার্ড লাটনিক (বাণিজ্যমন্ত্রী)
ধনকুবের হওয়ার্ড লাটনিককে বাণিজ্যমন্ত্রীর পদে মনোনয়ন দিয়েছেন ট্রাম্প। লাটনিক মার্কিন বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ক্যানটর ফিৎসজেরাল্ডের প্রধান। তিনি রিপাবলিকান পার্টির ক্ষমতা গ্রহণের প্রস্তুতিসংক্রান্ত দলের কো-চেয়ার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ট্রাম্পের মতে, ওয়াল স্ট্রিটে ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করার দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে লাটনিকের।
মার্কো রুবিও (পররাষ্ট্রমন্ত্রী)
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মার্কো রুবিওকে বেছে নিয়েছেন ট্রাম্প। মার্কো ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের সিনেটর। তিনি বিগত বছরগুলোয় চীন, ইরান, কিউবাসহ যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রতি সম্মান রেখেই যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী পররাষ্ট্রনীতির পক্ষে কথা বলেছেন। তার মা-বাবা কিউবান অভিবাসী।
তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দীর্ঘদিনের সমালোচক। এছাড়া তিনি ইসরায়েলের একজন একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবেও পরিচিত।
ব্রুক রলিন্স (কৃষিমন্ত্রী)
দীর্ঘদিনের মিত্র ব্রুক রলিন্সকে পরবর্তী প্রশাসনে কৃষিমন্ত্রী পদে মনোনয়ন দিয়েছেন ট্রাম্প।
দীর্ঘদিন ধরে ট্রাম্পের একজন শীর্ষ সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন রলিন্স। তিনি ট্রাম্পপন্থী ও ডানপন্থী থিংক ট্যাংক আমেরিকা ফার্স্ট পলিসি ইনস্টিটিউটের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে অফিস অব আমেরিকান ইনোভেশনের পরিচালক ছিলেন তিনি। এ ছাড়া রলিন্স হোয়াইট হাউসের অভ্যন্তরীণ নীতি কাউন্সিলের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
পাম বন্ডি (অ্যাটর্নি জেনারেল)
ট্রাম্প তার পরবর্তী প্রশাসনে অ্যাটর্নি জেনারেল পদে পাম বন্ডিকে মনোনয়ন দিয়েছেন। বন্ডি ২০১১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ফ্লোরিডার অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন মাদক ও ওষুধের অপব্যবহার-সংক্রান্ত কমিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বন্ডি থিংক ট্যাংক আমেরিকা ফার্স্ট পলিসি ইনস্টিটিউটের আইনি শাখার নেতৃত্ব পর্যায়েও দায়িত্ব পালন করেছেন। এই প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা ট্রাম্পকে নীতিনির্ধারণে সহায়তা করেছেন।
স্কট টার্নার (আবাসন ও নগর উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী)
ট্রাম্পের পরবর্তী প্রশাসনে আবাসন ও নগর উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী পদে মনোনয়ন পেয়েছেন স্কট টার্নার। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও সাবেক ফুটবলার। এর আগে তিনি হোয়াইট হাউসের সুযোগ ও পুনরুজ্জীবন কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
আর এফ কে জুনিয়র (স্বাস্থ্যমন্ত্রী)
৭০ বছর বয়সী রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রকে নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিয়েছেন ট্রাম্প। দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করেছেন কেনেডি জুনিয়র। তবে তাকে নিয়ে রয়েছে বিতর্কও। তিনি ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯ মহামারির সময় করোনার টিকার বিরোধিতা করেছিলেন। এ নিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্বও প্রচার করেছেন। করোনার টিকাকে প্রাণঘাতী বলেও দাবি করেছেন তিনি।
পিট হেগসেথ (প্রতিরক্ষামন্ত্রী)
ট্রাম্পের প্রশাসনে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পদে মনোনয়ন পেয়েছেন পিট হেগসেথ। তিনি দেশটির সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজের উপস্থাপক। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যও ছিলেন। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর নেতৃত্ব দেবেন তিনি। ট্রাম্পের প্রিয় সংবাদ নেটওয়ার্ক ফক্স নিউজে ২০১৪ সালে যোগ দেন হেগসেথ। সপ্তাহান্তের একটি অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করে থাকেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনের কর্মীদের সামলাতে হবে তাঁকে।
ডগ বারগাম (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী)
৬৮ বছর বয়সী ডগ বারগামকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদে মনোনয়ন দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি নর্থ ডাকোটার গভর্নর। সম্পদশালী বারগাম সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের একজন সাবেক নির্বাহী। বারগাম নিজেকে একজন প্রথাগত ব্যবসায়িক মনমানসিকতার রক্ষণশীল ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেন। প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে একসময় রিপাবলিকান পার্টি থেকে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন তিনি। পরে অবশ্য মনোনয়নের দৌড় থেকে তিনি নিজেকে সরিয়ে নেন, ট্রাম্পের পক্ষে কাজ করেন।
সোন ডাফি (পরিবহনমন্ত্রী)
ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনে পরিবহনমন্ত্রী পদে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক সদস্য সোন ডাফিকে মনোনয়ন পেয়েছেন। উইসকনসিন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। সোন ডাফি একসময় মার্কিন গণমাধ্যম ফক্স নিউজের নিয়মিত প্রদায়ক ছিলেন। তিনি ‘ফক্স বিজনেস’ নামের একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতেন। ফক্স নিউজ ছাড়াও তিনি অন্যান্য টিভি চ্যানেলে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছেন।
লিন্ডা ম্যাকমোহন (শিক্ষামন্ত্রী)
ট্রাম্প লিন্ডা ম্যাকমোহনকে দেশটির পরবর্তী শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করেছেন। তিনি ট্রাম্পের ট্রানজিশন টিমের কো-চেয়ার। লিন্ডা ওয়ার্ল্ড রেসলিং এন্টারটেইনমেন্টের (ডব্লিউডব্লিউই) সাবেক নির্বাহী। স্বামী ভিন্স ম্যাকমোহনের সঙ্গে যৌথভাবে তিনি ওয়ার্ল্ড রেসলিং এন্টারটেইনমেন্ট গড়ে তোলেন। লিন্ডা ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদকালে তার প্রশাসনে কাজ করেছেন। তিনি ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত স্মল বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে প্রশাসক হিসেবে কাজ করেছেন। ২০২১ সাল থেকে ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান আমেরিকা ফার্স্ট পলিসি ইনস্টিটিউটের বোর্ড চেয়ারপারসন হিসেবে কাজ করেছেন লিন্ডা।
ক্রিস রাইট (জ্বালানিমন্ত্রী)
ক্রিস রাইটকে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানিমন্ত্রী করার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। রাইট জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের পক্ষে। লিবার্টি এনার্জি নামের ডেনভারভিত্তিক একটি তেলক্ষেত্র পরিষেবা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও তিনি। তেল-গ্যাসের সর্বোচ্চ উৎপাদনের পক্ষে ট্রাম্পের পরিকল্পনায় তিনি সমর্থন দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে তিনি বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানোর উপায় খুঁজতে ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে এগিয়ে নেবেন।
ডগ কলিন্স (ভেটেরানস অ্যাফেয়ার্সমন্ত্রী)
ডগ কলিন্সকে পরবর্তী প্রশাসনে ভেটেরানস অ্যাফেয়ার্সমন্ত্রী পদে মনোনয়ন দিয়েছেন ট্রাম্প। কলিন্স ইরাক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি একজন আইনজীবী ও অবসরপ্রাপ্ত রাজনীতিক।
ক্রিস্টি নোয়েম (হোমল্যান্ড সিকিউরিটি-বিষয়ক মন্ত্রী)
ট্রাম্পের তার নতুন প্রশাসনে হোমল্যান্ড সিকিউরিটিবিষয়ক মন্ত্রীর পদে বেছে নিয়েছেন সাউথ ডাকোটা অঙ্গরাজ্যের গভর্নর ক্রিস্টি নোয়েম। তিনি ট্রাম্পের রানিংমেট হতে পারেন বলে এবারের নির্বাচনের আগে আলোচনা ছিল।