‘সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়াকে আনতে পেরে আমরা গর্বিত’

■ নাগরিক প্রতিবেদন ■ 

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আনতে পেরে আমরা গর্বিত। 

বৃহস্পতিবার বিকালে সেনাকুঞ্জের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এ কথা জানান তিনি।  

ড. ইউনূস বলেন, শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়া এখানে এসেছেন। একযুগ তিনি আসার সুযোগ পাননি। আমরা গর্বিত এই সুযোগ দিতে পেরে। দীর্ঘদিনের অসুস্থতা সত্ত্বেও বিশেষ দিনে সবার সঙ্গে শরিক হওয়ার জন্য আপনাকে আবারও ধন্যবাদ। আপনার আশু রোগমুক্তি কামনা করছি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, খালেদা জিয়া আজ এখানে আমাদের মধ্যে উপস্থিত আছেন। এক যুগ ধরে তিনি এই মহাসম্মিলনীতে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পান নাই। আজকে সুযোগ পেয়েছেন। আমরা সবাই আনন্দিত এবং গর্বিত যে এই সুযোগ দিতে পেরেছি আপনাকে।শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও এই বিশেষ দিবসে সবার সাথে শরিক হওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।  

তিনি বলেন, এই অনুষ্ঠানে আপনাকে বিশেষভাবে স্বাগত জানাচ্ছি।খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনা করেন প্রধান উপদেষ্টা।

এর আগে বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা ৫০ মিনিটে সেনানিবাসস্থ সেনাকুঞ্জে পৌঁছান সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। বিকাল সাড়ে ৩টায় গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে সেনাকুঞ্জে রওনা করেন বেগম খালেদা জিয়া।

সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখেই কেঁদে ফেলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

মূলত, প্রায় ৬ বছর পর বাইরে তাকে কোনো অনুষ্ঠানে দেখেই আপ্লুত হয়ে পড়েন মির্জা ফখরুল।

পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে যে সম্মান জানিয়েছে, তাতে গোটা জাতি আজ আনন্দিত।

মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া এ দেশের জন্য তার জীবনের সবচেয়ে বড় সময়টা দিয়ে দিয়েছেন গণতন্ত্রের জন্য, স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্বের জন্য। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে পরিকল্পিতভাবে সবচেয়ে দেশপ্রেমিক বাহিনী সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীকে তার থেকে দূরে করে রাখা হয়েছে। আমি আজকে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের বিশেষ করে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁনকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। বিশেষ করে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ধন্যবাদ জানাতে চাই যে, তিনি আজকে ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) যে সম্মান দেখিয়েছেন, এতে আমরা যেমন কৃতজ্ঞ হয়েছি,  একই সঙ্গে গোট জাতি আজকে আনন্দিত হয়েছে। 

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়া সেনাকুঞ্জে পৌঁছালে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন তাকে অভ্যর্থনা জানান।

এর আগে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে খালেদা জিয়া গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’ থেকে সেনাকুঞ্জের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের উদ্দেশে রওনা হন। এ সময় ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান তার সঙ্গে ছিলেন।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের কুশল বিনিময়

খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের কুশল বিনিময়

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। বৃহস্পতিবার সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এ কুশল বিনিময় করেন তারা। 

এ সময় ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। বিএনপি চেয়ারপারসন জুলাই-আগস্টে ছাত্রদের অবদানের কথা স্মরণ করেন। 

কুশল বিনিময় শেষে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে তিনটি ছবি শেয়ার দিয়ে লেখেন, ‘আপনাকে এই সুযোগ করে দিতে পেরে আমরা গর্বিত।’

২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর খালেদা জিয়াকে তার পরিবারের দীর্ঘ ৪০ বছরের স্মৃতি বিজড়িত ঢাকা সেনানিবাসের শহীদ মইনুল রোডের বাড়ি থেকে এক কাপড়ে টেনে হিঁচড়ে জবরদস্তি করে বের করে দিয়েছিল শেখ হাসিনার সরকার। আজ সেই সেনানীবাসের সেনাকুঞ্জে গেলেন তিনি। 

এদিকে ২০১৮ সালের পর এই প্রথম বিএনপি চেয়ারপারসন প্রকাশ্য কোনো কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করলেন। এর আগে তিনি ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সবশেষ সিলেট সফর করেন। এছাড়া ২০১২ সালে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।

এর আগে গত মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) রাতে সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ লে. জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম এবং সশ্বস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লে. জেনারেল এএসএম কামরুল আহসান আমন্ত্রণপত্রটি বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে পৌঁছে দেন।

খালেদা জিয়া ছাড়াও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র ২৬ জন নেতাও সশ্বস্ত্র বাহিনী দিবস অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পেয়েছেন। ২০০৯ সালের পর এবারই প্রথম বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকেও আমন্ত্রণ জানানো হলো।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *