■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবারও (১৫ মে) শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার দর হারিয়েছে। এতে প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৫৪ পয়েন্ট হারিয়ে ৪৭৮১ পয়েন্টে নেমেছে। সূচকের এ অবস্থান ২০২০ সালের ২৫ আগস্ট বা পৌনে পাঁচ বছরের সর্বনিম্ন।
দিনের শুরুতে বেশিরভাগ শেয়ারের দরবৃদ্ধি নিয়ে লেনদেন শুরু হয়েছিল। লেনদেনের প্রথম আধা ঘণ্টায় দুই শতাধিক শেয়ারের দরবৃদ্ধিতে ভর করে ডিএসইএক্স সূচক প্রায় ২১ পয়েন্ট বেড়ে ৪৮৫৬ পয়েন্টে উঠেছিল। তবে এরপর ক্রমাগত দরপতনে লেনদেন শেষ হওয়ার কয়েক মিনিট আগে দিনের সর্বোচ্চ অবস্থান থেকে ৭৭ পয়েন্ট হারিয়ে ৪৭৭৯ পয়েন্ট পর্যন্ত নেমেছিল।
গত আগস্টে সরকার বদলের পর প্রথম চার কর্মদিবসে বড় উত্থান হয়েছিল শেয়ারদর, সূচক ও লেনদেনে। তবে এর পর থেকে ক্রমাগত দর পতন হচ্ছে।
সবশেষ প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শীর্ষ বৈঠক থেকে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে স্বল্পমেয়াদি কোনো পদক্ষেপ না থাকায় হতাশা আরও বেড়েছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। এমনটা জানিয়েছেন বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস কর্মকর্তারা।
অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার দিনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৫৪ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৭৮১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এর মাধ্যমে টানা তিন কার্যদিবস শেয়ারবাজারে ঢালাও দরপতন হলো। এই তিন দিনেই ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমলো ১৪০ পয়েন্ট। এতে ২০২০ সালের ২৪ আগস্টের পর সূচকটি সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে গেছে। ২০২০ সালের ২৪ আগস্ট সূচকটি ৪ হাজার ৭৬২ পয়েন্টে ছিল।
প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি বড় পতন হয়েছে অন্য দুই সূচকের। এর মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২০ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৭৭০ পয়েন্টে নেমে গেছে।
সবকটি মূল্যসূচক কমলেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। তবে লেনদেন ৩০০ কোটি টাকার নিচে রয়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ২৯৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২৯৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।
এ লেনদেনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে বিচ হ্যাচারির শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ২১ কোটি ৬৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা এনআরবি ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকার। ৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- এবি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, ব্র্যাক ব্যাংক, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, উত্তরা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক এবং ফাইন ফুডস।
অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৩৭ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২০৫ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৭টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৫১টির এবং ১৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১০ কোটি ২৯ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১১ কোটি ২২ লাখ টাকা।
বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম গত বছরের এপ্রিলে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আর কোনো আইপিও অনুমোদন দেননি। আর ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর বিএসইসির দায়িত্ব নেওয়া খন্দকার রাশেদ মাকসুদের কমিশনও গত ৯ মাসে কোনো আইপিও অনুমোদন করেনি। ফলে দীর্ঘ এ সময় ধরে পুঁজিবাজারে বন্ধ রয়েছে পুঁজির জোগান। পুঁজির জোগান না দিলেও এ সময়ে ১৫টির বেশি কোম্পানির আইপিও আবেদন বাতিল করা হয়েছে বলে বিএসইসি ও ইস্যু ম্যানেজার প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে। দীর্ঘ এ সময় ধরে আইপিও অনুমোদন না হওয়ায় পুঁজিবাজারে স্বাভাবিকতা ব্যাহত হয়েছে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
খন্দকার রাশেদ মাকসুদ কমিশন গত বছরের ১৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে বাজার মূলধন কমার পাশাপাশি সূচকও কমেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। মঙ্গলবার পর্যন্ত ডিএসইর বাজার মূলধন ৪৫ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা কমে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৫৫ হাজার ৩৬০ কোটি টাকায়। গত ১৮ আগস্ট বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ১ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। এদিকে গত ১৮ আগস্ট ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ছিল ৫ হাজার ৭৭৮ পয়েন্ট, যা ৯০৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮৭৪ পয়েন্টে। বাজার মূলধন ও সূচক কমার পাশাপাশি কমেছে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণও।