■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
রাজধানীর নীলক্ষেত এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
রোববার দিবাগত রাত ১২টার পরেও সেখানে দুই পক্ষের অবস্থান ও উত্তেজনা চলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে। তবে পরিস্থিতি তখনো শান্ত হয়নি।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি ৭ কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে সভা আহ্বান করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান।
আগামীকাল ২৭ জানুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয়ের পাশের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সভায় অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
এর আগে পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলনরত সাত কলেজের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ করে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে মিছিল নিয়ে আসেন। তাঁরা নীলক্ষেত মোড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনে অবস্থান নেন।
রোববার রাত ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে ঢাকা কলেজের সামনে থেকে মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনে অবস্থান নেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশমুখে স্যার এ এফ রহমান হলের সামনে ঢাবি শিক্ষার্থীরা লাঠি নিয়ে অবস্থান নেন। এ সময় দুপক্ষ ঢিল মারতে থাকেন। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়।
ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন। তবে দুপক্ষের উত্তেজনাময় এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তারা কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেন্ড ছুড়েছে।
এক পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে কয়েক শ শিক্ষার্থী বেরিয়ে এসে তাঁদের ধাওয়া দেন। এতে নীলক্ষেত মোড় থেকে কিছুটা সরে যান সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে তাঁরা আবার একজোট হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেন। পাল্টাপাল্টি এই ধাওয়ার মধ্যে রাত ১২টার পর পুলিশ মাঝে অবস্থান নিয়ে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এরপরেও দুই পক্ষের শিক্ষার্থীরা দুই দিকে অবস্থান নিয়ে আছেন।
পুরান ঢাকার তাঁতিবাজার মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে রাজধানীর কবি নজরুল সরকারি কলেজ এবং সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা।
রোববার রাত ৮টার দিকে তাঁতিবাজার মোড়ে দুই প্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষার্থী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এতে আশেপাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘মানি না মানবো না, স্বৈরাচারী আচরণ, প্রো ভিসি তুই স্বৈরাচার এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়’, সাত কলেজের একশন, ডাইরেক্ট একশনসহ নানান স্লোগানে মিছিল করেন।
এর আগে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ঢাকা কলেজের সামনে জড়ো হন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এরপর সেখানে কিছু সময় থেকে সরে এসে সায়েন্স ল্যাব মোড়ে অবস্থান নেন তাঁরা। এতে সায়েন্স ল্যাব, নীলক্ষেত মোড়, এলিফ্যান্ট রোডসহ আশপাশে সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, পাঁচ দফা দাবি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনা করতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমেদ সাত কলেজের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে অপমান করেন। এর প্রতিবাদে তাঁরা সড়ক অবরোধ করেছেন। তাঁরা জানান, তাঁদের পাঁচ দফা দাবি মেনে নিতে হবে এবং সহ–উপাচার্যকে তাঁর আচরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে হবে।
তারা আরও অভিযোগ করে বলেন, এ বিষয়ে ২১ দিন আগে তাকে স্মারকলিপি দেওয়া হলেও সেটি পড়েননি। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের চিনেন না বলেই তিনি আক্রমণমূলক ব্যবহার করেছেন। তাই তার অশোভন আচরণের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয়েছে।
এছাড়া শিক্ষার্থী প্রতিনিধি আব্দুর রহমান অশোভন আচরণের জন্য ঢাবি প্রো-ভিসিকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে ৫ দফা দাবির কথা জানান।
নয়ন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে আমরা বলেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধীনে আগের নিয়মে ভর্তি না করে নতুনভাবে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থী ধারণক্ষমতার ওপর ভর্তি করানো হোক। কিন্তু ঢাবি আগের নিয়মেই ভর্তি করাচ্ছে। গত ৫ জানুয়ারি আমরা একটি স্বারকলিপি জমা দিয়েছিলাম। সেটির আপডেট জানতে গেলে ঢাবির প্রো-ভিসি মামুন আহমেদ আমাদের সঙ্গে বাজে আচরণ করে। এই আচরণের জন্য তাকে ক্ষমা চাইতে হবে।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মুহাম্মদ রাকিব বলেন, শিক্ষার্থীরা কিছুদিন আগেও তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন। রোববার বিকেলেও তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য অধ্যাপক মামুনের সঙ্গে দেখা করে দাবিগুলোর কথা জানান। কিন্তু তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। তাঁদের বলেন, ‘তোমরা কারা?’ এটি শিক্ষার্থীদের আত্মসম্মানে আঘাত করে। তাই তাঁরা সেখান থেকে বের হয়ে এসে সন্ধ্যায় সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ করেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের সহ–উপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমেদ বলেন, ‘তারা এসেছিল আমার সঙ্গে কথা বলতে। তখন আমি তাদের বলি, তোমরা সবাই না এসে দুজন আসো। কিন্তু অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী ধাক্কাধাক্কি করে ভেতরে ঢুকে যায়। ঘটনা এতটুকুই। সেখানে তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের খারাপ আচরণ করা হয়নি।’ তিনি জানান, শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা বিষয়ে সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় সাত কলেজের বিষয়ে যে কমিটি আছে, তাদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে।
দাবিগুলো হচ্ছে—
১. ২০২৪-২৫ সেশন থেকেই সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় অযৌক্তিক কোটা পদ্ধতি বাতিল করতে হবে।
২. সাত কলেজের শ্রেণীকক্ষের ধারণক্ষমতার বাইরে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো যাবে না।
৩. শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে হবে।
৪. সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষায়-নেগেটিভ মার্ক যুক্ত করতে হবে।
৫. সাত কলেজের ভর্তি ফির স্বচ্ছতা নিশ্চিতে, মন্ত্রণালয় গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে ঢাবি ব্যতীত নতুন একটি একাউন্টে ভর্তি ফির টাকা জমা রাখতে হবে।