■ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ■
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আবাসিক হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান। শুক্রবার (৮ আগস্ট) দিবাগত রাত ২টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিনি এ কথা জানান।
এরপর রাত দেড়টার দিকে উপাচার্য বেরিয়ে এলে নিজেদের দাবি পেশ করেন শিক্ষার্থীরা।
এসময় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপাচার্য বলেন, “আমরা ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে ১৭ জুলাইয়ের সেই অবস্থানে আছি। তবে ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে হলগুলোতে ছাত্রসংগঠনগুলো আচরণবিধি অনুসরণ করছে কি না তা তোমাদের সহযোগিতা ও পরামর্শ ও প্রয়োজন।”
এসময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের দীর্ঘক্ষণ বাকবিতণ্ডা হয়। পরে রাত পৌনে ৩টার দিকে হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন উপাচার্য।
এসময় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) সায়মা হক বিদিশা, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) মামুন আহমেদ, প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমদ, প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন ও শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ ফারুক শাহ উপস্থিত ছিলেন।
তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তার এই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে হল রাজনীতির সম্পূর্ণ অবসান দাবি করেন।
শিক্ষার্থীরা ৬ দফা দাবি ঘোষণা করেন। দাবিগুলো হচ্ছে- কেন কমিটি দেওয়া হলো উপাচার্যকে জবাব দিতে হবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছাত্রদল, শিবির, বাগছাস, বামসহ হলে এক্সিসটিং গুপ্ত কমিটি বিলুপ্ত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হল একাডেমিক এরিয়ায় রাজনীতির সকল কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করে ছাত্ররাজনীতির পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা দিতে হবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব হল কমিটি বিলুপ্ত করতে হবে। হল প্রভোস্টদের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে হবে। দ্রুত ডাকসু বাস্তবায়ন করতে হবে।
এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রদলের হল ইউনিটসমূহের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার দুপুর থেকেই সরগরম হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক ও হল পর্যায়ে সকল ধরনের ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার পরও ছাত্রদল কমিটি ঘোষণা করায় বিকেল থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীরা। বিকেল থেকে চলমান বিক্ষোভ রাত বাড়ার সাথে সাথে তীব্র হতে থাকে। রাত ১২টার পর সবগুলো হল থেকে শিক্ষার্থীরা টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেন— ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, হল পলিটিক্স নো মোর’। পরবর্তীতে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়া থেকে মিছিল নিয়ে টিএসসিতে এসে জড়ো হন তারা।
বিক্ষোভে শেখ মুজিবুর রহমান হল, মুহসীন হল, বিজয় ৭১ হল, এ এফ রহমান হলসহ বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। রোকেয়া হলের ছাত্রীরা গেটের তালা ভেঙে বাইরে বের হয়ে এসে বিক্ষোভ করেন।
এর আগে রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীরা হলভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি এবং ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটি অবিলম্বে বিলুপ্ত করার দাবি জানান। তারা হল প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি দেন– রাত সাড়ে ১২টার মধ্যে হল প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত না নিলে রোকেয়া হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা পুনরায় তালা ভেঙে রাস্তায় নামবে। যার পরিপ্রেক্ষিতে তারা হলের গেটের তালা ভেঙে বের হয়ে এসে বিক্ষোভ করেন।
মেয়েদের অন্যান্য আবাসিক হলেও একই দাবিতে বিক্ষোভ করা হয়। শিক্ষার্থীরা হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের জন্য লিখিত আবেদন জমা দেন হল প্রশাসনের কাছে।
মাস্টারদা সূর্য সেন হলে শিবির–ছাত্রদলের দেওয়া পানির ফিল্টার ভেঙে ফেলা হয়। সেখানকার শিক্ষার্থীরাও হলে রাজনীতির বিরুদ্ধে স্লোগান দেন।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব আজিজুল হক ও হুসাইন রিয়াদ পদত্যাগ করেন। আজিজুল হক বলেন, যে কোনো ধরনের হল রাজনীতির বিরুদ্ধে আমার অবস্থান সব সময়ের জন্য বলবৎ থাকবে।
তিনি অভিযোগ করেন, বাগছাসে ব্যক্তিগত সম্পর্কনির্ভর রাজনীতি প্রাধান্য পাচ্ছে এবং তিনি আর কোনো ছাত্র সংগঠনের অধীনে রাজনীতি করতে আগ্রহী নন।