■ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ■
বোরকা ও হিজাব পরার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকায় এক নারী শিক্ষার্থীর গায়ে থুতু নিক্ষেপ ও শারীরিকভাবে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) এ ঘটনার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) ও বিভিন্ন হল সংসদের নেতাকর্মীরা।
প্রক্টর অফিসে অভিযোগ জমা দেওয়া শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) সদস্য সাবিকুন্নাহার তামান্না সাংবাদিকদের বলেন, ডাকসু-হল সংসদ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হলেও প্রশাসন থেকে তাৎক্ষণিক কোনো উত্তর পাইনি। আমাদের আজ লিখিত অভিযোগ দিতে আসতে হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা সেই এলাকা পরিদর্শন করে সুস্পষ্ট কোনো সিসিটিভির সন্ধান পাইনি। এমন একটা এরিয়া এবং সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এরকম একটা জায়গা অরক্ষিত এবং সিসিটিভি ফুটেজের আওতার বাইরে।
তিনি বলেন, প্রক্টর অফিস আমাদের থেকে দুদিন সময় চেয়েছে। একজন ভুক্তভোগীর জন্য দুইদিন সময়টা অনেক বেশি। ভুক্তভুগী এতটাই ট্রমাটাইজ যে সে এখনও নরমালি কথা বলতে পারছে না। একটা মানুষ কতটা বিদ্বেষ থেকে থুতু নিক্ষেপ করতে পারে– সেটা কল্পনা করাটাও দুরূহ ব্যাপার। সে শুধু থুতু নিক্ষেপ করে এবং গালিগালাজ করে ক্ষান্ত হয়নি, সে তার হাত ধরে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার মতো ঘটনাও ঘটিয়েছে।
সাবিকুন্নাহার তামান্না হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এটার সমাধান যদি না আসে এটা ন্যাশনাল ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে। এটা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াবে এবং আমরা আশা করছি প্রশাসন অবশ্যই এই ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন এবং কোনো ধরনের সহিংসতার ঘটনা পর্যন্ত যাওয়ার রাস্তা তারা নিশ্চয় তৈরি করবেন না।
হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে ডাকসুর এই সদস্য বলেন, এই সমাধান যদি না হয় তাহলে এটা জাতীয় ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে। এটা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াবে এবং আমরা আশা করছি প্রশাসন অবশ্যই এই ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন। কোনো ধরনের সহিংসতার ঘটনা পর্যন্ত যাওয়ার রাস্তা তারা নিশ্চয় তৈরি করবেন না।
এর আগে, গতকাল নাফিসা সামিহা মায়িশা নামের ওই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে লেখেন, ক্লাস শেষে কার্জন থেকে ফিরছিলাম। প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ওই দিকের রাস্তা দিয়ে আসছিলাম। হঠাৎ করেই একজন আপু আমার দিকে থুতু নিক্ষেপ করে বিশ্রী ভাষায় বলে উঠলেন, “আরে তুই ওইখানকার মেয়ে না। সব পাকিস্তানি। কোথা থেকে মুখ পুড়িয়েছিস যে মুখ ঢেকে রেখেছিস।”
তিনি আরও লেখেন, “খপ করে হাত ধরে বলল, হাত কি দেখতে এত খারাপ যে ঢেকে রেখেছিস? আগুনে পুড়েছে নাকি? দেখি দেখি। আর অনেক অনেক বিশ্রী গালি তো আছেই। আমি যে কিছু বলব, মুখ দিয়ে কিছু বের হচ্ছে না, শুধু চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল। অনেক কষ্টে হাত দুটো ছাড়িয়ে দৌড়ে হলে এসেছি। এখনো মনে হচ্ছে গালিগুলো কানে ভাসছে।”

