দুবাইয়ে আবাসন খাতে বাংলাদেশিদের ৬২১ বাড়ি

:: দুবাই প্রতিনিধি ::

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের আবাসন খাতে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ধনাঢ্য ব্যক্তিরা। তাদের তালিকায় ৩৯৪ বাংলাদেশির ২ হাজার ৬৩৬ কোটি টাকা মূল্যের ৬৪১টি সম্পত্তি রয়েছে দেশটিতে। 

সম্পত্তির মালিকের এ তালিকায় আরও রয়েছেন বিভিন্ন দেশের বড় ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। এমনকি বৈশ্বিক নিষেধাজ্ঞায় থাকা ব্যক্তি, অর্থ পাচারকারী ও অপরাধীরাও সেখানে বিপুল সম্পদের মালিক। 

একটি বৈশ্বিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা প্রকল্প মঙ্গলবার এ তালিকা প্রকাশ করেছে। এতে ভারতের ধনকুবের মুকেশ আম্বানির পাশাপাশি রয়েছেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির পরিবারের সদস্যরা। 

তালিকায় দেখা গেছে, দুবাইয়ে সবচেয়ে বেশি সম্পদ রয়েছে ভারতীয়দের। সেখানে ৩৫ হাজার প্রপার্টির মালিক ২৯ হাজার ৭০০ ভারতীয়। এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন পাকিস্তানিরা। দেশটির ১৭ হাজার নাগরিকের দুবাইয়ে ২৩ হাজার প্রপার্টি রয়েছে। এর মূল্য ১ হাজার ২৫০ কোটি ডলার।

বাংলাদেশি নাগরিকদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। তবে সংবাদে যে মানচিত্র প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে বাংলাদেশিদের সংখ্যা, সম্পদের পরিমাণ এবং দাম রয়েছে। তাদের নিয়ে পৃথক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারে একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। 

‘দুবাই আনলকড’ (Dubai Unlocked) শীর্ষক এ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা প্রকল্পের সমন্বয় করেছে অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট (ওসিসিআরপি) [Organized Crime and Corruption Reporting Project-OCCRP] ও নরওয়ের সংবাদমাধ্যম ই-টোয়েন্টিফোর। এ প্রকল্পে অংশ নিয়েছে ৫৮টি দেশের ৭৪টি সংবাদমাধ্যম। প্রতিবেদনটি ওসিসিআরপির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

দুবাইয়ের ভূমি দপ্তরসহ কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের ফাঁস হওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এ অনুসন্ধান চালানো হয়েছে। এতে বিশেষ করে ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বিদেশিদের সম্পদের মালিকানার বিস্তারিত চিত্র উঠে আসে।

এসব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে ওয়াশিংটনভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজ। প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ও সংঘাত নিয়ে গবেষণা করে থাকে। পরে এসব তথ্য-উপাত্ত ই-টোয়েন্টিফোর এবং ওসিসিআরপির সঙ্গে ভাগাভাগি করে প্রতিষ্ঠানটি।

এই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় অংশ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী ফোর্বসও। সব মিলিয়ে ফোর্বস ২২ ধনকুবের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন ৬০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের ৭৬টি সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছে। বিশ্বের চারটি মহাদেশের ১০টি দেশ থেকে এসেছেন তারা।

ফোর্বসের প্রতিবেদনে শুরুতেই রয়েছে ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানির নাম। দুবাইয়ের পাম জুমেইরাহ কৃত্রিম দ্বীপে তাঁর আনুমানিক ২৪ কোটি ডলারের সম্পদ রয়েছে। দেশটির আরেক নাগরিক এম এ ইউসুফ আলি ও তাঁর পরিবারের পাম জুমেইরাহ, দুবাই মেরিনা ও ইন্টারন্যাশনাল সিটিতে ৭ কোটি ডলার মূল্যের সম্পদ রয়েছে।

যুক্তরাজ্য, মিসর, সাইপ্রাসের নাগরিকদেরও সম্পদ রয়েছে দুবাইয়ে। দুবাইয়ে গোপনে সম্পদ গড়া ব্যক্তিদের এ তালিকায় রয়েছে দারিদ্র্যপীড়িত ও যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের অন্তত সাত নাগরিকের নামও। তাদের মধ্যে ছয়জন রাজনৈতিক ও একজন নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ব্যক্তি। 

পাকিস্তানের দৈনিক ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফাঁস হওয়া নথি অনুযায়ী, দুবাইয়ে ১৭ হাজার পাকিস্তানি সম্পদের মালিক। তবে তথ্য-উপাত্ত ও অতিরিক্ত সূত্র ব্যবহার করে এ সংখ্যা ২২ হাজারের মতো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

এ তালিকায় নাম রয়েছে প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি, বাখতাওয়ার ভুট্টো জারদারি ও আসিফা ভুট্টো জারদারি; স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভির স্ত্রী মিসেস আশরাফ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ছেলে হুসাইন নওয়াজ এবং আলোচিত সাবেক সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়ার ছেলে সাদ সিদ্দিক বাজওয়ারের।

দেশটির সাবেক সেনাশাসক পারভেজ মোশাররফসহ বহু সাবেক জেনারেলের সম্পদ থাকার তথ্য তুলে ধরেছে ডন।

এ ছাড়া তালিকায় চীন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের পাশাপাশি ইয়েমেন, নাইজেরিয়া ও কেনিয়ার মতো দেশের নাগরিকরাও রয়েছেন। আরও রয়েছেন নিষেধাজ্ঞার অধীনে থাকা মিয়ানমারের একজন অস্ত্র ব্যবসায়ী।

এদিকে গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত এক তালিকায় দেখা গেছে, আমিরাতে বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন নিবন্ধিত কোম্পানির সংখ্যা বাড়ছে। ওই বছরের কেবল প্রথমার্ধেই (জানুয়ারি থেকে জুন) দুবাই চেম্বার অব কমার্সে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সদস্যপদ নেওয়ার হার ৪৭ শতাংশ বেড়েছে।

ছয় মাসে বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন ১ হাজার ৪৪টি কোম্পানি দুবাই চেম্বারের সদস্যপদ নিয়েছে। তাতে দুবাই চেম্বারের সদস্যপদ পাওয়া বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন কোম্পানির মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৯৭৫টি। দুবাইয়ে বহু বাংলাদেশির অবৈধ সম্পদ রয়েছে বলে মনে করা হয়। 

এই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় অংশ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী ফোর্বসও। সব মিলিয়ে ফোর্বস ২২ ধনকুবের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন ৬০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের ৭৬টি সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছে। বিশ্বের চারটি মহাদেশের ১০টি দেশ থেকে এসেছেন তারা।

ছয় মাসে বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন ১ হাজার ৪৪টি কোম্পানি দুবাই চেম্বারের সদস্যপদ নিয়েছে। তাতে দুবাই চেম্বারের সদস্যপদ পাওয়া বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন কোম্পানির মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৯৭৫টি। দুবাইয়ে বহু বাংলাদেশির অবৈধ সম্পদ রয়েছে বলে মনে করা হয়।

দুবাইয়ে বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনকুবের ও তাদের সম্পদ

১. ভারতীয় নাগরিক মুকেশ আম্বানির রয়েছে ১১ হাজার ২০ কোটি ডলারের সম্পদ
২. ভারতীয় নাগরিক এম এ ইউসুফ আলী ও তার পরিবারের সম্পদের পরিমাণ ৭৮০ কোটি ডলার
৩. ভারতীয় শামশীর ভায়ালিলের রয়েছে ৩৫০ কোটি ডলারের সম্পদ
৪. ওমানের নাগরিক সুহাইল বাহওয়ানের আছে ১৯০ কোটি ডলারের সম্পদ
৫. রাশিয়ার নাগরিক আন্দ্রেই মলচানভ ও তার পরিবারের সম্পদের পরিমাণ ১৩০ কোটি ডলার
৬. সাইপ্রাসের নাগরিক বিনোদ আদানির রয়েছে ২ হাজার ২২০ কোটি ডলারের সম্পদ
৭. কানাডার নাগরিক চ্যাংপেং ঝাওয়ের আছে ৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের সম্পদ
৮. যুক্তরাজ্যের নাগরিক সকেট বর্মনের সম্পদের পরিমাণ ১৫০ কোটি ডলার
৯. সাইপ্রাসের নাগরিক ইগোর মাকারোভের আছে ২১০ কোটি ডলারের সম্পদ
১০. মিসরের নাগরিক নগিব সাবিরিস ও তার পরিবারের সম্পদের পরিমাণ ৩৮০ কোটি ডলার

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *