ডাকসুর একমাত্র নারী ভিপি মাহফুজা খানম মারা গেছেন

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■

ডাকসুর একমাত্র নারী ভিপি, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সমাজসেবক, নারীনেত্রী অধ্যাপক মাহফুজা খানম মারা গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

মঙ্গলবার সকালে অসুস্থবোধ করায় তাকে পান্থপথের হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তিনি ঢাকার ইন্দিরা রোডে স্বামী সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের সঙ্গে থাকতেন।

পরিবারের সদস্যরা জানান, মাহফুজা খানম সকালে শরীরচর্চার জন্য বাসা থেকে বের হন। পথে অসুস্থ বোধ করলে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

শফিক আহমেদের সহযোগী আইনজীবী সিফাত মাহমুদ জানান, সকালে মাহফুজা খানম অসুস্থবোধ করছিলেন। তখন বাসা থেকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মাহফুজা-শফিক দম্পতির দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। বড় ছেলে ও মেয়ে পেশায় চিকিৎসক। ছোট ছেলে মাহবুব শফিক একজন আইনজীবী।

জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন খেলাঘরের চেয়ারম্যান মাহফুজা খানমের মৃত্যুতে কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের ফেসবুক পেজে আজ বিকেলে জানানো হয়, আগামীকাল বুধবার (১৩ আগস্ট) সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন ও রাষ্ট্রীয় গার্ড অব অনার দেওয়া হবে মাহফুজা খানমকে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে। আজ বাদ আসর তাঁর প্রথম জানাজা তেজগাঁও কলেজ ছাত্রাবাস মসজিদে (ইন্দিরা রোডের বাসভবনের পাশে) অনুষ্ঠিত হয়।

মাহফুজা খানমের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। সংস্থার চেয়ারপারসন জেড আই খান পান্না স্বাক্ষরিত শোকবার্তায় বলা হয়, নারী শিক্ষা ও নারী ক্ষমতায়নে তাঁর (মাহফুজা খানমের) অবদান অতুলনীয়। তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রজ্বলিত চেতনায় ভরপুর ছিলেন, যা তাঁর জীবন ও কর্মে পরিলক্ষিত হয়েছে। তিনি মানবাধিকার, নারী ক্ষমতায়ন ও সমাজ উন্নয়নে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গেও নিবিড়ভাবে যুক্ত ছিলেন। তাঁর ত্যাগ, কর্ম ও ব্যক্তিত্ব দেশের শিক্ষার উন্নয়ন ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে থাকবে। তাঁর মৃত্যুতে জাতি একজন শিক্ষাবিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সমাজসেবককে হারিয়েছে।

মাহফুজা খানম ১৯৪৬ সালের ১৪ এপ্রিল কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৬-৬৭ ডাকসু নির্বাচনে ছাত্র ইউনিয়নের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি ভিপি নির্বাচিত হন। এখন পর্যন্ত ডাকসুর একমাত্র নারী ভিপি তিনি।

মাহফুজা খানম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১৯৬৬ সালে স্নাতক ও পরের বছর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ১৯৬৮ সালে লন্ডনের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তি পেলেও রাজনৈতিক কারণে তখন তাঁকে পাসপোর্ট দেয়নি পাকিস্তান সরকার।

কর্মজীবনে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দীর্ঘদিন বিভিন্ন সরকারি কলেজে শিক্ষকতায় নিযুক্ত থাকা অধ্যাপক মাহফুজা খানম এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্যও ছিলেন।

মাহফুজা খানম ১৯৬৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি প্রখ্যাত আইনজীবী ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদকে বিয়ে করেন। তাঁদের ঘরে দুই ছেলে ও এক মেয়েসন্তান রয়েছেন। শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ২০২১ সালে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক লাভ করেন তিনি।

বিভিন্ন সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করা মাহফুজা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্যও ছিলেন তিনি।

মাহফুজা বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিতে সাধারণ সম্পাদক এবং জাতীয় শিশু কিশোর সংগঠন খেলাঘর আসরের চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করেছেন।

শিক্ষায় বিশেষ অবদান রাখায় ২০২১ সালে একুশে পদক পান অধ্যাপক মাহফুজা। তার মৃত্যুতে শোক ও শ্রদ্ধা জানিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *