■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা সংশোধন করে নতুন তালিকায় ‘শাপলা কলি’ যুক্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) নির্বাচন কমিশন (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) প্রকাশিত তালিকায় নতুন প্রতীকটি ১০২ নম্বরে যুক্ত করা হয়। এ বিষয়ে প্রকাশিত গেজেটে স্বাক্ষর করেছেন ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।
এর আগে ১১৫টি প্রতীকের তালিকা করেছিল ইসি। সংশোধিত তালিকায় ১১৯টি প্রতীক রাখা হয়েছে। এ তালিকার ১০২ নম্বরে ‘শাপলা কলি’ যুক্ত করেছে ইসি।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘১৯৭২-এর সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৪-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে নির্বাচন কমিশন, ‘‘নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮’’-এর নিম্নরূপ অধিকতর সংশোধন করিল।’
এতে আরও বলা হয়, ‘উপরিউক্ত বিধিমালার বিধি ৯-এর উপবিধি (১)-এর পরিবর্তে নিম্নরূপ উপবিধি (১) প্রতিস্থাপিত হইবে। এই বিধির অন্যান্য বিধান সাপেক্ষে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অনুচ্ছেদ ২০-এর দফা (১)-এর অধীন স্থগিতকৃত প্রতীক ব্যতীত নিম্নবর্ণিত প্রতীকগুলো হইতে প্রাপ্যতা সাপেক্ষে যেকোনো একটি প্রতীক বরাদ্দ করা যাইবে।’
শাপলা আর শাপলা কলির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। কারোর চাহিদা বিবেচনায় শাপলা কলি যুক্ত করা হয়নি বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
তিনি বলেন, কোনো দলের বিবেচনায় নয়, প্রতীক নিয়ে বিরূপ মতামত আসায় শাপলা কলি যুক্ত করেছে কমিশন নির্বাচন। কিছু কিছু প্রতীক নিয়ে বিরূপ মন্তব্য আসায় বিধিমালা সংশোধন করা হয়েছে। এই বিবেচনায় আগের যে ১১৫টি প্রতীক ছিল সেখান থেকে ১৬টি প্রতীক বাদ দিয়ে নতুন করে কিছু প্রতীক তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। এবার সংশোধিত তালিকায় ১১৯টি প্রতীক শিডিউলভুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, শাপলা কলির সাথে আরও কিছু নতুন প্রতীক যুক্ত করা হয়েছে। এখানে নতুন করে বিতর্কের তো যৌক্তিক কোনো কারণ দেখছি না।
এর আগে, নির্বাচন কমিশনের প্রতীকের তালিকা সংশোধন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে ‘শাপলা কলি’ অন্তর্ভুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদের সই করা এ-সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
এদিকে, নির্বাচন কমিশনের প্রতীক বরাদ্দ সিদ্ধান্তকে ‘প্রতারণামূলক’ আখ্যা দিয়েছেন এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন। এদিকে দলটির যুগ্ম সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম মুসা বলেছেন, রাজনৈতিক দলের জন্য ‘শাপলা কলি’সহ নতুন চারটি প্রতীক ইসি সংরক্ষণ করলেও এনসিপির শাপলাই চাই।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে সামান্তা শারমিন বলেন, নির্বাচন কমিশন ‘শাপলার কলি’ প্রতীক দিয়ে এনসিপির সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এ প্রতারণামূলক সিদ্ধান্ত থেকে নির্বাচন কমিশনকে সরে আসতে হবে। এমন একটা পরিবেশ দাঁড় করানো হচ্ছে, যেখানে আমরা মানসিক চাপে পড়ছি। তোমরা এখনো বাচ্চা—এই মনস্তাত্ত্বিক চাপ দিয়ে কোনো লাভ হবে না। কলি যেহেতু দিয়েছে, শাপলাও দেওয়া সম্ভব।
এদিকে গণমাধ্যমকে দলটির যুগ্ম সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম মুসা বলেন, এনসিপি শাপলাই চাই। আমরা যখন শাপলা চেয়েছি, তখন নির্বাচন কমিশন বলেছে— ‘তালিকায় নাই তাই, দেওয়া যাবে না’। এখন তারা ‘শাপলা কলি’ কীভাবে প্রতীক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে, তা স্পষ্ট করতে হবে।
এদিন চারটি নতুন প্রতীক অন্তর্ভুক্ত করে গেজেট প্রকাশের পরপর এনসিপি নেতা মুসা এ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
প্রতীক হিসেবে এনসিপিকে ‘শাপলা কলি’ বরাদ্দ দেওয়া হলে তা মেনে নেবেন কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব ও মিডিয়া সেলের সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন বলেন, নির্বাচন কমিশন কোন ক্রাইটেরিয়ায় ‘শাপলা কলি’কে প্রতীক হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করেছে তা আমাদের কাছে পরিষ্কার করতে হবে। আমরা নতুন প্রতীকগুলো নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। এ বিষয়ে এখনও আমরা আলোচনা করিনি।
সংশোধিত তালিকায় যেসব প্রতীক রাখা হয়েছে—
আপেল, আনারস, আম, আলমারি, ঈগল, উদীয়মান সূর্য, একতারা, কাঁচি, কবুতর, কলম, কলস, কলার ছড়ি, কাঁঠাল, কাপ-পিরিচ, কাস্তে, কেটলি, কুমির, কম্পিউটার, কুড়াল, কুলা, কুঁড়েঘর, কোদাল, খেজুরগাছ, গরুর গাড়ি, গাভি, গামছা, গোলাপ ফুল, ঘণ্টা, ঘুড়ি, ঘোড়া, চাকা, চাবি, চিংড়ি, চেয়ার, চশমা, ছড়ি, ছাতা, জগ, জাহাজ, টিউবওয়েল, টেবিল, টেবিল ঘড়ি, ট্রাক, টেলিফোন ও টেলিভিশন।
আরও রয়েছে ডাব, ঢেঁকি, তারা, থালা, দাঁড়িপাল্লা, দালান, দেওয়াল ঘড়ি, দোয়াত কলম, দোলনা, ধানের শীষ, নোঙর, নৌকা (স্থগিত), প্রজাপতি, ফুটবল, ফুলকপি, ফুলের মালা, বই, বক, বাঘ, বটগাছ, বাইসাইকেল, বালতি, বৈদ্যুতিক পাখা, মই, মগ, মাইক, মোটরগাড়ি (কার), মশাল, ময়ূর, মাছ, মাথাল, মিনার, মোমবাতি, মোবাইল ফোন, মোড়া, মোরগ, রকেট, রিকশা, লিচু, লাঙ্গল, সোনালি আঁশ, সেলাই মেশিন, সোফা, সিংহ, হরিণ, হাত (পাঞ্জা), হাতঘড়ি, হাতপাখা, হাঁস, হাতি, হাতুড়ি, হারিকেন, হুক্কা ও হেলিকপ্টার।
তালিকায় যেসব নতুন প্রতীক যোগ হয়েছে
উট, চিরুনি, টর্চলাইট, টেবিল ল্যাম্প, ট্রাক্টর, ড্রেসিং টেবিল, তালা, দোতলা বাস, পাগড়ি, পানির ট্যাব, পালকি, ফলের ঝুড়ি, বেবি টেক্সি, বৈদ্যুতিক বাল্ব, মোটরসাইকেল, সিঁড়ি, সূর্যমুখী, রেল ইঞ্জিন, শাপলা কলি ও হ্যান্ডশেক।
বাদ পড়া প্রতীক
কলা, খাট, উটপাখি, চার্জার লাইট, টিফিন ক্যারিয়ার, তবলা, তরমুজ, ফ্রিজ, বাঁশি, বেঞ্চ, বেগুন, বেলুন, লাউ, শঙ্খ, স্যুটকেস ও ফুলের টব।
প্রসঙ্গত, দলের নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে শুরু থেকেই শাপলা চেয়ে আসছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। রাজনৈতিক দল হিসেবে দলটির নিবন্ধন আটকে আছে এই ইস্যুতে। প্রতীক চূড়ান্ত হলে দলটিকে নিবন্ধন সনদ দেওয়া হবে। কিন্তু প্রতীক ইস্যুতে দুটি ভিন্ন অবস্থানে অনড় ছিল এনসিপি ও নির্বাচন কমিশন।
প্রজ্ঞাপনে প্রদত্ত প্রতীকগুলো হলো— আনারস, গাভি, টেলিভিশন, বই, রেল ইঞ্জিন, আম, গামছা, ডাব, বক, রিকশা, আলমিরা, গোলাপ ফুল, ড্রেসিং টেবিল, বাঘ, লিচু, ঈগল, ঘণ্টা, ঢেঁকি, বটগাছ, লাঙল, উট, ঘুড়ি, তারা, বাইসাইকেল, শাপলা কলি, উদীয়মান সূর্য, ঘোড়া, তালা, বালতি, সোনালি আঁশ, একতারা, চাকা, থালা, বেবি টেক্সি, সেলাই মেশিন, কাঁচি, চাবি, দাঁড়িপাল্লা, বৈদ্যুতিক পাখা, সোফা, কবুতর, চিরুনি, দালান, বৈদ্যুতিক বাল্ব, সিঁড়ি, কলম, চিংড়ি, দেয়ালঘড়ি, মই, সিংহ, কলস, চেয়ার, দোতলা বাস, মগ, সূর্যমুখী, কলার ছড়ি, কাঁঠাল, চশমা, দোয়াত-কলম, মাইক, হরিণ, কাপ-পিরিচ, ছড়ি, দোলনা, মোটরগাড়ি (কার), হাত (পাঞ্জা), কাস্তে, জগ, নোঙর, ছাতা, ধানের শীষ, মশাল, হাতঘড়ি, কেটলি, জাহাজ, নৌকা (স্থগিত), ময়ূর, হাতপাখা, হাঁস, কুমির, টর্চলাইট, পাগড়ি, মাছ, হাতি, কম্পিউটার, টিউবওয়েল, পানির ট্যাপ, মাথাল, হাতুড়ি, কুড়াল, টেবিল, পালকি, মিনার, হারিকেন, কুলা, টেবিল, প্রজাপতি, মোমবাতি, হ্যান্ডশেক, কুঁড়েঘর, টেবিলঘড়ি, ফলের ঝুড়ি, মোটরসাইকেল, মোবাইল ফোন, হুঁকা, কোদাল, খেজুরগাছ, ট্রাক, ফুটবল, মোড়া, হেলিকপ্টার, ট্রাক্টর, ফুলকপি ও মোরগ।
এদিকে দলীয় প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা’ই চেয়ে যাচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গত জুনে নিবন্ধন আবেদনের সময় শাপলার পাশাপাশি কলম ও মোবাইল ফোন চেয়েছিল দলটি। পরবর্তী সময়ে দুই প্রতীক থেকে সরে এসে কেবল শাপলাতেই জোর দেয় এনসিপি। তবে রাজনৈতিক দলের জন্য তৈরি করা প্রতীক তালিকায় শাপলা না থাকায় এনসিপির আবেদন বারবারই নাকচ করে দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
তারও আগে এনসিপির আগে মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্যও চেয়েছিল শাপলা প্রতীক, কিন্তু সে আবেদনও খারিজ করে দিয়েছিল ইসি। রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পাওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকলেও প্রতীক নিয়ে ইসির সঙ্গে গত কয়েক মাস ধরেই টানাপোড়েন চলছে এনসিপির। এ নিয়ে দফায় দফায় চলে চিঠি চালাচালি, সাক্ষাৎ-বৈঠক।
সবশেষ গত ৭ অক্টোবর আবারো শাপলা চেয়ে নির্বাচন কমিশনকে প্রতীকের সাতটি নমুনাচিত্র পাঠায় এনসিপি। তবে এটিও আমলে নেয় না ইসি। পাল্টা চিঠি দিয়ে কমিশনের সাফ বক্তব্য, বিধিমালার তালিকা থেকেই কোনো একটিকে বেছে নিতে হবে প্রতীক হিসেবে। বলা হয়েছিল, জবাব না পেলে নিজেদের সিদ্ধান্তেই প্রতীক বরাদ্দ দেবে কমিশন।
গত ১৯ অক্টোবর প্রতীক পছন্দের শেষ দিন ছিল। তবে সে সময়ও শাপলা ছাড়া অন্য প্রতীক নেবে না বলে জানায় এনসিপি। অবশেষে আজ প্রতীকের তালিকা সংশোধন করে ‘শাপলা কলি’ যুক্ত করে ইসি।
