■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
আগামী ৭ অক্টোবরের মধ্যে ‘শাপলা’ ছাড়া অন্য প্রতীক বেছে নিতে জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নিবন্ধনের প্রাথমিক পর্যালোচনায় এনসিপিকে গ্রহণযোগ্য বিবেচনা করায় এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ইসির সচিব আখতার আহমেদ নতুন দল নিবন্ধন বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্ত জানানোর পরপরই চিঠিটি এনসিপির আহ্বায়কের কাছে পাঠানো হয়। তবে দলটির প্রথম পছন্দের প্রতীক ‘শাপলা’ বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব নয় বলে ইসি জানিয়েছে।
ইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘‘জাতীয় নাগরিক পার্টি নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল, যা প্রাথমিক পর্যালোচনায় গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে। দলটির আবেদনপত্রে পছন্দের প্রতীকের ক্রমানুযায়ী শাপলা, কলম ও মোবাইল উল্লেখ করা হয়েছিল। তবে, নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮ এর বিধি ৯(১) অনুযায়ী প্রার্থীর অনুকূলে বরাদ্দের জন্য নির্ধারিত প্রতীকের তালিকায় ‘শাপলা’ প্রতীকটি বর্তমানে অন্তর্ভুক্ত নেই। এমতাবস্থায়, দলটিকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৯০৮ (১) (খ)-এর বিধান সম্পর্কে অবগত করা হয়। ওই বিধান অনুযায়ী, কোনো দল কর্তৃক মনোনীত সকল প্রার্থীর জন্য নির্ধারিত প্রতীক থেকে পছন্দকৃত যে কোনো একটি প্রতীক বরাদ্দ করা হবে এবং এইভাবে বরাদ্দকৃত প্রতীক দলটির জন্য সংরক্ষিত থাকবে। যদি না দলটি পরবর্তীতে অন্য কোনো প্রতীক লাভে ইচ্ছা প্রকাশ করে।’’
এই প্রেক্ষাপটে, এনসিপিকে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮ এর বিধি ৯(১) অনুযায়ী ইসির তালিকাভুক্ত অব্যবহৃত প্রতীকগুলোর মধ্য থেকে দ্রুত একটি প্রতীক বেছে নিতে বলা হয়েছে।
তবে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী অভিযোগ করেছেন যে, শাপলা প্রতীক বরাদ্দে কোনো আইনি বাধা না থাকা সত্ত্বেও ইসি তাদের জন্য ‘হাস্যকর প্রতীক’ রাখতে চাইছে।
রাজধানীর বাংলামটরের অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মঙ্গলবার রাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ইসির কাছ থেকে নিবন্ধন সংক্রান্ত চিঠি আমরা পেয়েছি। সেখানে আমাদের জন্য আলমিরা, উটপাখি, কাপ-পিরিচ, থালাবাটি প্রতীক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এগুলো খুবই হাস্যকর। ইসি আমাদের সঙ্গে স্বেচ্ছাচারী ও বৈষম্যমূলক আচরণ করছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আগেই জানিয়েছি- এনসিপির শাপলা প্রতীক পেতে কোনো আইনি বাধা নেই। ইসিরও অন্য কোনো চাপ অনুভব করার কথা নয়। গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের দাবি তুলেছিলাম। কিন্তু বর্তমান কমিশন একদলীয় অফিসে পরিণত হয়েছে। তাদের কার্যক্রম সংবিধানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।’
এ সময় তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নিবন্ধন পাওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন বাতিলেরও দাবি জানান।
উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী নতুন দলের জন্য বরাদ্দযোগ্য প্রতীকের সংখ্যা ৫০টি। এর মধ্যে এনসিপিকে যেসব প্রতীক থেকে বেছে নিতে বলা হয়েছে সেগুলো হলো—বেগুন, কলা, বেলুন, লিচু, স্যুটকেস, টিফিন ক্যারিয়ার, আলমিরা, খাট, উটপাখি, ঘুড়ি, কাপ-পিরিচ, চশমা, দালান, চার্জার লাইট, কম্পিউটার, জগ, জাহাজ, টিউবওয়েল, টেবিল, টেবিল ঘড়ি, টেলিফোন, ফ্রিজ, তবলা, বক, মোরগ, কলম, তরমুজ, বাঁশি, লাউ, কলস, চিংড়ি, থালা, বেঞ্চ, দোলনা, প্রজাপতি, ফুটবল, ফুলের টব, মোড়া, বালতি, কলা, বৈদ্যুতিক পাখা, মগ, মাইক, ময়ূর, মোবাইল ফোন, শঙ্খ, সেলাই মেশিন, সোফা, হরিণ, হাঁস ও হেলিকপ্টার।
এনসিপিকে শাপলা প্রতীক দিলে মামলা করব না : মান্না
জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) শাপলা প্রতীক হিসেবে দিলে কোনো মামলা করবেন না বলে অঙ্গীকার করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। স্বৈরশাসক হাসিনাকে উৎখাতের কথা বিবেচনা করে এনসিপির নেতাকর্মীদের প্রতি তিনি দরদি বলেও জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এ কথা জানান মান্না।
মান্না বলেন, আমাকে যদি জাতীয় প্রতীকের কারণে শাপলা না দেওয়া হয়, তাহলে নির্বাচন কমিশন আর কাউকে দিতে পারে না। ওরা (এনসিপি) আমার কাছে এসেছিল। যারা জুলাই অভ্যুত্থান করেছে, তাদের বয়সের কারণে, অভিজ্ঞতার কথা বিবেচনা করে এবং শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ উৎখাতের কথা বিবেচনা করে আমি তাদের প্রতি দরদি। শাপলা প্রতীক যদি তাদের দিয়ে দেয়, আমি একটা অঙ্গীকার করতে পারি আমি কোনো মামলা করব না।’
তার এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এনসিপির অনেক নেতা।
মান্নার ওই পোস্টের স্ক্রিনশট শেয়ার করে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব এস এম সাইফ মোস্তাফিজ লিখেছেন, ‘ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা প্রিয় মাহমুদুর রহমান মান্না ভাই। নির্বাচন কমিশনার সাহেব আর কী কী বাহানা দেবেন? নিজেকে আর বিতর্কিত না করে দ্রুত এনসিপিকে শাপলা মার্কা দিন।’