নতুন ১০ দলের কার্যক্রম অধিকতর তদন্তের নির্দেশ ইসির

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■ 

নির্বাচন কমিশন (ইসি) নতুন ১০টি রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম মাঠ পর্যায়ে পুনঃতদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ জন্য ইসির ১০টি অঞ্চলে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে কোনো অসঙ্গতি পাওয়া না গেলে দলগুলোকে নিবন্ধন প্রদান করা হবে।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, এই দলগুলোর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অস্তিত্ব ও কার্যকারিতার বিষয়ে অধিকতর তদন্ত করার জন্য ফরিদপুর, ঢাকা, রংপুর, কুমিল্লা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, খুলনা ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে রাখা হয়েছে ৩০ জন কর্মকর্তাকে।

ইসির জনবল ব্যবস্থাপনা শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মো. নাজমুল কবীরের সই করা এ সংক্রান্ত চিঠি সংশ্লিষ্টদের ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন এর আগে মাঠ পর্যায়ের কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা কর্মকর্তাগণের দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে মাঠ পর্যায় হতে প্রাপ্ত প্রাথমিক তথ্য ও মতামতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপূর্ণতা, যথাযথ মন্তব্যে ঘাটতি পায়। তাই যাচাই কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ১০টি দলের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অস্তিত্ব ও কার্যকারিতার বিষয়ে অধিকতর তদন্ত করার নির্দেশনা প্রদান করে।

এই দলগুলো হলো- আমজনতার দল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), বাংলাদেশ জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ, জনতার দল, মৌলিক বাংলা, জনতা পার্টি বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি।

নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন আবেদন চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি দিলে ১৪৩টি আবেদন করে। তবে প্রাথমিক বাছাইয়ে কোনো দলই উত্তীর্ণ হতে না পারলে সবগুলো দলকেই ফের সময় দেওয়া হয়। এগুলোর মধ্যে পুন:বাছাই শেষে শর্ত পূরণ করতে না পারায় ১২১টি দলের আবেদন বাতিল করে দেয় ইসি। পরবর্তী ২২ টি দলের কার্যক্রম ও অস্তিত্ব খতিয়ে দেখতে মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করে ইসি। সেই তদন্তের পর আরও সাতটি দলের আবেদন বাতিল করা হয়। আর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও জাতীয় লীগ নামের দু’টি দলকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া একটি দলের বিষয়ে আদালতের রায় পর্যালোচনা ও দু’টো দলের সচিবালয় পর্যায় পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত হয়। আর বাকি দশ দলের মাঠ পর্যায়ে অধিকতর তদন্তের সিদ্ধান্ত হয়।

ইসি সচিব আখতার আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, তদন্ত কার্যক্রমে সবকিছু ইতিবাচক থাকলে সংশ্লিষ্ট দলগুলোকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে দাবী-আপত্তি চেয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। তখন কোনো দাবী আপত্তি এলে শুনানি করে তা নিষ্পত্তি করা হবে। আর দাবী আপত্তি না থাকলে সংশ্লিষ্ট দলগুলোকে দেওয়া হবে নিবন্ধন সনদ।

আইন অনুযায়ী, নিবন্ধন পেতে ইচ্ছুক দলের একটি কেন্দ্রীয় কমিটি, এক তৃতীয় জেলা ও ১০০টি উপজেলা কমিটি এবং প্রতিটি কমিটিতে ২০০ ভোটারের সমর্থনের প্রমাণ থাকতে হয়। এছাড়া কোনো দলের কেউ আগে সংসদ সদস্য থাকলে বা আগের নির্বাচনের পাঁচ শতাংশ ভোট পেলেও নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্যতা হিসেবে ধরে থাকে ইসি। এ প্রধান শর্তগুলো ছাড়াও বেশকিছু নিয়ম কানুন মেনে আবেদন করতে হয়।

নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় দলগুলোর আবেদন পাওয়ার পর কমিশন প্রথমে এগুলো প্রাথমিক বাছাই করে। এরপর প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ দলগুলোর তথ্যাবলী সরেজমিন তদন্ত শেষে বাছাই সম্পন্ন করা হয়। পরবর্তীতে মনোনীত দলগুলোর বিরুদ্ধে কারো কোনো অভিযোগ থাকলে দাবি-আপত্তি চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। সেখানে কোনো আপত্তি এলে শুনানি করে তা নিষ্পত্তি করে কমিশন। আর কোনো আপত্তি না থাকলে সংশ্লিষ্ট দলগুলোকে নিবন্ধন সনদ প্রদান করে সংস্থাটি। নিবন্ধন ছাড়া কোনো দল নিজ প্রতীকে ভোটে প্রার্থী দিতে পারে না।

বর্তমানে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫২টি (আওয়ামী লীগসহ)। নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে নিবন্ধন প্রথা চালু হয়। এ পর্যন্ত ৫৬টি দল ইসির নিবন্ধন পেলেও পরবর্তীতে শর্ত পূরণ, শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থতা এবং আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল হয়। দলগুলো হলো- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা। সস্প্রতি আদালতের আদেশে জামায়াতে ইসলামী ও জাগপা নিবন্ধন ফিরে পেলেও ইসি কেবল জামায়াতের নিবন্ধন ফিরিয়ে দিয়েছে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *