■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক, কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম মারা গেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ শুক্রবার বিকেল ৫টায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।
অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। আজ বিকাল ৫টায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম গত শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাজধানীর ধানমন্ডিতে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশে যাওয়ার পথে গাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে গাড়িচালক একজনের সহায়তায় তাঁকে পার্শ্ববর্তী একটি হাসপাতালে নেন। খবর পেয়ে মাজহারুল ইসলামসহ অন্যরা সেখানে যান। সেখান থেকে তাঁকে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর ‘ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক’ হয়েছে। পরে সেখানে তাঁর হৃদ্যন্ত্রে স্টেন্টিং করা (রিং পরানো) হয়।
শনিবার থেকে অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। অক্সিজেন লেভেল কমতে থাকে, ফুসফুসে পানি জমার কারণে পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে রোববার সন্ধ্যায় লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। প্রায় ৪৮ ঘণ্টা লাইফ সাপোর্টে থাকার পর তাঁর শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছিল।
তবে পরে আবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে আবার লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। আজ বিকেল পাঁচটায় চিকিৎসকেরা লাইফ সাপোর্ট সরিয়ে নিয়ে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন বলে মাজহারুল ইসলাম জানিয়েছেন।
মাজহারুল ইসলাম জানান, সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের মরদেহ আজ বারডেমের হিমঘরে রাখা হবে। আগামীকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় তাঁর মরদেহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে আনা হবে। পরে বেলা ১১টায় তাঁর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হবে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। এরপর বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা হবে। পরে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।
সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের জন্ম ১৯৫১ সালের ১৮ জানুয়ারি সিলেট শহরে। তিনি কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে আইরিশ কবি ডব্লিউ বি ইয়েটসের ওপর পিএইচডি করেন।
পেশাগত জীবনে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরের পর তিনি ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টস বাংলাদেশে (ইউল্যাব) যোগ দেন।
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম প্রবন্ধ, গল্প ও উপন্যাস লিখেছেন। তিনি বাংলা কথাসাহিত্যে এক নতুন ধারা সৃষ্টি করেন, যাতে বাস্তব ও অবাস্তবের তফাৎ ঘুচে জাদুবাস্তবতার স্পর্শে সামান্য ঘটনাও অসামান্য হয়ে ওঠে। তাঁর প্রেম ও প্রার্থনার গল্প ২০০৫ সালে প্রথম আলো বর্ষসেরা সৃজনশীল বইয়ের পুরস্কার পায়। তিনি ১৯৯৬ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার এবং ২০১৮ সালে একুশে পদক পান। সাহিত্য ও নন্দনতত্ত্ব বিষয়েও তাঁর বই রয়েছে।