■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় আটটি গোপন আটক কেন্দ্রের সন্ধান পাওয়ার কথা জানিয়েছে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন। তবে তদন্তের স্বার্থে কেন্দ্রগুলো সম্পর্কে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) রাজধানীর গুলশানে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের কার্যালয়ে কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, “এখন পর্যন্ত এক হাজার ৬০০টির মতো অভিযোগ পাওয়া গেছে গুমের। এর মধ্যে ৪০০ এর বেশি অভিযোগ খতিয়ে দেখা হয়েছে। এর মধ্যে র্যাবের বিরুদ্ধে ১৭২টি, সিটিটিসির ৩৭টি, ডিবির ৫৫টি, ডিজিএফআই ২৬টি, পুলিশের ২৫টি এবং অন্যান্যভাবে গুমের ৬৮টি ঘটনা। এসব ঘটনা তদন্তে গিয়ে এসব বাহিনীর আটটি গোপন বন্দিশালা পেয়েছে কমিশন, যেখানে বছরের পর বছর গুম হওয়া ব্যক্তিদের রেখে নির্যাতন করা হতো।”
বিচারপতি মইনুল ইসলাম বলেন, “এখানে রাজনৈতিক কারণেই বেশিরভাগ ব্যক্তিকে গুম করা হয়েছে। তবে রাজনৈতিক কারণ ছাড়া স্বপ্রণোদিত হয়ে অভিযোগের বাইরে অনেককে গুম করা হয়। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ২০০’র বেশি গুম হওয়া মানুষকে এখনো শনাক্ত করা যায়নি। আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে নেওয়ার কথা থাকলেও মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর রাখা হতো আইনের তোয়াক্কা না করে।”
তিনি বলেন, “গুমের ১৪০ অভিযোগের বিষয়ে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই তদন্ত শুরু হয়েছে।”
দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় রাজনীতিকে পরিশুদ্ধ করার কথাও বলেন গুম কমিশনের প্রধান।
কমিশনের সদস্য নূর খান লিটন বলেন, ‘আমরা র্যাব পরিচালিত একটি সেল পেয়েছি, যেটি ছিল মাত্র ৩ দশমিক ৫ বাই ৪ ফুট। সেখানে আলো ঢোকার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। একটি ড্রেন ছাড়া সেখানে কোনো স্যানিটেশন ব্যবস্থাও ছিল না। এমন পরিবেশেই বন্দিদের বছরের পর বছর ধরে সেখানে রাখা হয়।’
আরেক সদস্য নাবিলা ইদ্রিস বলেন, ‘আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো প্রমাণ নষ্ট করছে। তারা সেল ও দেওয়াল ভেঙে ফেলছে। যেসব বাহিনী প্রমাণ নষ্ট করছে তারা আমাদের সহযোগিতা করছে না। এখনকার কর্মকর্তারাও আগের কর্মকর্তাদের অপরাধে জড়িত ছিলেন।’
গত ২৭ আগস্ট ওই গুম কমিশন গঠন করে সরকার। কমিশনের কাছে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে গুমের ঘটনার অভিযোগ জানানোর সুযোগ ছিল কমিশনে। গত ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত গুমের অভিযোগ জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে গুমের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন—হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাবিলা ইদ্রিস ও মানবাধিকারকর্মী সাজ্জাদ হোসেন।