■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
বাংলাদেশে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য একটি বৃহৎ প্রতিনিধি দল পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ)। ২০০৮ সালের পর এটিই হবে ইইউর প্রথম পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন।
বৈঠকে রাষ্ট্রদূত জানান, ইইউ পর্যবেক্ষক দল এখনও চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত করা হয়নি, তবে এটি ১৫০ থেকে ২০০ সদস্যের মধ্যে থাকতে পারে। কিছু প্রতিনিধি নির্বাচনের প্রায় ছয় সপ্তাহ আগে এবং অন্যরা ভোটের এক সপ্তাহ আগে যোগ দেবেন।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালের পর এই প্রথম ইইউ বাংলাদেশে একটি পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠাচ্ছে। ভোটের সময় স্থানীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক নিয়োগেও ইইউ সহায়তা করবে।
প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে উভয়পক্ষ সাংবিধানিক সংস্কার, নির্বাচন প্রস্তুতি, বিচার বিভাগ ও শ্রম খাতের সংস্কার, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক এবং দেশের সার্বিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন।
বৈঠকে উভয়পক্ষ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। এর মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তির সম্ভাবনা এবং বিমান ও নৌ পরিবহন খাতে নতুন সুযোগ অনুসন্ধানের বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। এছাড়া মানব পাচার ও অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার বিষয়ে তারা একমত হন।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া টার্মিনালের উন্নয়ন ও পরিচালনায় বৈশ্বিক শিপিং কোম্পানি এ.পি. মোলার-মায়ার্সকের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তুতি চলছে।
রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ডেনমার্কের এই প্রতিষ্ঠান প্রায় ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে লালদিয়াকে এ অঞ্চলের অন্যতম আধুনিক টার্মিনালে উন্নীত করার পরিকল্পনা করছে।
বৈঠকে নির্বাচনী পরিবেশ, প্রার্থীদের যোগ্যতা ও মানবাধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়েও আলোচনা হয়।
রাষ্ট্রদূত মিলার জুলাইয়ের জাতীয় সনদের প্রশংসা করে এটিকে একটি ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ নথি হিসেবে বর্ণনা করেন, যার লক্ষ্য একটি মসৃণ গণতান্ত্রিক উত্তরণ নিশ্চিত করা। তিনি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা জোরদারে সম্প্রতি অনুমোদিত শ্রম আইন সংস্কার ও উদ্যোগের প্রশংসা করে এগুলোকে ‘উল্লেখযোগ্য সাফল্য’ বলে অভিহিত করেন।
ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনের প্রচেষ্টায় ইইউ’র অব্যাহত সমর্থনের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এগুলো সবই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’’
মিলার আসন্ন নির্বাচনকে ‘দেশের সুনাম পুনর্বিন্যাসের সুযোগ’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
রাষ্ট্রদূত স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে বাংলাদেশকে সুষ্ঠুভাবে উন্নীত করতে ইইউ’র প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
উভয় পক্ষই অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তির সম্ভাবনা এবং বিমান চলাচল ও জাহাজ চলাচলে নতুন সম্ভাবনার সন্ধানসহ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ককে আরও গভীর করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেছে। মানবপাচার এবং অবৈধ অভিবাসন রোধে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার বিষয়ে তারা সহমত পোষণ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া টার্মিনালের উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশ গ্লোবাল শিপিং জায়ান্ট এপি মোলার-মার্স্কের সঙ্গে একটি চুক্তি সই করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নির্বাচনি পরিবেশ, প্রার্থীদের যোগ্যতা এবং ভোটের আগে মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে যথাযথ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার বিষয়েও উভয় পক্ষ আলোচনা করেছেন।
