:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
কুমিল্লায় কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে কারামুক্ত হলেন নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া। সোমবার (২৪ জুন) সন্ধ্যায় কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে বের হন তিনি।
শামীমা নূর পাপিয়ার জামিনে বের হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, সোমবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে পাপিয়া জামিনে কারামুক্ত হন। এর আগে বিকেলে তাঁর জামিনের কাগজপত্র এলে তা যাচাই–বাছাই করে তাঁকে কারামুক্ত করা হয়।
আবদুল্লাহ আল মামুন আরও জানান, পাপিয়ার বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা রয়েছে। এর আগে অস্ত্র আইনের একটি মামলায় নিম্ন আদালত তাঁকে ২০ বছরের সাজা দেন। পরে তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন। বাকি পাঁচটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে৷ গুলশান থানায় দায়েরকৃত মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় আজ তিনি জামিন পান।
এর আগে কাশিমপুর কারাগারে ছিলেন পাপিয়া। সেখানে এক নারী বন্দীর ওপর নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। এর পরপরই ২০২৩ সালে ৩ জুলাই তাঁকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগার থেকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।
কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের রেকর্ড বইয়ে পাপিয়ার বিভিন্ন অপকর্মের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়, পাপিয়া হাজতি রুনা লায়লা ছাড়াও কয়েকজন বন্দীকে গালাগাল ও ভয়ভীতি দেখাতে আঘাত করেছেন। এ ছাড়া তিনি কারাগারের রজনীগন্ধা ভবনে অন্য বন্দী দিতে চাইলে আপত্তি জানিয়েছিলেন।
পাপিয়া গাজীপুরের তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে কারারক্ষীদের ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই ইচ্ছেমতো অন্য বন্দীদের সেল পরিবর্তন করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাঁর কক্ষ তল্লাশি করে স্মার্টফোন ও চার্জার পাওয়া যায়।
ঢাকার পাঁচ তারকা হোটেলে বিলাসবহুল কক্ষ ভাড়া নিয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতেন পাপিয়া। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের বিষয়ে আঁচ পেয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সময় ২০২০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বিমানবন্দর থেকে পাপিয়া ও তাঁর স্বামী মফিজুর রহমানকে গ্রেফতার করে র্যাব। এরপর পাপিয়াকে নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। ওই বছরই অস্ত্র মামলায় পাপিয়া ও তাঁর স্বামীর ২০ বছরের কারাদণ্ড হয়। এখনো তাঁদের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলার বিচার চলছে।
এরপর তাদের কাছ থেকে সাতটি পাসপোর্ট, ২ লাখ ১২ হাজার ২৭০ টাকা, ২৫ হাজার ৬০০ জাল টাকা, ৩১০ ভারতীয় রুপি, ৪২০ শ্রীলঙ্কান মুদ্রা, ১১ হাজার ৯১ মার্কিন ডলার এবং সাতটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
এরপর ২৩ ফেব্রুয়ারি পাপিয়ার ইন্দিরা রোডের বাসায় অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, পাঁচটি পাসপোর্ট, তিনটি চেক, বেশ কিছু বিদেশি মুদ্রা ও বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় পাপিয়া ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় মাদক ও অস্ত্র, গুলশান থানায় মানি লন্ডারিং, বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে (জাল টাকা) এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক।
২০২১ সালের ২৭ ডিসেম্বর মানি লন্ডারিং আইনের মামলায় পাপিয়াসহ পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি। এতে বলা হয়, অবৈধভাবে পাঁচ কোটি টাকার মালিক হন পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান। এই টাকার কথা কেউ যাতে জানতে না পারে, সেজন্য তা ব্যাংকে না রেখে বাসার খাটের নিচে লুকিয়ে রাখা হয়। বাসায় এত টাকা রাখার তথ্য স্ত্রী পাপিয়াকেও জানাননি তিনি। তবে মফিজুর যখন ভারতে অবস্থান করেন তখন পাপিয়া বাসার খাটের নিচে টাকা থাকার তথ্য জেনে যান এবং এই টাকা পরে খরচ করেন। এর মধ্যে হোটেল ভাড়া দেন তিন কোটি টাকার বেশি। ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরীকে অস্ত্র মামলায় ২০ বছর কারাদণ্ড দেন আদালত।