■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ঢাকার রায়েরবাজার কবরস্থানে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা অজ্ঞাত ১৮২ জন শহীদের মরদেহ উত্তোলনের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে রোববার। ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে নিহতদের পরিচয় শনাক্ত করার লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (ক্রাইম সিন) মো. জসিম উদ্দিন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আদালতের নির্দেশে আগামীকাল সকাল থেকে মরদেহ উত্তোলনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন কবরস্থানে কার্যক্রম শুরুর আগে ব্রিফিং করবেন সিআইডি প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি মো. ছিবগাত উল্লাহ। এ সময় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ লুইস ফন্ডিব্রিডার এবং ফরেনসিক নৃবিজ্ঞানীদের একটি দল উপস্থিত থাকবেন। কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ইতিমধ্যে কবরস্থানে তাবু স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রস্তুত করেছে।
কর্মকর্তারা জানান, মরদেহগুলো উত্তোলনের পর ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হবে। এরপর যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের পুনরায় দাফন করা হবে।
উল্লেখ্য, গত বছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নিহত ১১৪ জনকে পরিচয় না পাওয়ায় রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা হয়েছিল। ভবিষ্যতে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ, পরিচয় নিশ্চিত করা এবং পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তরের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মহিদুল ইসলাম আদালতে আবেদন করেন। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৪ আগস্ট ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান এই ১১৪টি মরদেহ উত্তোলনের নির্দেশ দেন।
পুলিশের আবেদনে বলা হয়, আইনি প্রক্রিয়া শেষে ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর মরদেহগুলো তাদের নিজ নিজ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা প্রয়োজন।
এর আগে গত ৪ আগস্ট পুলিশি আবেদনের ভিত্তিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান কবর খনন করার অনুমতি দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক মাহিদুল ইসলাম আবেদনপত্রে উল্লেখ করেছিলেন, কোটা সংস্কার থেকে জন্ম নেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বিভিন্ন বয়সের বহু মানুষ নিহত হন। তাদের পরিচয় নির্ণয় করতে কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন অপরিহার্য।
সিআইডির ফরেনসিক ইউনিটের কর্মকর্তারা জানান, বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের ভেতরেই অস্থায়ী তাঁবুতে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হবে। পরে মরদেহ যথাযথ নিয়মে পুনরায় দাফন করা হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী বিদেশি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরাও এ কাজে যুক্ত হবেন।
সূত্র বলছে, ১৮২ শহীদের মরদেহ উত্তোলন ও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের পুরো প্রক্রিয়া এক মাস বা তারও বেশি সময় ধরে চলতে পারে।
