■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন একজনের ছবি প্রকাশ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তাকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা গেছে বলে জানিয়েছে ডিএমপি। সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তির বিষয়ে তথ্য জানাতে পুলিশের পক্ষ থেকে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
তবে পুলিশের বিবৃতিতে সন্দেহভাজন ব্যক্তির নাম–পরিচয় দেওয়া হয়নি। সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তির ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে– তার নাম ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে রাহুল ওরফে দাউদ খান । তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নে। বাবার নাম হুমায়ুন কবির। দীর্ঘ দিন তারা আদাবরে বসবাস করনে। কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন ফয়সাল।
সূত্র জানিয়েছে, ওসমান হাদির ওপর গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য (রেজওয়ানুল হক চৌধুরী ও গোলাম রাব্বানী নেতৃত্বাধীন কমিটি) ফয়সাল করিম দাউদ খান একই ব্যক্তি।
পুলিশের পিসিপিআর রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে ফয়সাল করিম মাসুদ ঢাকার আদাবর থানাধীন পিস কালচার হাউজিং সোসাইটি (বাসা নং-৪১, রোড নং-০৯) এ বসবাস করতেন। তার বিরুদ্ধে আদাবর থানায় মামলা রয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সদস্য হয়েছিলেন তিনি। তার পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ফয়সালকে প্রধান সন্দেভাজন হিসেবে চিহ্নিত করে তদন্ত কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। দেশত্যাগ ঠেকাতে তার ব্যাপারে এরই মধ্যে সব বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও সীমান্তে তথ্য দেওয়া হয়েছে।
পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। এই অ্যাকাউন্টটি যে ফয়সালেরই তা ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা নিশ্চিত করেছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তিকে। লিংকডইনে ফয়সাল নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিনটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।
মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেফতার করে র্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।
জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।
ডাকসুর মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্র সম্পাদক ফাতিমা তাসনিম জুমা ফেসবুকে হাদিসহ কয়েকজনের একটি ছবি প্রকাশ করে তিনজনকে চিহ্নিত করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, এই তিনজনকে যেকোনো মূল্যে ধরিয়ে দিন। বাংলাদেশের জনতা আপনারাই ইনকিলাব কর্মী, আপনারাই এই ভার হাতে নিন। প্রশাসন কোথায় আমাদের আপডেট দিবে, তা না করে উল্টো আমাদের কাছেই আপডেট চাইতেছে।
এদিকে ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
