হাসিনার পতনে শেষ ক্ষমতার খেলা ও আইনের দোহাই

:: আনিস আলমগীর ::

গত ২৫শে জুন বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করে এসে সংবাদ সম্মেলন করলেন।

তার সংবাদ সম্মেলনের অর্ধেকটা জুড়ে ছিল ডক্টর ইউনুসের বিরুদ্ধে কথাবার্তা। মোজাম্মেল বাবুসহ দুই তিন জন সাংবাদিক এই বিষয়ে প্রশ্নের নামে আগুন এগিয়ে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে, তিনি তাতে ঘি ঢেলেছেন।

এই দেশের সাংবাদিকরা ডক্টর ইউনুসকে ব্যক্তিগতভাবে কেউ পছন্দ নাও করতে পারে, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সুর মিলিয়ে নোংরা ভাষায় তাকে আক্রমণ করেছে দিনের পর দিন।

অথচ আজ ঘোষিত হল সেই প্রধানমন্ত্রী চরম বেইজ্জতির সঙ্গে দেশ ছাড়া হওয়ার পর ড. ইউনুস তার দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে। ফ্রান্স থেকে দেশে এসে পৌঁছাবেন তিনি বুধবার।

২.

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দণ্ডিত ছিলেন সেই অজুহাতে তাকে বছরের পর বছর বিদেশে চিকিৎসা নিতে বঞ্চিত করা হয়েছে। আমি অনেকবার লিখেছি- ‘আমি মনে করি তার বয়স এবং রাষ্ট্রের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আইনের যতই প্যাচ থাকুক, উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে দেওয়া উচিত।’

(রাজনৈতিক দলের যে সমস্ত অন্ধ মুরিদ আমার সাংবাদিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে, আমার স্বাধীন মতামত নিয়ে কষ্ট পায়, তাদের জন্য একটি স্ট্যাটাসের লিংক কমেন্টে দিয়ে দিচ্ছি)।

অথচ বিদেশে চিকিৎসা নয় শুধু, আজ তিনি সব মামলা থেকে মুক্ত হলেন! যেই আইনের মার প্যাঁচে সরকার তাকে চিকিৎসা বঞ্চিত করেছে রাষ্ট্রের সেই আইন কোথায় গেল! শেখ হাসিনা বিদায় নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাওয়া হয়ে গেছে?

৩.

এই দেশের মিডিয়া তারেক জিয়ার বক্তব্য প্রচার করতে পারবে না কারণ তিনি একজন দণ্ডিত ব্যক্তি। হাইকোর্টের এই সংক্রান্ত রায়ের প্রশ্ন তুলে, তারেক জিয়ার মত প্রকাশ মূল ধারার মিডিয়ায় নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, এমনকি একুশে টেলিভিশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল তাকে লাইভে আনার অপরাধে।

শেখ হাসিনা বিদায় নেওয়ার পর এখন সেই মিডিয়াগুলো তারেক জিয়ার ভিডিও প্রচার করছে দিনরাত।

হাইকোর্টের সেই নিষেধাজ্ঞা এখন কোথায়? কোর্টের নিষেধাজ্ঞা কি উঠে গেছে? মিডিয়া নতুন ফতোয়া পেয়েছে তার বক্তব্য প্রচারের পক্ষে?

৪.

জামায়াতকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে মাত্র কয়দিন আগে। (ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজে স্বাধীন দেশে জামাত নতুন নামে আসুক সেটা চাই। প্রয়াত জামাত নেতা কামরুজ্জামানসহ অনেককে বলেছিও কারণ নতুন প্রজন্ম জামায়াত নেতাদের একাত্তরের দায় দায়িত্ব নিবে কেন!)

সেই নিষেধাজ্ঞা এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি, তাহলে জামায়াতের নেতারা সেনাপ্রধান, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে একের পর এক বৈঠক করছেন কি করে! মিডিয়ায় বক্তৃতা দিচ্ছেন কি করে!

৫.

সাড়ে ১৭ বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে আটক বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন আল মামুন মঙ্গলবার সোনালী ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা দুদকের মামলায় জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। দিনের পর দিন তাকে মুক্তি দেওয়া হয়নি।

আদালত এখন রকেট গতিতে কিভাবে মুক্তি দিলেন, শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার একদিন পরে! মামলার মেরিট ঘুরে গেছে?

আসলে আইন এবং আইনের দোহাই কিছুই না, সবকিছু চলে ক্ষমতাসীনদের ইশারা ইঙ্গিতে। সবই ক্ষমতার খেলা। আইন শুধু গরিবদের জন্য।

লেখক: সাংবাদিক ও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ের শিক্ষক

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *