:: ক্রীড়া প্রতিবেদক ::
একযুগ পর শেষ হলো বাংলাদেশ ক্রিকেটে নাজমুল হাসান পাপন অধ্যায়ের। তার উত্তরসূরী হিসেবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নতুন সভাপতি হলেন সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদ।
এবার রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বোর্ড সভাপতির দায়িত্ব পেলেন তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরই ধারণা করা হচ্ছিল দেশের অন্য ক্ষেত্রের মতো বিসিবির সভাপতিও পরিবর্তন হবে৷ সেটিই হলো আজ ৷ এই পরিবর্তন আনতেই আজ ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে বসেছে বিসিবির পরিচালনা পরিষদের সভা ৷
এরপরই সভায় উপস্থিত বোর্ড পরিচালকদের ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হন ফারুক আহমেদ। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক হওয়ায় আগে থেকে বিসিবির কাউন্সিলর ছিলেন তিনি। ফলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) মনোনীত পরিচালক হিসেবে যুক্ত হন ক্রিকেট বোর্ডে। পরে সভায় উপস্থিত পরিচালকরা তাকে ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করেন।
বোর্ড সভায় পরিচালকের মধ্যে ছিলেন কাজী ইনাম, মাহবুব আনাম, ইফতেখার আহমেদ মিঠু, আকরাম খান, খালেদ মাহমুদ সুজন, ফাহিম সিনহা, সাইফুল আলম স্বপন ও সালাউদ্দিন চৌধুরী। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন নাজমুল আবেদীন ফাহিম। আর বোর্ড সভায় আমন্ত্রণ পাননি, পদত্যাগ করার আবেদনে সাড়া না দেওয়া আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি।
সভাপতিসহ বিসিবির পরিচালনা পর্ষদ ২৪ জনের। এর মধ্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বুধবরের সভায় ৮জন পরিচালক অংশ নেন বলে জানা গেছে। পূর্বের বোর্ড পরিচালকদের মধ্যে নতুন বোর্ডে ৫জন পরিচালককে রেখে দেওয়া হতে পারে বলেও জানা গেছে। বাকিদের জায়গায় আসতে পারেন নতুনরা।
বিসিবির সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় ফারুক আহমেদের ক্যারিয়ার নিয়ে অনেকের আগ্রহ তৈরি হয়েছে। দেশের ইতিহাসে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে বিসিবির নীতিনির্ধারক পর্যায়ে দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। ১৯৬৬ সালের ২৪ জুলাই ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি টানার পর দুই মেয়াদে বিসিবির প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করেন ফারুক আহমেদ। প্রথম মেয়াদে ২০০৩ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালনের পর ২০১৩ সালে আবারও প্রধান নির্বাচক করা হয় ফারুক আহমেদকে। তবে দ্বিতীয় মেয়াদটা সুখকর ছিল না তাঁর জন্য। ২০১৬ সালে তিনি পদত্যাগ করে বিসিবি ছেড়েছিলেন।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে ফারুক আহমেদের সখ্যতা বেশ আগে থেকেই। ১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক হয়েছিলেন। খেলোয়াড়ি জীবন শেষে দুই দফায় পালন করেছেন নির্বাচকের দায়িত্ব। ২০০৩ সালে প্রথমবার আসেন এই পদে। এরপর ২০১৩ সালে নাজমুল হাসান পাপনের বোর্ডেই আরেকবার নির্বাচক হন তিনি। ২০১৬ সালে সেই দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন।
১৯৮৮ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত খেলেছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলে। মূলত ডানহাতি টপ অর্ডার ব্যাটার ছিলেন ফারুক আহমেদ। ১৯৮৮ সালের ২৯ অক্টোবর চট্টগ্রামে এশিয়া কাপে বাংলাদেশ দলের জার্সিতে অভিষেক হয় তার। একই দিনে অভিষেক হয়েছিল আকরাম খান ও ওয়াহিদুল গণির। ১৯৯০ সালে চন্ডিগড়ে ভারতের বিপক্ষে ৫৭ রান তার ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ। সে ম্যাচে তৃতীয় উইকেটে আতহার আলী খানের সঙ্গে ১০৮ রানের জুটি গড়েছিলেন তিনি।
ঘরোয়া ক্রিকেটে অধিনায়ক হিসেবেও সফল ছিলেন ফারুক আহমেদ। সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৩-৯৪ সালে জাতীয় দলের অধিনায়ক নির্বাচিত করা হয় তাকে। তার নেতৃত্বে কেনিয়ায় অনুষ্ঠিত ১৯৯৪ সালের আইসিসি ট্রফিতে অংশ নেয় বাংলাদেশ দল। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপে দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন ফারুক আহমেদ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জনপ্রশাসন বিভাগে স্নাতক ডিগ্রিধারী ফারুক আহমেদ খেলোয়াড়ী জীবন থেকে অবসরের পর যুক্ত ছিলেন ক্রিকেটের উন্নয়নে। দুই মেয়াদে জাতীয় দলের নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ছিলেন প্রধান নির্বাচকও। পরে পদত্যাগ করে দীর্ঘদিন ক্রিকেট বোর্ড থেকে দূরে ছিলেন জাতীয় দলের সাবেক এ অধিনায়ক।
এক যুগ পর বিসিবিতে পাপন অধ্যায়ের সমাপ্তি
২০১২ সালে আওয়ামী লীগ সরকার মনোনীত সভাপতি হিসেবে বিসিবির দায়িত্ব নিয়েছিলেন নাজমুল হাসান পাপন। ২০১৩ সালের অক্টোবরে নির্বাচিত সভাপতি হয়ে তিন মেয়াদে বিসিবি সভাপতির দায়িত্বপালন করেছেন। আগামী বছরের অক্টোবরে শেষ হওয়ার কথা ছিল নাজমুল হাসান পাপনের পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ। আওয়ামী লীগের পতনে পদত্যাগ করে মেয়াদ শেষের আগেই সরে গেলেন পাপন।
টানা ১২ বছর সভাপতি থাকায় ক্রিকেট বোর্ডের প্রায় সবখানেই নিজের পছন্দের লোক বসিয়েছেন তিনি। বিসিবি প্রধানের চেয়ারে বসে বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনাময় ক্রিকেটকে ধ্বংসের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে পাপনের বিরুদ্ধে। ক্ষমতার পটপরিবর্তনে এখন একে একে প্রকাশ্যে আসছে পাপন এবং তাঁর লোকজনের যত দুর্নীতি আর অনিয়মের অভিযোগ।
এর আগে বিসিবি পরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন জালাল ইউনুস। বিসিবিতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) মনোনীত এই পরিচালক ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। এনএসসি থেকেই তাঁকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছিল।
এনএসসি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে সংস্থাটি মনোনীত বিসিবির আরেক পরিচালক আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববিকেও। তাঁর জায়গায় নতুন পরিচালক হয়েছেন ক্রিকেট কোচ ও বিশ্লেষক নাজমুল আবেদীন ফাহিম।
জালাল ইউনুসের শূন্য পদে ফারুক আহমেদকে পরিচালক হিসেবে আনা হয়। এরপর পরিচালনা পর্ষদের ভোটে সভাপতি নির্বাচন করা হয় তাঁকে।
পাপন ২০১৩, ২০১৭ ও ২০২১ সালে টানা তিনবার নির্বাচন জিতে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পাপন ২০১৩ সালে এনএসসি কোটায় পরিচালক হয়েছিলেন। পরবর্তীতে পরিচালকরা তাকে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করেন। গত দুই নির্বাচনে তিনি ঢাকা আবাহনীর কাউন্সিলর হিসেবে পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন। পরবর্তীতে একই প্রক্রিয়ায় সভাপতিও নির্বাচিত হয়েছেন পাপন।
নাজমুল হাসান পাপন বর্তমান কোথায় রয়েছেন তা অজানা তবে ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপে তাকে সভাপতি পদ থেকে নামানো হলে আইসিসির নিষেধাজ্ঞার ভয় ছিল। তবে পাপন নিজে পদত্যাগ করায় সে শঙ্কা আপাতত দূর হলো।