■ গাজীপুর প্রতিনিধি ■
ঢাকার আশুলিয়ার জিরাবো এলাকায় দুটি কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষের ঘটনায় এক নারী পোশাক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও তিনজন শ্রমিক। তবে স্থানীয় শ্রমিকেরা বলছেন, এ সংখ্যা ১৫ থেকে ২০ হতে পারে।
নিহত নারী পোশাক শ্রমিকের নাম মোছা. রোকেয়া বেগম। তিনি ম্যাসকট গার্মেন্টস লি.-এ সহকারী সেলাই মেশিন অপারেটর পদে কর্মরত ছিলেন। রোকেয়া ২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর কারখানাটিতে যোগ দেন।
নারী শ্রমিকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল হোসেন।
শিল্প পুলিশ জানায়, আগে থেকেই কারখানাটি শ্রম আইন ২০০৬-এর ১৩/১ ধারায় বন্ধ ছিল। আজ সকালে শ্রমিকরা কারখানা চালু হয়েছে কি না দেখতে এসে দেখেন, ১২/৮ ধারা অনুযায়ী লে অফ করা হয়েছে।
এরপর শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে আশপাশে চালু থাকা রেডিয়েন্স গার্মেন্টস, সাউদার্ন নিটিংসহ অন্য আরও বেশ কয়েকটি কারখানায় ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকেন এবং অন্যান্য শ্রমিকদেরকেও তাদের সাথে বিক্ষোভ করতে ডাকেন। কিন্তু জবাবে অন্য কারখানার শ্রমিকরা পাল্টা ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকেন। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
সকাল পৌনে ৯টার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে গুরুতর আহত মোছা. রোকেয়া বেগমকে স্থানীয় পিএমকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে জানান এসপি নূরানী ফেরদৌস দিশা।
তিনি বলেন, সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ছুটে যান। তবে শ্রমিকরা বিশমাইল-জিরাবো সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন।
নূরানী ফেরদৌস দিশা বলেন, সকাল থেকে শিল্প এলাকাটি বেশ শান্ত ছিল ও অন্যান্য কারখানায়গুলোর শ্রমিকরাও কাজে যোগ দিয়েছে। বেলা সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত অন্য কোন কারখানা বন্ধের খবর তাদের কাছে ছিল না বলে জানান তিনি।
এদিকে, গাজীপুরের সদর উপজেলার জয়দেবপুর থানার শিরিরচালা এলাকার এক্সিকিউটিভ হাই ফ্যাশন লিমিটেডের শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করছেন।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, কারখানাটিতে প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক আছে। ইতোপূর্বে শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবি দাওয়া কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করেছে। গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার দিকে অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা কারখানার আয়রন ম্যান মো. আরমানকে মারধর করে মানিব্যাগ ও মোবাইল কেড়ে নেয়। শ্রমিকদের সন্দেহ দাবি উপস্থাপন করায় কারখানা কর্তৃপক্ষের লোকজন পরিকল্পিতভাবে তাদের লোকজন দিয়ে আরমানকে মারধর করেছে। এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মবিরতি পালন করছে।
অপরদিকে, গাজীপুরের টঙ্গীর খাঁ পাড়া এলাকায় বকেয়া বেতনের দাবিতে সিজন ড্রেস নামের একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানে আন্দোলন করছেন শ্রমিকরা। এসময় শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করে এবং ঢাকা- ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
শিল্প পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, টঙ্গীর খাঁ পাড়া এলাকায় সিজন ড্রেস নামের একটি তৈরি পোশাক কারখানার ৫ থেকে ৬শ শ্রমিক কাজ করেন। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বকেয়া বেতন ভাতা ও অন্যান্য দাবিতে কর্মবিরতি করে আন্দোলনে নামেন তারা। এসময় শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন। এতে ওই মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
অপরদিকে, গাজীপুরের সদর থানাধীন রাজেন্দ্রপুর এলাকার বেতন বৃদ্ধিসহ ৮ দফা দাবি জানিয়ে কর্মবিরতি পালন করছেন তাসমিয়া হারবাল লিমিটেডের শ্রমিকর। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করে তারা কারখানার ভেতরে হইচই শুরু করেন। কারখানা কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকদের মাঝে সমঝোতার চেষ্টা করছে শিল্প পুলিশ।
এদিকে, বৈষম্য বিরোধী শ্রমিক আন্দোলন বেতন বৃদ্ধির দাবিতে ৯ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন ভেরিতাস ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেডের শ্রমিকরা।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল-২-এর সহকারী পুলিশ সুপার মোশাররফ হোসেন বলেন, টঙ্গীতে বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে সিজন ড্রেস কারখানার শ্রমিকরা। তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এছাড়া বেতন ভাতা পরিশোধে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলমের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি তা কল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।