■ ফেনী প্রতিনিধি ■
টানা বৃষ্টিতে ফেনীতে ২৪ ঘণ্টায় ৪০৬ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। যা চলতি বছরে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। এদিকে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফেনীর পরশুরামের মির্জানগর ইউনিয়নের গদানগর এলাকায় সিলোনিয়া নদীর একটি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
এছাড়া ফুলগাজীতে মুহুরী নদীতে ভেসে গেছে দু’টি দোকান ঘর, নদী পাড়ের রাস্তা ভেঙ্গে ফুলগাজী বাজার থেকে রাজসপুর সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
সকাল থেকে ফেনী শহরের কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। তবে শিক্ষা বোর্ড থেকে পরীক্ষা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো প্রজ্ঞাপন জানা যায়নি। টানা ভারী বৃষ্টিতে বন্যার আশঙ্কায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, সোমবার (৭ জুলাই) বিকাল ৩টা হতে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বিকাল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ফেনীতে ৪০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এটি চলতে মৌসুমের জন্য সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। আরও দুইদিন ফেনীতে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কাশেম বলেন, পরশুরামের উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের সিলোনিয়া নদীর উপর একটি ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই ভাঙন দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে।
সোমবার বিকাল থেকে ফেনীতে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। বৃষ্টির পানিতে ফেনী শহর নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। শহরের অলিতে গলিতে কোথায় কোথায় সড়কে তিন থেকে চার ফুট পানি জমেছে। পাড়ামহল্লার রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে অনেক এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে।
টানা বৃষ্টির কারণে শহরের প্রধান সড়ক শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়ক, রামপুর শাহীন একাডেমি এলাকা, পাঠান বাড়ি এলাকা, নাজির রোড, পেট্রো বাংলাসহ বিভিন্ন এলাকায় তৈরী হয়েছে জলাবদ্ধতা। এসব এলাকার রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। অতিরিক্ত পানির চাপে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এমতাবস্থায় দূর্ভোগে পড়েছে খেটে খাওয়া শ্রমজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
ফেনী সরকারি কলেজ থেকে বাংলা সমাপনী বর্ষের পরীক্ষার্থী ফেনী সদর উপজেলার বালিগাঁও ইউনিয়নের খালেদুল আশরাফ বলেন, মঙ্গলবার দুপুর ২টা থেকে অনার্স সমাপনী বর্ষের পরীক্ষা রয়েছে। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে গ্রামের রাস্তাঘাট ডুবে গেছে, সড়কে কোনো পরিবহন নেই। বোর্ড থেকেও পরীক্ষা স্থগিতের নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। এমতাবস্থায় কীভাবে কলেজে যাব? পরীক্ষা দেব? সেটি বুঝতে পারছি না।
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহরিয়া ইসলাম জানান, ভারী বৃষ্টির কারণে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমান উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সকাল ৭টার দিকে ফুলগাজীর রাজেশপুর সড়কের মুহুরী নদীর বাধ ভেঙে দু’টি দোকান নদীতে ধসে গিয়েছে। এতে করে ওই গ্রামের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা নাসরিন কান্তা বলেন, এখন প্রায় সকল স্কুলেই ষান্মাসিক পরীক্ষা চলমান রয়েছে। সড়ক ও স্কুলে পানি ওঠায় অনেক স্কুলে ইতোমধ্যে অন্তবর্তী পরীক্ষা স্থগিত করার নোটিশ দিয়েছে। তবে বোর্ড পর্যায়ে চলমান পরীক্ষা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো নোটিশ পাওয়া যায়নি।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আকতার হোসেন মজুমদার বলেন, সীমান্তবর্তী তিন নদী মুহুরী, কহুয়া, সিলোনীয়া নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এছাড়াও পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের গদানগর গ্রামে পূর্বের ভাঙন দিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। আর উজানে ভারী বৃষ্টি হলে নদীর পানি আরও বাড়বে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধের বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি।