রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে ভয়াবহ আগুন

■ নাগরিক প্রতিবেদন ■

রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে ভয়াবহ আগুন লেগেছে। ক্রমশ চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে এটি। পানির অভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের। আগুন নেভাতে মোট ১৯টি ইউনিট কাজ করছে।

মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে আগুনের খবর পায় ফায়ার সার্ভিস।

তীব্র যানজট ঠেলে ফায়ারের ইউনিটগুলো ঘটনাস্থলে ৪০ মিনিট দেরি করে পৌঁছানোর পর আগুন নেভানোর কাজ শুরু করলেও, পানির অপ্রতুলতার কারণে দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না।

আগুনে এখন পর্যন্ত এক থেকে দেড় শতাধিক ঝুপড়ি ঘর পুড়ে গেছে।

ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের দাবি, কেউ নাশকতা করে এই অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়েছে। এদিকে আগুন লাগার সময় ঘর থেকে হুড়োহুড়ি করে জিনিসপত্র বের করতে গিয়ে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এক নারী ও শিশুর নিখোঁজের অভিযোগ পেলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তা নিশ্চিত করেনি।

বস্তিতে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, শীতের লেপ তোশক, কাঠ ও গ্যাস সিলিন্ডার থাকায় আগুন দ্রুত বস্তিতে ছড়িয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের কর্তব্যরত কর্মীরা।

ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার রাশেদ বিন খালিদ জানান, ঘটনাস্থলে পানির সংকটের কারণে পানিসহ আরও কয়েকটি ইউনিট পাঠানো হয়েছে।

তিনি বলেন, পানি সংকটের কারণেই আমরা ইউনিট বাড়িয়ে মোট ১৯টি করেছি। আমাদের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।

বস্তির বাসিন্দারা জানান, আগুন লাগার পর দাউ দাউ করে তা টিনের ঘরগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কিত মানুষজন যে যেভাবে পারছেন, ঘর থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করছেন। ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ বস্তির বাসিন্দাদের ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না, যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা বা দুর্ঘটনা না ঘটে। তারা স্থানীয় বাসিন্দাদের দুর্ঘটনাস্থল থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন।

প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ বা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।

আগুনে ঘর পুড়েছে বস্তির বাসিন্দা লাভলী বেগমের। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার সব আগুনে পুড়ে শেষ। সাত বছর ধরে এই বস্তিতে আছি। অনেক কষ্টে তিল তিল করে জিনিসপত্র কিনেছিলাম। ঘরে টিভি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র কিনেছিলাম। মাসে মাসে কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে হয়। এ আগুনে আমার সব শেষ হয়ে গেল।

বস্তির বাসিন্দা লাকি আক্তার পোশাক কারখানায় কাজ করেন। তিনি বলেন, শুনেছি আমার ঘর পুড়ে গেছে। সব জিনিস নাকি পুড়ে গেছে। এখন আমি কীভাবে কী করব, বুঝতে পারছি না।

একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লাকি ও লাভলীর মতো অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ বসবাস করে এই বস্তিতে। আজকের এই ভয়াবহ আগুনে তাদের অনেককে পথে বসতে হবে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *